এক দিকে গৃহযুদ্ধের মতো পরস্থিতি, অন্য দিকে, ভাঁড়ে মা ভবানী! জোড়া সমস্যায় জেরবার পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে বড় সিদ্ধান্ত নিল ইসলামাবাদ। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মুদ্রা এ বার বাজারে আনতে চলেছে শাহবাজ় শরিফ সরকার।
পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান’ জানিয়েছে, খুব দ্রুত পরীক্ষামূলক ভাবে বাজারে আনা হবে পলিমার প্লাস্টিকের তৈরি নতুন ব্যাঙ্ক নোট। পাশাপাশি, নতুন নকশায় বিদ্যমান কাগজের নোটগুলিকে ফের আমজনতার হাতে তুলে দেবেন তাঁরা। মুদ্রা জালিয়াতি ঠেকাতে বাড়ানো হবে সেগুলির নিরাপত্তা।
সূত্রের খবর, বর্তমানে চালু থাকা ব্যাঙ্ক নোটের নতুন নকশায় হলোগ্রাম রাখবে পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এর মাধ্যমে সহজেই জাল মুদ্রা চিহ্নিত করতে পারবে শরিফ প্রশাসন। চলতি মাসেই নতুন পলিমার প্লাস্টিকের নোট এবং নতুন আঙ্গিকে পুরনো মুদ্রা বাজারে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর জামিল আহমেদ। নতুন নোট বাজারে আনার গোটা পরিকল্পনা পাক সংসদের উচ্চকক্ষের ব্যাঙ্কিং ও অর্থনীতি সংক্রান্ত কমিটির সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।
সেনেট কমিটিকে জামিল বলেছেন, ‘‘বর্তমান সমস্ত নোটে নতুন সিকিউরিটি ফিচার আনা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন হবে।’’ এতে দেশে জাল নোটের প্রচলন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর জানিয়েছেন, নতুন করে নকশার কাজ শেষ হলে বাজারে আসবে ১০, ৫০, ১০০, ৫০০, হাজার এবং পাঁচ হাজার টাকার নোট। সেনেট কমিটি সূত্রে খবর, পাঁচ বছর পর পুরনো নোটগুলির ব্যবহার বন্ধ করবে পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। তত দিন পর্যন্ত সেগুলি চালু থাকবে।
এর পাশাপাশি নতুন পলিমার প্লাস্টিকের তৈরি মুদ্রা বাজারে আনার কথা কমিটিকে জানিয়েছেন গভর্নর আহমেদ। প্লাস্টিকের নোট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর ইচ্ছাপ্রকাশও করেছেন তিনি। যদিও প্লাস্টিকের মুদ্রার মূল্য কত হবে, তা এখনও স্পষ্ট করেনি পাক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।
সূত্রের খবর, কমিটিকে আহমেদ বলেছেন, ‘‘প্লাস্টিকের মুদ্রা পাক জনতা কী ভাবে গ্রহণ করছে, তা পর্যালোচনা করা হবে। এতে ইতিবাচক ইঙ্গিত মিললে ধীরে ধীরে কাগজের নোট বন্ধ করে প্লাস্টিকের মুদ্রা চালু করা হবে।’’ প্রাথমিক ভাবে কম মূল্যের প্লাস্টিক-নোট বাজারে আনতে পারে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান।
সম্প্রতি পাকিস্তানে পাঁচ হাজার টাকার নোট বন্ধ করার দাবি ওঠে। মূলত নকল নোট বাজারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে এই আর্জি জানান সেনেট সদস্য মহসিন আজ়িজ। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান অবশ্য জানিয়েছে, এখনই পাঁচ হাজার টাকার নোট বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁদের।
বিশ্বে প্রথম পলিমার প্লাস্টিকের নোট চালু হয় অস্ট্রেলিয়ায়। সালটা ছিল ১৯৯৮। বর্তমানে ৪০টির বেশি দেশে এই ধরনের মুদ্রা চালু রয়েছে।
পলিমার প্লাস্টিক নোটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এগুলি জাল করা বেশ কঠিন। কারণ, এতে উন্নত মানের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে। অন্য দিকে, পলিমার প্লাস্টিকের নোট ছাপানো খরচসাপেক্ষ।
দ্বিতীয়ত, কাগজের নোটের মতো পলিমার প্লাস্টিক মুদ্রার কখনই ছিঁড়ে যায় না। ফলে এই ধরনের নোট বছরের পর বছর চালাতে পারে সরকার। নকশার কারণে পলিমার প্লাস্টিকের নোটে খুব একটা ময়লা জমতেও দেখা যায় না।