কিছু কিছু রহস্য বোধহয় আজীবন রহস্যের মোড়কেই বন্দি থেকে যায়। হাজার চেষ্টা করেও সেই রহস্য উন্মোচন করা যায় না। আবার কোনও নায়িকাকে কেন্দ্র করে যদি কোনও রহস্য দানা বাঁধে, তা হলে তো তা অন্য মাত্রা নেয়। মার্কিন অভিনেত্রী-মডেল ট্যামি লিন লেপার্টের আচমকা উধাও হওয়ার ঘটনা বোধহয় এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
কিশোরীবেলা পার করে তারুণ্যের উচ্ছল দুনিয়ায় পা রাখতে না রাখতেই হাজার হাজার পুরুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ট্যামি।
সাফল্যের স্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করার আগেই অষ্টাদশী এই উঠতি নায়িকা আচমকাই উধাও হয়ে যান। আজও তাঁর খোঁজ মেলেনি। বরং যত দিন গড়িয়েছে, তাঁকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
শেষ বার লেপার্টকে দেখা গিয়েছিল ১৯৮৩ সালের ছয় জুলাই। সে সময় ফ্লোরিডার কোকোয়া সৈকতে দেখা যায় ওই উঠতি অভিনেত্রীকে।
তাঁর পরনে ছিল নীল রঙা ডেনিম শার্ট। সঙ্গে ছিল মানানসই স্কার্ট। হাতে ছিল ধূসর রঙের ভ্যানিটি ব্যাগ। পুলিশকে জানানো হয়েছিল এ কথা। কিন্তু তার পরেও কোনও পাত্তা পাওয়া যায়নি তাঁর।
জানা যায়, উধাও হওয়ার আগে এক বন্ধুকে তিন বার ‘জরুরি ফোন’ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, তাঁর সেই ফোনের উত্তর দেননি তাঁর বন্ধু।
শোনা যায়, ১৯৮২ সালের হিট ছবি ‘স্প্রিং ব্রেক’-এর পর একলা একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন লেপার্ট। যখন বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন যেন একেবারে অন্য এক লেপার্টকে দেখেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বেপাত্তা হওয়ার পর অভিনেত্রীর মা জানিয়েছিলেন যে, ওই পার্টিতে লেপার্ট না কি এমন কিছু দেখেছিলেন, যা তাঁর দেখা উচিত হয়নি। লেপার্ট শুধু তাঁর মাকে বলেছিলেন, ‘ওরা’ ওঁর কাছে আসবেন। পরিবারের দাবি, ওই পার্টি থেকে ফেরার পর থেকেই লেপার্টের আচরণে বেশ কিছু বদল লক্ষ করেছিলেন তাঁরা। এর কিছু দিন পরই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, সে সময় এ বিষয়ে কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। লেপার্টকে খুন করা হয়েছে কি? এই প্রশ্নও উঠেছিল।
লেপার্টের উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুই সন্দেহভাজন সিরিয়াল কিলারকে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি। তা ছাড়া এখনও ওই অভিনেত্রীর দেহ উদ্ধার করা যায়নি।
গুজব রটেছিল, মাদক কেলেঙ্কারিতে যোগ ছিল লেপার্টের। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছিল।
লেপার্টের দেহ কি না তা যাচাই করতে কমপক্ষে ১৪টি মৃতদেহ খতিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু হদিস মেলেনি। কোথায় গেলেন লেপার্ট? আজও উত্তর চায় তাঁর পরিবার।
মাত্র চার বছর বয়সেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ওই অভিনেত্রী। তার পর প্রায় ৩০০টি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন ২৮০টি জয়ের মুকুট।
১৯৮৩ সালে ‘স্কারফেস’ ছবিতে অভিনয় করছিলেন লেপার্ট। কিন্তু চতুর্থ দিনের শ্যুটিংয়ে নকল রক্ত দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, ছবিটা ছেড়ে দেন।
প্রায় চার দশক পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও তাঁর খোঁজ পেতে মরিয়া লেপার্টের পরিবার। লেপার্ট সংক্রান্ত কোনও তথ্য পেতে তাঁর বোন সুজান দিদির নামে ফেসবুক পেজ চালু করেছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসে লেপার্টের জন্মদিনে আবেগঘন পোস্টে তাঁর বোন লিখেছিলেন, ‘‘শুভ জন্মদিন ট্যামি... তোমায় খোঁজার চেষ্টা কখনওই থামাব না।’’