নব্বইয়ের দশকে উপার্জনের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেতা। কিন্তু কেরিয়ারে হঠাৎ পতন হয় তাঁর। পর পর ১৬টি ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয় তাঁর। মুরোদ নেই বলে তাঁর ছবির পোস্টারও লাগাতে চাননি এক বলি প্রযোজক।
‘ফ্রাইডে টকিজ়’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অক্ষয় কুমারের অভিনয়জীবনের উত্থান-পতন নিয়ে কথা বলেন বলিপাড়ার প্রযোজক সুনীল দর্শন। তিনি জানান, পর পর ১৬টি ছবি ফ্লপ হওয়ার পর অক্ষয়ের সঙ্গে কেউ কাজ করতে চাইছিলেন না। সুনীলই অভিনয়ের সুযোগ দিয়ে কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেন অক্ষয়ের।
১৯৯৯ সালে সুনীলের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘জানোয়ার’। এই ছবিতে অক্ষয়ের পাশাপাশি অভিনয় করেন করিশ্মা কপূর, শিল্পা শেট্টি, আদিত্য কাপাডিয়া, শক্তি কপূর এবং আশুতোষ রানার মতো তারকারা। এই ছবিই নাকি অক্ষয়ের কেরিয়ারের রেখচিত্র হঠাৎ করে বদলে দেয়।
সাক্ষাৎকারে সুনীল জানান, ‘হেরা ফেরি’ ছবিটির ৯০ শতাংশ শুট শেষ করে ফেলেছিলেন অক্ষয়। কিন্তু অক্ষয়ের কেরিয়ারের ব্যর্থতা লক্ষ করে সেই ছবির শুটিং থামিয়ে দিয়েছিলেন ছবিনির্মাতারা।
শুধু ‘হেরা ফেরি’ই নয়, মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অক্ষয় অভিনীত ‘ধড়কন’ ছবির শুটিংও। সুনীল জানান, ‘ধড়কন’ ছবির চারটি রিল শুট হয়েছিল। কিন্তু অক্ষয় ছবিতে অভিনয় করলে সে ছবি আদৌ সফল হবে কি না সেই চিন্তায় ছবির শুটিং বন্ধ করে দেন ‘ধড়কন’ ছবির নির্মাতারা।
সুনীল বলেন, ‘‘অক্ষয়ের কেরিয়ার খুবই খারাপ পথে যাচ্ছিল। কোনও ডিস্ট্রিবিউটর অক্ষয়ের ছবিতে হাত লাগাতে চাইছিলেন না। কেউই অক্ষয়ের পাশে দাঁড়ানোর সাহস পাননি। আমি অক্ষয়ের মধ্যে সেই প্রতিভা দেখতে পাই। তাই ওকে আমার ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’’
অক্ষয়কে ‘জানোয়ার’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সুনীল। কিন্তু প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি দেন শর্তও। সুনীল বলেন, ‘‘অক্ষয়কে আমি বলেছিলাম, আমি যেমন ভাবে চাইব তেমন ভাবেই তোমায় কাজ করতে হবে। অক্ষয় রাজিও হয়েছিল।’’
অক্ষয়ের বিপরীতে নায়িকা হিসাবে করিশ্মাকে পছন্দ করেন সুনীল। তিনি বলেন, ‘‘করিশ্মাকে আমি অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েই দু’টি সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। এক, অন্যেরা ওকে যা পারিশ্রমিক দেন, আমি তা দিতে পারব না। দুই, এই ছবির নায়ক অক্ষয়।’’
সুনীলের প্রস্তাব শুনে করিশ্মা বলেছিলেন, ‘‘আমার কোনও সমস্যা নেই। তোমার ছবি মানে তো তা আমাদেরও ছবি।’’ এমনকি, করিশ্মার মাও ‘জানোয়ার’ ছবি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এমনটাই দাবি সুনীলের।
অক্ষয়ের কেরিয়ারের ব্যর্থতার জন্য নাকি বলিপাড়ার এক নামী প্রযোজক অভিনেতার ছবির পোস্টার, ব্যানার লাগাতে চাননি। এই ঘটনায় মুষড়ে পড়েন অক্ষয়। ভগ্নহৃদয়ে সেই সময় সুনীলের বাড়িতে যান বলিউডের ‘খিলাড়ি’।
সুনীল বলেন, “অক্ষয় হঠাৎ এক দিন আমার বাড়ি এসেছিল। ওর চোখেমুখে ছিল চিন্তার ছাপ। আমার খুব খারাপ লেগেছিল অক্ষয়কে দেখে। অক্ষয় আমায় এসে জানিয়েছিল যে, ওর পোস্টার, ব্যানার লাগাতে চাননি এক প্রযোজক।’’
সুনীলের কথায়, ‘‘অক্ষয়ের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেই সময় অক্ষয় চেয়েছিল যে, ওর ছবি লাগিয়ে বড় বড় পোস্টার, ব্যানার লাগানো হোক। সেই কথা প্রযোজকের কাছে পারায় পাল্টা কটু কথা শুনতে হয় অক্ষয়কে। ওই প্রযোজকের দাবি, পোস্টার এবং ব্যানারে মুখ দেখানোর জন্য যে মুরোদ লাগে তা অক্ষয়ের নেই। এই কথা শুনে মুষড়ে পড়ে অক্ষয়।’’
সুনীল বলেন, ‘‘আমি মনে করেছিলাম, যাঁকে সকলে বোঝা মনে করছেন, তিনি আমার কাছে সম্পদ। তাই আমি শহর জুড়ে, এমনকি মুম্বইয়ের জুহুর মতো জায়গায় অক্ষয়ের পোস্টার লাগিয়েছিলাম। ‘জানোয়ার’ মুক্তির পর সফল হয়েছিল।’’ তার পরেই অক্ষয়ের কেরিয়ার গতি পেয়ে যায় বলে দাবি সুনীলের।