ওড়িয়া টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রশ্মিরেখা ওঝার অকালমৃত্যুর পর সপ্তাহও গড়ায়নি। এর মধ্যেই ধোঁয়াশায় ছেয়ে গিয়েছে এই ঘটনা। অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত নানা অনুষঙ্গের জেরেই নাকি জমাট বেঁধেছে রশ্মিরেখার ‘মৃত্যুরহস্য’। এমন দাবি করছে ওড়িশার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
এই ‘রহস্যে’র পাত্র-পাত্রী হিসাবে রশ্মিরেখার পাশাপাশি তুলে আনা হয়েছে তাঁর পুরুষসঙ্গী সন্তোষ পাত্রকে। জায়গা নিয়ে নিয়েছেন রাজা নামে অভিনেত্রীর এক প্রাক্তন প্রেমিক। ওড়িয়া সংবাদমাধ্যমগুলিতে একে রহস্যজনক ঘটনা হিসাবে দাবি করা হয়েছে।
শনিবার, ১৮ জুনের রাতে ঠিক কী ঘটেছিল ভুবনেশ্বরের নয়াপল্লি এলাকার ভাড়াবাড়িতে? ওই রাতে রশ্মিরেখার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায় যে ভাড়াবাড়ি থেকে। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসজড়ানো দেহের পাশে রাখা একটি টেবিলে পড়েছিল সুইসাইড নোটও।
পুলিশ জানিয়েছে, সুইসাইড নোটে বাবার উদ্দেশে কয়েক লাইন ছাড়া লিভ ইন সঙ্গী সন্তোষের সম্পর্কেও উল্লেখ করেছিলেন ২৩ বছরের অভিনেত্রী।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলে লেখা ছিল সুইসাইড নোটে। সেই সঙ্গে লেখা ছিল, ‘তোমাকে মিস্ করছি বাবা। ওপর থেকেও তোমাকে মিস্ করব।’ সন্তোষের বিরুদ্ধে যাতে ঘটনার আঁচ না আসে, সে আর্জিও করা ছিল তাতে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সৌজন্য রশ্মিরেখার সুইসাইড নোটটি প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। তাতে লেখা, ‘আই লভ ইউ স্যান।’ মনে করা হচ্ছে, সন্তোষের নামটিই এ ভাবে সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখেছেন অভিনেত্রী। আরও লেখা, ‘তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই না। মাফ করে দিও। সুখে থেকো।’ সঙ্গে আরও লেখা, ‘আমি খুব খারাপ মেয়ে!’
নয়াপল্লির ওই ভাড়াবাড়িতে তাঁর পুরুষসঙ্গী সন্তোষের সঙ্গে থাকতেন রশ্মিরেখা। তবে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে। সে কথা নাকি তাঁর ভাড়াবাড়ির মালিকও জানতেন না। এমনকি, বিষয়টি ঘূণাক্ষরেও টের পাননি বলে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন রশ্মিরেখার বাবা।
পুলিশের কাছে অভিনেত্রীর বাবার দাবি, নয়াপল্লির ভাড়াবাড়িতে শনিবার অজস্র বার ফোন করেছিলেন তিনি। তবে ঘটনার দিন রশ্মিরেখা সে ফোনের উত্তর দেননি।
অভিনেত্রীর বাবার দাবি, ‘‘শনিবার মেয়েকে বার বার ফোন করেছিলাম। তবে তা বেজে যায়। পরে সন্তোষ নামে এক জন মেয়ের মৃত্যুর খবর জানান। সে সময় ওই বাড়ির মালিকের কাছ থেকে এ-ও জানতে পারি যে সন্তোষ এবং রশ্মি স্বামী-স্ত্রী হিসাবে ওখানে বসবাস করছিলেন। এ বিষয়ে আমাদের কোনও ধারণাই ছিল না।’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন অভিনেত্রী। ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর মামলাও রুজু করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে গোটা বিষয়টি খোলসা হওয়ার আগেই অবশ্য এ নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে ওড়িশার সংবাদমাধ্যমগুলি। পিছিয়ে নেই নেটমাধ্যমও। ইতিমধ্যেই অভিনেত্রীর সম্পর্কে ছবি-ভিডিয়ো চালাচালি হওয়া শুরু হয়েছে।
রাজা নামের এক ব্যক্তির নাম ট্যাটু করা ছিল অভিনেত্রীর হাতে। কনক নিউজ নামে স্থানীয় এক টেলিভিশনে চ্যানেলে রশ্মিরেখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন রাজা। ওই চ্যানেলে তাঁর দাবি, ‘‘বছরখানেক আগে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। আমার ভাল বন্ধু ছিল রশ্মিরেখা। ফোনে কথাবার্তাও হত। আমার জন্মদিনে নিজের হাতে নামটা ট্যাটু করিয়েছিল।’’
রশ্মিরেখার সঙ্গে রাজার কি শুধুমাত্র বন্ধুত্বই ছিল? প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। তাতে রাজার দাবি, ‘‘আমাদের বিয়ে হওয়ার কথাও ছিল। দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ে নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ওর পরিবার বিয়ের কথা আর এগিয়ে নিয়ে যায়নি।’’
রাজার আরও দাবি, রশ্মিরেখার সঙ্গে গত ছ’মাস তাঁর কোনও যোগাযোগ নেই। এমনকি, ওই সময়ের মধ্যে ফোনেও কথাবার্তা হয়নি তাঁদের। এমন মন্তব্যেও নাকি ধোঁয়াশা বেড়েছে।
ওড়িশার সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, একটি ভাইরাল হওয়া অডিয়ো টেপে রশ্মিরেখা এবং সন্তোষের কথোপকথন শোনা গিয়েছে। যদিও ওই অডিয়ো টেপের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
কী শোনা গিয়েছে সেই অডিয়ো টেপে? টেলিফোনে নাকি রশ্মিরেখা এবং সন্তোষের ওই কথোপকথনে রাজার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তাতে সন্তোষ জানতে চাইছেন, রশ্মিরেখা কেন রাজাকে ‘ব্লক’ করে রেখেছেন? সেই সঙ্গে রাজাকে কল না করার জন্য রশ্মিরেখাকে পরামর্শ দিচ্ছেন সন্তোষ, এমনও নাকি শোনা গিয়েছে।
মেয়ের অকালমৃত্যুতে সন্তোষকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন রশ্মিরেখার বাবা। সংবাদমাধ্যমে তাঁর দাবি, ‘‘সন্তোষ আমার মেয়েকে খুন করেছে। ওকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো উচিত।’’ যদিও সুইসাইড নোটে এটাও লেখা ছিল, ‘সন্তোষের কিছু হলে আমি কাউকে মাফ করব না।’
প্রাথমিক ভাবে একে আত্মহত্যার ঘটনা মনে করলেও গোটা কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে সন্তোষ এবং রাজার নামও। ভুবনেশ্বর এবং কটক শহরের পুলিশ কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়েছে, সন্তোষ এবং রাজাকে এই মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পর ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলেন আদতে জগৎসিংহপুরের বাসিন্দা রশ্মিরেখা। স্বপ্ন ছিল, অভিনেত্রী হিসাবে নাম করবেন। তবে অকালেই তাঁর মৃত্যু সব কিছুতে দাঁড়ি টেনে দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছে গত মাসে গরফায় পল্লবী দে-র অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। সেখানেও তাঁর লিভ ইন সঙ্গী সাগ্নিক চক্রবর্তীর দিকে আঙুল তুলেছিলেন অনেকে।
অনেকে আবার মডেল বিদিশা দে মজুমদারের তুলনাও টেনে আনছেন। পল্লবীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর পর কিছু দিন পর মে মাসে নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত দেহ মেলে বিদিশার। ওই দুই অভিনেত্রীর মতোই রশ্মিরেখার মৃত্যুর ঘটনাও এ বার আতশকাচের তলায়।