বড় পর্দা ছেড়ে এ বার ওটিটির জগতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন বলিপাড়ার জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা সঞ্জয় লীলা ভন্সালী। চলতি বছরের মে মাসে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাবে সঞ্জয় পরিচালিত ‘হীরামন্ডি’ নামের ওয়েব সিরিজ়। মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিন্হা, রিচা চড্ডা, অদিতি রাও হায়দারি, সঞ্জীদা শেখের পাশাপাশি এই সিরিজ়ে অভিনেত্রীদের তালিকায় রয়েছে নতুন মুখও। এই অভিনেত্রীর পরিচয় কী?
‘হীরামন্ডি’ ওয়েব সিরিজ়ে আলমজেব চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে শার্মিন সেহগলকে। শার্মিন বড় পর্দার পরিচিত মুখ নন। তবে অভিনেত্রী হিসাবে এখনও জনপ্রিয় না হয়ে ওঠা শার্মিন শৈশব থেকেই বলিউডের সঙ্গে যুক্ত।।
১৯৯৫ সালে মহারাষ্টের মুম্বইয়ে জন্ম শার্মিনের। শার্মিনের ঠাকুরদা মোহন সেহগল বলিপাড়ার খ্যাতনামী পরিচালক। বলি অভিনেত্রী রেখার সঙ্গে হিন্দি ফিল্মজগতের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মোহন।
শার্মিনের মা বেলা সেহগল হিন্দি চলচ্চিত্র জগতের সম্পাদক। শার্মিনের মামাও বলিউডের জনপ্রিয় ছবিনির্মাতা। সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ভাগ্নি শার্মিন।
মুম্বইয়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন শার্মিন। ছোটবেলা থেকে চিকিৎসক হতে চাইতেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়।
একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন নাটক করতে শুরু করেন শার্মিন। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য নিউ ইয়র্কে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেন।
কানাঘুষো শোনা যায়, ছোটবেলা থেকেই সঞ্জয়ের সঙ্গে ছবির সেটে উপস্থিত থাকতেন শার্মিন। সঞ্জয় যখন ‘দেবদাস’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত, তখন ছবির সেটে গিয়েছিলেন শার্মিন। সেটে যাওয়া মাত্রই কাঁদতে শুরু করে দেন তিনি। আসলে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের কোলে উঠতে চেয়েছিলেন শার্মিন। সে কারণেই কাঁদছিলেন তিনি।
বলি অভিনেত্রী জাহ্নবী কপূরের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে শার্মিনের। বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, প্রীতি জ়িন্টা এবং দিব্যা ভারতী— অনেকটা এই দুই অভিনেত্রীর মতো দেখতে শার্মিনকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, শার্মিন যখন বিনোদনজগতে পা রেখেছিলেন তখন তাঁর ওজন ছিল ৯৪ কেজি। ছোট থেকেই ওজন বেশি হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত কটাক্ষ করা হত অভিনেত্রীকে।
২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শার্মিন জানিয়েছিলেন, কিশোরী বয়স থেকে ওজন নিয়ে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন তিনি। স্কুলে পড়াকালীন তাঁর ওজন অনেকটাই বেশি ছিল। এমনকি কলেজ পাশ করার সময়ও তাঁর ওজন বিশেষ কমেনি। শার্মিনের দাবি, ওজন নিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এই কারণে নাকি আত্মবিশ্বাসের অভাবও হয়েছিল।
শার্মিন বলেছিলেন, ‘‘আমার যখন ১০ বছর বয়স, তখন থেকেই আমার ওজন বাড়তে শুরু করে। ১৭ বছর বয়সে আমার ওজন ছিল ৯৪ কেজি। মঞ্চে ৯৪ কেজি ওজনের কিশোরীকে দেখে লোকজন কম কটাক্ষ করেননি। আমি ঠিক করেছিলাম ৬-৭ বছরের মধ্যে ওজন কমাব। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তাই ওজন নিয়ে আরও ভয় লাগত। খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিলাম। শরীরচর্চা করতাম প্রচুর। এখন আমার ওজন ৪৯ কেজি। সারা দিন এত ব্যস্ত থাকি, দিনের ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। টানা ১৫ মিনিটও বসে থাকার সুযোগ পাই না।’’
নিউ ইয়র্ক থেকে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মুম্বই ফিরে যান শার্মিন। মুম্বই ফিরে মামা সঞ্জয়ের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন তিনি।
সঞ্জয়ের পরিচালনায় ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গোলিয়োঁ কি রাসলীলা রাম-লীলা’ ছবিতে প্রথম কাজ করেন শার্মিন। এই ছবিতে সহকারী পরিচালকের আসনে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৪ সালে সঞ্জয়ের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মেরি কম’। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া অভিনীত এই ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন শার্মিন।
সঞ্জয়ের পরিচালনায় ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বাজিরাও মস্তানি’ ছবির সহকারী পরিচালকের আসনে দেখা যায় শার্মিনকে। ‘বাজিরাও মস্তানি’ মুক্তির চার বছর পর অভিনয়জগতে পদার্পণ করেন শার্মিন।
সঞ্জয়ের প্রযোজনায় ২০১৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মালাল’ ছবিটি। এই ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় হাতেখড়ি হয় শার্মিনের।
সঞ্জয়ের পরিচালনায় ২০২২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি’। এই ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়োন আলিয়া ভট্ট। এই ছবিতে সহকারী পরিচালক ছিলেন শার্মিন।
২০২২ সালে ওটিটির পর্দায় পা রাখেন শার্মিন। জ্যাকি শ্রফ, প্রতীক গান্ধী অভিনীত ‘অতিথি ভূতো ভব’ নামের হরর-কমেডি ঘরানার ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন শার্মিন।
২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সাত পাকে বাঁধা পড়েন শার্মিন। তাঁর স্বামী অমন মেহতা অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত নন। পেশায় ব্যবসায়ী অমন।
২০২২ সালে অমনের সঙ্গে আংটিবদল হয় শার্মিনের। ইটালিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার নিয়ে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন অভিনেত্রী।
‘হীরামন্ডি’ ওয়েব সিরিজ়ের প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে আসার পর শার্মিনকে নিয়ে কৌতূহল জন্মেছে দর্শকের। ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা এক লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।