ঋণের বোঝা চেপেছে দেশের জাতীয় সড়ক নির্মাণ সংস্থার ঘাড়ে। বিপুল পরিমাণ ঋণে ডুবেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এনএইচএআই। যা নিয়ে চিন্তায় কেন্দ্রীয় সরকার।
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর রাস্তা তৈরি এবং মেরামতির কাজ হয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে এনএইচএআই-এর দেনার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে পাল্লা দিয়ে।
সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে বিভিন্ন সংস্থার কাছে এনএইচএআই-এর ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ঋণ কমিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর জাতীয় সড়ক নির্মাণ সংস্থা।
বেশ কয়েকটি রেটিং সংস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে দেশে রাস্তা তৈরির পরিমাণ কমতে চলেছে। সড়ক নির্মাণের কাজের গতি হতে চলেছে আগের চেয়ে শ্লথ।
‘কেয়ারএজ’ নামের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এনএইচএআই সর্বোচ্চ ১১,১০০ থেকে ১১,৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত জাতীয় সড়ক তৈরি করবে। গত অর্থবর্ষে যে পরিমাণ ছিল ১২,৩৪৯ কিলোমিটার।
‘ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ’ নামের অন্য একটি সংস্থার পর্যবেক্ষণ, ২০২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে ১১,২৫০ কিলোমিটারের বেশি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করতে পারবে না এনএইচএআই।
কেন সড়ক তৈরিতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সরকার? নেপথ্যে বিবিধ কারণ উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণে সমস্যা। এ ছাড়াও, গ্রিনফিল্ড প্রকল্পের কারণেও এই কাজে বাধা আসছে।
রেটিং সংস্থাগুলির দাবি, ঋণের বোঝা কমাতেই আপাতত রাস্তা তৈরির কাজ কমাতে চলেছে এনএইচএআই। আপাতত তারা ঋণ মেটানোকেই অগ্রাধিকার দিতে চলেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সমস্ত ঋণ মিটিয়ে ফেলতে চায় জাতীয় সড়ক নির্মাণ সংস্থা।
আইসিআরএ-র মতো কয়েকটি সংস্থা অবশ্য এই পরিস্থিতিতেও চলতি অর্থবর্ষে জাতীয় সড়ক নির্মাণে বৃদ্ধি দেখছে। তাদের পর্যবেক্ষণ, ২০২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে ১২,৫০০ থেকে ১৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত এনএইচএআই-এর তরফে এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের ঋণ কমাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকারও।
আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এনএইচএআই-এর ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণের বেশ কিছুটা অংশ মকুব করানোর বন্দোবস্ত করছে কেন্দ্র। সংস্থার বোঝা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর।
২০১৪ সালের পর থেকে দেশে জাতীয় সড়ক নির্মাণ এবং সম্প্রসারণের কাজে গতি এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর থেকে এই খাতে সরকারের অর্থ বরাদ্দও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে ২৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সে বছর ৪,২৬০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বরাদ্দ বেড়ে হয় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। রাস্তা নির্মিত হয় ৬,০৬১ কিলোমিটার। এর পর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই বরাদ্দ বেড়ে হয় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল দেশ জুড়ে।
জাতীয় সড়ক নির্মাণের বরাদ্দে কোভিডপর্বের প্রভাব তেমন পড়েনি। ২০২০-২১ সালে এই খাতে ৯৪ হাজার কোটি এবং ২০২১-২২ সালে ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে কোভিডের প্রভাব পড়ে সড়ক নির্মাণের কাজে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের পর থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলেও সড়ক নির্মাণের গতি আগের চেয়ে শ্লথ হয়েছে।
২০২০-২১ সালে ১৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছিল দেশে। পরের বছর তা কমে হয় ১০ হাজার কিলোমিটার। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২ লক্ষ কোটি বাজেট বরাদ্দ সত্ত্বেও ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি জাতীয় সড়ক তৈরি হয়নি।
২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন হয়েছে। অনেকের মতে, এ বছর সড়ক নির্মাণের পরিমাণ যদি কম হয়, তার অন্যতম কারণ হতে পারে এই নির্বাচন। কারণ ভোটের বছরগুলিতে এমনিতেই এই ধরনের কাজ কম হয়। বছরের কিছুটা সময় জুড়ে আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ থাকে। যে কারণে উন্নয়নমূলক কাজ স্থগিত রাখতে হয়।
২০২৪-২৫ সালে জাতীয় সড়ক নির্মাণের জন্য ২ লক্ষ ৭৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। বছরের শেষে রাস্তা নির্মাণের পরিমাণ আগের চেয়ে আরও কমে যায় কি না, সেটাই দেখার।