দেশের মানুষ খেতে পাচ্ছেন না। চোখ ফেরালেই চারপাশে নজরে পড়ছে দারিদ্র। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের তাতে বয়েই গিয়েছে।
বিবেককে শিকেয় তুলে তিনি ঘুরছেন দামি দামি সব বিলাসবহুল গাড়ি চেপে। শুধু কি তাই! একটি গাড়ি পছন্দ না হলেই সেটি ফেলে কিনে নিচ্ছেন আরও আধুনিক, আরও দামি সব বিদেশি গাড়ি।
সম্প্রতি কিমের এই অদ্ভুত গাড়ি-প্রীতিতে নজর পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের।
কিম আজ লিমুজিন চড়েন তো কাল রোলস রয়েস, পরশু কয়েক কোটির মার্সিডিজ় মেব্যাচ। তার উপর কিম শুধু নিজে গাড়ি চড়েন না, গাড়ি চড়ানও।
আন্তর্জাতিক মহলের খবর, নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে এই সব দামি দামি গাড়ি দেদার বিলোচ্ছেন কিম।
কাছের এবং পছন্দের লোককে দামি দামি গাড়ি স্রেফ উপহার হিসাবে দিয়ে দিচ্ছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কোথা থেকে এত দামি সব গাড়ি আসছে কিমের কাছে।
পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে মজে থাকা উত্তর কোরিয়াকে অনেক আগেই একঘরে করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিমের নেতৃত্বাধীন উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বিরত রাখতে তার উপর জারি করা হয়েছে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য অধিকাংশ বড় দেশ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছে। আর্থিক ভাবে শোচনীয় অবস্থা দেশের। তার পরও গত কয়েক বছরে কিমের সংগ্রহে এসেছে বিশ্বের অন্যতম দামি সমস্ত গাড়ি।
যেমন এই মুহূর্তে উত্তর কেরিয়ার একছত্র নায়ক কিম যে গাড়ি চড়ছেন, সেটি মার্সিডিজ় সংস্থার তৈরি একটি মেব্যাচ গাড়ি। গোটা গাড়িটাই বুলেটপ্রুফ। রয়েছে নিরাপত্তার আরও নানা আধুনিক ব্যবস্থা।
কম করে এক লক্ষ ৭৯ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড দাম এই গাড়ির। যা ভারতীয় মুদ্রায় ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা।
এ ছাড়া কিমের গাড়িশালে রয়েছে মার্সিডিজ় বেঞ্জের প্রথম সারির সব বিলাসবহুল গাড়ি। এর মধ্যে কালো রঙের একটি লিমুজ়িনও আছে।
সিয়োলের স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী এ ছাড়াও কিমের সংগ্রহে রয়েছে জাপানের বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা লেক্সাসের সবচেয়ে দামি এসইউভি গাড়ি। যার দাম ভারতীয় মুদ্রায় ২ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। বিশ্বের সবচেয়ে দামি এসইউভি গাড়ির একটি এই গাড়ি। মডেলের নাম লেক্সাস এলএক্স ৬০০ আলট্রা।
এ ছাড়া রয়েছে আমেরিকার গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ফোর্ডের তৈরি ভ্যান। যে গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলা যায় একটা গোটা সংসার। শোওয়ার ঘর থেকে শুরু করে বসার ঘর, শৌচাগার, রান্নার ব্যবস্থা সবই রয়েছে এই ধরনের ভ্যানে।
এর আগে কিমকে রোলস রয়েসের ফ্যান্টমেও চড়তে দেখা গিয়েছে। এই গাড়ির দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১০ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা।
সমালোচকেরা বলছেন, কিমের গাড়িশালায় এই সমস্ত গাড়ির পাশে উত্তর কোরিয়ার বর্তমান অবস্থাকে রাখলে একনায়কের চরিত্র আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তবে এর পাশাপাশি যে প্রশ্নটি জোরালো হয়ে উঠেছে তা হল, নিষেধাজ্ঞার জাল কেটে উত্তর কোরিয়ার একনায়কের হাতে একের পর এক বিদেশি গাড়ি পৌঁছচ্ছে কী ভাবে?
আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ মনে করছে, গাড়ির শখ মেটাতে এই সব গাড়ি চোরাপথে আনাচ্ছেন কিম।
এই ধরনের বিদেশি গাড়ি সাধারণত জাহাজে পাঠানো হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য অধিকাংশ দেশই উত্তর কোরিয়ার বন্দরে জাহাজ পাঠানো বন্ধ করেছে। সেই নিষেধাজ্ঞাকে এড়িয়েই বিলাসবহুল গাড়ির শখ বজায় রাখছেন কিম।
সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে পাঠানো একটি লেক্সাস গাড়িকে উত্তর কোরিয়ার ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই পথ বেছে নিয়েছেন কিমের অনুগতেরা।
রাশিয়ার বাণিজ্যতরী মারফতও বিলাসবহুল গাড়ি উত্তর কোরিয়ার সমুদ্রবন্দরে পৌঁছচ্ছে বলে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
তবে এই সমস্ত গাড়ি কিমের কাছে যে ভাবেই এসে থাকুক তাঁর এই প্রদর্শনকে ভাল চোখে দেখছে না আন্তর্জাতিক মহল। দেশের মানুষ যেখানে সমস্যায় রয়েছে, সেখানে কিমের এই ধরনের আর্থিক প্রদর্শন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রশাসক হিসাবে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কিম। দেশের লোকের ভাল থাকার পরোয়া নেই তাঁর। তিনি শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
এই সে দিনও কিম উত্তর কোরিয়ার মাতৃদিবসে দেশের মায়েদের কাছে সন্তান ধারণের আর্জি জানিয়ে অশ্রুপাত করছিলেন। সমালোচকেরা বলছেন, কিমের আসল রূপ কী? তা তাঁর এই দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রদর্শনেই স্পষ্ট।