টেড বান্ডি: বিশ শতকের অন্যতম কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড। যুবতীদের ধর্ষণ করে তাদের দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে নিয়ে নিজের বাড়িতে পুরস্কারের মতো সাজিয়ে রাখতেন ইনি। ১৯৮৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
পেড্রো আলনসো লোপেজ: পেড্রো হলেন একজন কলম্বিয়ান সিরিয়াল কিলার। দক্ষিণ আমেরিকায় তিনশোরও বেশি মহিলাকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে খুন করেছেন এই ঘাতক। বহু ছক কষার পরেই পুলিশ পাকড়াও করে এই ভয়ঙ্কর খুনীকে। ধরা পড়ার পরেই সে কবুল করে খুনের কথা। পরে তার জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে ৫৩টি মৃতদেহও খুঁজে পায় পুলিশ। ১৯৮০ সাল থেকে জেলে রয়েছে এই খুনী। ১৮ বছর ইকোয়াডোরিয়ান জেলে থাকার পর তাকে কলম্বিয়া পাঠানো হয়। আর সেখানেই ২০০২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
হ্যারল্ড শিপম্যান: কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে ইতিহাসের পাতায় খোদাই করা রয়েছে এই চিকিত্সকের নাম। আড়াইশোর বেশি মানুষকে খুন করেছেন হ্যারল্ড শিপম্যান। সমাজ ও বন্ধুমহলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালই ছিল। মাঝেমধ্যেই তার চেম্বার এবং হাসপাতালের কাছাকাছি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যেত। ময়নাতদম্তে সব মৃতদেহেই একটা জিনিসের মিল ছিল। তা হল ডায়ামরফিন। শিপম্যান তার রোগীদেরকে রীতিমতো জবরদস্তি করে এই ডোজ দিতেন। অতঃপর তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ২০০৪ সালে জেলে থাকার সময় আত্মহত্যা করেন ফ্রেডরিক শিপম্যান।
ড্যানিয়ল ক্যামারগো বারবোসা: ৭০ থেকে ৮০-এর দশকে কলম্বিয়ার ১৫০র ও বেশি মহিলাকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে খুন করেন ড্যানিয়ল। কুইটোতে ধরা পড়বার পর তিনি নিজেই স্বীকার করেন প্রতিটা খুনের কথা। ১৯৯৪ সালে জেলে থাকা অবস্থায় এক ভিক্টিমের ভাই তাকে খুন করে।
পে়ড্রো রডরিগাস ফিলহো; ব্রাজিলিয়ান সিরিয়াল কিলার পে়ড্রো ১৯৭৩ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ১৪ বছর বয়সে প্রথম খুন করে পেড্রো। ১৮ বছরের মধ্যেই ১০ জনকে খুন করে ফেলে সে। জেলে তার সঙ্গে থাকতো তার বাবাও। জেলেও পেড্রো খুন করা শুরু করে। জেলে ৪৭ জনকে খুন করে সে। ২০০৭ সালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, ২০১১ সালে আবার গ্রেফতার করা হয়।
গ্যারি রিগওয়ে: আমেরিকার সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে ইনি অন্যতম। ২০০১ সালে গ্যারিকে গ্রেফতার করা হয় ৪ জনকে খুন করার অভিযোগে। পরে পুলিশের সামনে তিনি কবুল করেন যে ৮০ থেকে ৯০ সালের মধ্যে অন্তত ৭০ জন মহিলাকে তিনি খুন করেছেন। এদের মধ্যে আবার পাঁচ জনকে গ্রিন নদীতে ভাসিয়েও এসেছিলেন। তিনি ‘দ্য গ্রিন রিভার’ বলে অধিক খ্যাত। গ্যারি রিগওয়েকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
টমি লিন সেলস: টেক্সাসের নাম করা এক ঘাতক টমি লিন। ইনিও কমপক্ষে ৭০ জনকে খুন করেছেন। সালটা ১৯৮৫ থেকে ৯৯ এর মাঝামাঝি সময়ে। ১৩ বছরের এক বাচ্চা মেয়েকে টমি ছুরি দিয়ে ১৬ বার কুপিয়ে মেরেছিলেন। ১০ বছরের একটি মেয়ের সঙ্গেও প্রায় একি কান্ড ঘটিয়েছিলেন। সেলসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
আন্দ্রেই চিকাতেলো: সোভিয়েত এই সিরিয়াল কিলার ‘দ্য বুচার অব রস্টভ’ নামে অধিক খ্যাত। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫২ জন মহিলাকে তিনি খুন করেছিলেন। ১৯৯২ সালে চিকাতেলোকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
জন ওয়েন গেসি: শিকাগোয় পর পর ৩৩টি টিনেজ ছেলেকে খুন করেছিলেন গেসি। প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে শেষে সকলকে খুন করতেন। নিজের বাড়িতে অন্তত ২৬ জনের লাশ পুঁতে রেখেছিলেন। কখনও নদীতে ভাসিয়ে দিতেন মৃতদেহ। ১৯৯৪ সালে গেসিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
চার্লস এনজি ও লিওলার্ড লেক: এক সঙ্গে কাজ করতেন এই দুই ঘাতক। ক্যালাভেরাসে ২৫ জনকে নির্যাতন করে খুন করেছিলেন এঁরা। তাঁদের এই কার্যকলাপ জনসমক্ষে আসে যখন লেক আত্মহত্যা করে। আর তারপর এনজিকে গ্রেফতার করা হয়। এনজি এখন সাঁ কুয়েনতিন জেলে বন্দি।
ডেনিস নিলসেন: ডেনিস ছিলেন একজন সমকামী ঘাতক। লন্ডনে ১৫ জন সমকামী পুরুষকে তিনি হত্যা করেছিলেন। তারপর তাদের দেহ পুড়িয়ে দেহাবশেষ বাথরুমের কমোডে ফেলে দিতেন ডেনিস। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
জেফরি দাহমির: মিলাউকি কান্নিবাল নামে ইনি অধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। আমেরিকার এই সিরিয়াল কিলার ৭৮ থেকে ৯১ সালের মধ্যে ১৭ জন পুরুষকে খুন করেছেন। সঙ্গে ছিল একাধিক ধর্ষণের অভিযোগও। তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন করে কেটে রান্না করে খেতেন দাহমির। মাত্র দু’বছর জেলে থাকার পর জেলেই মৃত্যু হয় তার।
রিচার্ড রামিরেজ: তার ডাক নাম ‘নাইট স্টকার’। খুন করে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এই ঘাতক। মহিলাদের ধর্ষণ করে, ছুরি মেরে, গুলি করে হত্যা করতেন তিনি। ৯ বছরের শিশু থেকে শুরু করে, ৭০ বছরের বয়স্কা অবধি কাউকেই বাদ দেননি রামিরেজ। ২০১৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জেলে তার মৃত্যু হয়।
পিটার সাটক্লিফে: ‘দ্য ইয়র্কশ্যায়ার রিপার’ নামে পিটারকে চিনতেন লোক। ১৩ জন মহিলাকে খুন আর এবং ৭ জনকে খুন করার চেষ্টা করেন পিটার। সাধারণত যৌনকর্মীদের টার্গেট করতেন ইনি।
আর্থার সাওক্রস: ১৯৭২ সালে ১০ বছরের এক বাচ্চা ছেলেকে ধর্ষণ করে খুন করেছিলেন আর্থার। তারপর এক আট বছরের বাচ্চা মেয়ের সঙ্গেও একই কাণ্ড ঘটান। পুলিশের নজরে আসেন খুব শীঘ্রই। ১৪ বছর জেলে কাটান। জেল থেকে বেরনোর পরেই ২২ থেকে ৫৯ বছরের ১২ জন যৌনকর্মীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেন। তারপর আবার জেলে এসে ২০০৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্ট: এই দম্পতিও ছিলেন সিরিয়াল কিলার। ১১ জন যুবতীকে নৃশংস অত্যাচার করে হত্যা করেন এই দম্পতি। পুলিশ তাদের বাড়ির বাগান থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করে। জেল হয় ওই দম্পতির।
জন জর্জ হাই: ১৯৪০ এর নাম করা এই সিরিয়াল কিলারের আরেক নাম ‘অ্যাসিড বাথ মার্ডারার’। তাঁর টার্গেট ছিল উচ্চবিত্তরা। এমনই নয়জনকে তিনি হত্যা করেছেন যারা ছিলেন সেই সময়ের ডাকাবুকো ব্যবসায়ী। তারপর তাদের দেহ সালফিউরিক অ্যাসিডে দ্রবীভূত করতেন। ১৯৪৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
পিটার ম্যানুয়েল: দক্ষিণ স্কটল্যান্ডে কমপক্ষে ৯ জনকে খুন করেছিলেন পিটার। তার বিরুদ্ধে আরও ১৮ জনকে খুন করার অভিযোগ ছিল। বহু দিন পিটার পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়েছেন। পরে এক পানশালা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বিচারে ফাঁসির সাজা হয় পিটারের।
ডোনাল্ড হেনরি গ্যাসকিনস: ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ এর মধ্যে শ’খানেক খুন করেছেন ডোনাল্ড। ১৯৭৫ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলে গিয়েও একজনকে খুন করেছিলেন হেনরি।
ডেনিস র্যাডার: বিটিকে ছদ্মনামে পুলিশকেই চিঠি লিখেতেন ডেনিস। পরে জানা যা, বি’তে ব্লাইন্ড, টি’তে টরচার আর কে’তে কিল। এমন ভাবেই ১০ জনকে নৃশংস ভাবে খুনের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সাল থেকে হঠাত্ বেপাত্তা হয়ে যান ইনি। তারপর সংবাদমাধ্যমকে একটি ফ্লপি ডিস্ক পাঠান। আর সেই সূত্রেই পুলিশ তাঁকে ধরতে সক্ষম হয়।
কেনেথ বিয়াঞ্চি এবং অ্যাঞ্জেলো বুয়োনো: ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আতঙ্ক ছিলেন এই দুই ভাই। দু’জনে অপহরণ করে ১২ থেকে ২৮ বছরের মেয়েদের হত্যা করেতেন। ২০০২ সালে বুয়োনো মারা যায় এবং বিয়াঞ্চি বর্তমানে মানসিক অবসাদগ্রস্ত।
ইয়ান ব্র্যাডি ও মিইরা হিন্ডলে: এরা দু’জনে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে পাঁচ জন কিশোরকে খুন করেছিলেন যাদের বয়স ১০ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয় মৃতদেহ। দুজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০২ সালে হিন্ডলে জেলে মারা যান।
ল্যারি বিট্টাকার এবং রয় নরিস: এদের বলা হত ‘দ্য টুলবক্স কিলার’। দুজনে নিজেদের গাড়িতে শিকারকে ভরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাদের ধর্ষণ করে খুন করত। সঙ্গে চালাত নির্মম অত্যাচার।
এডমন্ড কেম্পার: ১৫ বছর বয়সে নিজের দাদু আর ঠাকুমাকে খুন করেন এডমন্ড। তারপর সান্তাক্রুজ এলাকার ৬ জন মহিলাকে খুন করেন। নিজের মা আর প্রিয় বন্ধুকে হত্যা করবার পরেই এডমন্ড পুলিশের নজরে আসেন।
ডেভিড বারকোউইটজ: সন অব সাম বলে তাকে লোকে বেশি চিনত। ১৯৭৬ সালে .৪৪ ক্যালিবার বুলডগ রিভলভার দিয়ে ডেভিড ৬ জনকে খুন করেন এবং ৭ জনকে আহত হন। পরেও যে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারেন এই মর্মে চিঠিও লেখেন বেশ কিছু পুলিশ এবং প্রেসকে। কয়েক দিনের মধ্যেই ধরা পড়েন।