টানা ১২ সপ্তাহ ধরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে। এক টানা এই যুদ্ধের ফলে কি রুশ সেনাদের মনোবল ভাঙছে? তাঁরা কি ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠছেন? বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক অডিয়ো ক্লিপ থেকে সে রকমই তথ্য উঠে আসছে।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা অডিয়ো ক্লিপে পুতিনকে লক্ষ্য করে এক রুশ সেনাকে অশ্লীল ভাষায় ব্যঙ্গোক্তি করতে শোনা যাচ্ছে। যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অডিয়ো রেকডিংগুলি নেটমাধ্যমে শেয়ার করেছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গোয়েন্দা বিভাগ।
কিভের গোয়েন্দা বিভাগের প্রকাশিত অডিয়ো ক্লিপ অনুযায়ী, পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়েছে যে, সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহের মনোভাবকে বাগে আনার জন্য এক নতুন কর্তাকে পাঠানো হয়।
তিনি ‘বিদ্রোহী’ সেনাদের চিহ্নিত করে, তাঁদের বেঁধে ট্রাকে করে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেনাদের কথপোকথনে তেমনটাই উঠে এসেছে।
রুশ সেনাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সেই জেনারেলের নাম পুরো প্রকাশ করা না হলেও, মনে করা হচ্ছে তাঁরা লেফটেন্যান্ট জেনারেল রুস্তম মুরাদভের কথা বলছিলেন।
সেনামহলে তিনি এক জন কঠোর সেনাকর্তা হিসাবে পরিচিত। সিরিয়া গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ‘নৃশংস’ লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি আসছেন জেনেই সেনারা নিজেদের মধ্যে চর্চা শুরু করেন। ওই অডিয়ো ক্লিপে এক সৈনিক বলছিলেন, ‘‘কেউ আর এগোতে চাইছে না। তাই সেনাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনার জন্য ওঁকে পাঠানো হয়েছে।’’
ওই সেনা বলছেন, রুশ কমান্ডারও তাঁদের ছেলেদের ‘মৃত্যুর মুখ ঠেলে দিত আর রাজি নন। কমান্ডারের এই মনোভাব মুরাদভের কাছে পৌঁছায়।
তাঁদের ডেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন তিনি। প্রথমে তাঁদের পোশাক খুলে নেন। তার পর তাঁদের পকেট থেকে সব কিছু বের করে নেন। হাত বেঁধে দেন। পরে তাঁদের একটি ট্রাকে করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সেনা কর্তা মুরাদভকে ২০১৭ সালে হিরো অফ রাশিয়ান ফেডারেশন উপাধি দেওয়া হয়। খোদ পুতিন তাঁকে এই উপাধি দেন।
অন্য একটি অডিয়ো রেকর্ডিংয়ে এক রুশ সেনাকে তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়। যেখানে তিনি তাঁর বান্ধবীকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে হতাশার কথা বলতে বলছিলেন।
বান্ধবী জানান, তাঁর বিশ্বাস ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে খুব শীঘ্রই বেলারুশও যোগদান করবে। তার প্রত্যুত্তরে ওই সেনা একটু উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘যোগ দিতে দাও। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ’’
তখন তাঁর বান্ধবী বলেন, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ পুতিন নিজের ‘জয়’কে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে চান না। তখন রুশ সেনাটিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যা পাারে করুক, এখানে যথেষ্ট হয়েছে।’’
এই কথপোকথেনই স্পষ্ট, রুশ সেনাদের মধ্যে চলতি যুদ্ধ নিয়ে কতটা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
কিভ প্রায়শই বিভিন্ন অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ করে যাতে শোনা যায়, রুশ সেনার পরিবার বা তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ঘরে ফিরে আসতে বলেছেন।
কিভের দাবি অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ২৫ হাজার রুশ সেনা মারা গিয়েছেন। যদিও ক্রেমলিনের দাবি এক হাজার ৩০০ সেনা এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন।