২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভাড়াবাড়ি থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হল। যে তরুণীর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, সমাজে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। পেশায় চলচ্চিত্র পরিচালক। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তরুণী পরিচালকের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছিল মালয়ালম ছবির দুনিয়া।
নয়না সূর্য। মালয়ালম ছবির দুনিয়ায় যা এখনও এক রহস্য। ৪ বছর পরও এই মৃত্যুর কিনারা হয়নি। তরুণী পরিচালক আত্মহত্যা করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু, সম্প্রতি পরিচালকের বন্ধুরা দাবি করেছেন যে, তাঁকে খুন করা হয়েছে।
তরুণীর বন্ধুদের এই চাঞ্চল্যকর দাবি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন তদন্তকারীরা। নতুন করে নয়নার মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিরুঅনন্তপুরমের আলথারা নগরে একটি বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকতেন নয়না। ২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই বাড়িরই শৌচাগার থেকে নয়নার দেহ উদ্ধার করেছিলেন তাঁর বন্ধুরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মায়ের সঙ্গে আধ ঘণ্টা ফোনে কথা বলেছিলেন নয়না। পরের দিন তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়। ২৩ তারিখ নয়নার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বন্ধুরা। কিন্তু দীর্ঘ ক্ষণ ধরে ফোন না তোলায়, তাঁর বাড়িতে যান বন্ধুরা। তার পর ডাকাডাকি করেও সাড়া মেলেনি। এর পরই দরজা ভেঙে নয়নার দেহ উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছিল যে, হতাশায় ভুগছিলেন নয়না। সে কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছিল, নয়না মধুমেহ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ঘরের মধ্যেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর কিনারা করতে সে ভাবে জুতসই তথ্যপ্রমাণ পেশ করতে পারেনি পুলিশ।
নয়নার মৃত্যুর সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যু হয় মালয়ালম ছবির পরিচালক লেনিন রাজেন্দ্রনের। ঘটনাচক্রে, লেনিনের সহকারী পরিচালক হিসাবে প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করেছিলেন নয়না। লেনিনের মৃত্যুর এক মাসের ব্যবধানে নয়নার দেহ উদ্ধারের ঘটনা ভিন্ন মাত্রা পায়।
লেনিনের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি নিজেও ছবির পরিচালনা করেছেন নয়না। এ ছাড়াও বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন তিনি।
নয়নার মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা বলে পুলিশ দাবি করলেও তা মানতে নারাজ ছিলেন তাঁর বন্ধুরা। নয়নার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর মৃত্যু ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
নয়নার দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। ঘাড়েও ক্ষত ছিল বলে দাবি করা হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে নয়নার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। এর পরই নয়নার মৃত্যুর তদন্তে সরব হন তাঁর বন্ধুরা।
নয়নার মৃত্যুর তদন্তে পুলিশের গাফিলতি ছিল বলেও দাবি করেছেন তাঁর বন্ধুরা। নয়নার ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল, এ কথা পুলিশি তদন্তে উল্লেখ করা হয়নি। নয়নার তলপেটে লাথি মারার চিহ্ন থাকলেও তা এড়িয়ে গিয়েছিল পুলিশ।
পুলিশে সেই সময় অভিযোগ দায়ের করেছিল নয়নার পরিবার। অভিযোগ, সেই সময় ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সামনে এনে দ্রুত তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ করেছিল পুলিশ।
যদিও পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছিল যে, তদন্তের সময় তাঁরা ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাননি। পাশাপাশি নয়নার পরিবারের তরফেও তেমন কোনও সন্দেহজনক তথ্য তুলে ধরা হয়নি।
৪ বছর পর আবার চর্চায় উঠে এসেছে নয়নার রহস্যমৃত্যু। পরিচালককে খুন করা হয়েছে— এই অভিযোগে সরব হয়েছেন তাঁর বন্ধুরা। তার পরই এই ঘটনার তদন্ত নতুন করে দিশা পেয়েছে।
নয়নার মৃত্যুর তদন্ত করতে ক্রাইম ব্রাঞ্চকে নির্দেশ দিয়েছেন এডিজিপি অজিত কুমার। এই ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট পুলিশ কমিশনারকে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসিপি জি কে দানিলকে। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলার তদন্ত চালানো হবে বলে পুলিশ সূত্রে।
নয়নার মৃত্যুর রহস্যের কিনারা করতে বিশেষ দল তৈরি করেছে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। তিরুঅনন্তপুরমের পুলিশ কমিশনার সিএইচ নাগরাজু জানিয়েছেন, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। সত্যিই কি খুন করা হয়েছিল নয়নাকে? না কি মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ? যদি খুনই হন নয়না, তা হলে কে সেই আততায়ী? কেনই বা নয়নাকে খুন করা হল? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর পেতে মুখিয়ে তদন্তকারীরা।