এমবিএ করেছিলেন ব্রিটেন থেকে। পড়া সম্পূর্ণ করে দেশে ফিরে করেন অভিনব ব্যাঙ্ক জালিয়াতি। সরকারি অনুমোদন না নিয়েই মধ্যবয়সি যুবক খুলে ফেলেছিলেন আট-আটটি ব্যাঙ্ক!
তবে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সেই কারবার। মাস কয়েকের মধ্যেই আরবিআইয়ের নজরে পড়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন চেন্নাইয়ের চন্দ্র বোস।
চন্দ্র গ্রেফতার হওয়ার পর যখন সেই দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে, স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
কী ঘটেছিল? ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর গ্রেটার চেন্নাই পুলিশের সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের জালে ধরা পড়েন চন্দ্র।
ভুয়ো ব্যাঙ্ক খুলে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ভুয়ো ব্যাঙ্কের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘রুরাল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক’। চেন্নাইয়ের অম্বত্তূরে ছিল এই ভুয়ো ব্যাঙ্কের সদর দফতর।
অম্বত্তূর ছাড়া তামিলনাড়ুর মাদুরাই, ইরোড, ডিন্ডিগুল, বিরুধাচলম, কাল্লাকুরিচি এবং নামক্কল মিলিয়ে এই ভুয়ো ব্যাঙ্কের মোট আটটি শাখা খুলে ফেলেছিলেন চন্দ্র।
চেন্নাইয়ের পুলিশ কমিশনারের কাছে দেশের ব্যাঙ্ক নিয়ামক সংস্থা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারের তরফে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে চেন্নাই পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসে। পুলিশ জানতে পারে, ভুয়ো ব্যাঙ্ক খুলে কৃষক ও তরুণ উদ্যোগপতিদের প্রতারণা করা হচ্ছিল। শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভুয়ো শংসাপত্র বানিয়ে প্রতারণা চক্রের ফাঁদ পেতেছিলেন চন্দ্র।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই ভুয়ো ব্যাঙ্কে কয়েকশো কর্মী চাকরি করতেন। তাঁদের মাসে ২-৭ লক্ষ টাকার বেতন এবং সিনিয়র এগজ়িকিউটিভ পদের লোভ দেখানো হত। সেই লোভেই তাঁরা নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা তুললেন বাজার থেকে।
শুধু তাই নয়, অন্য ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ডে ভুয়ো ব্যাঙ্কের নামে স্টিকার লাগিয়েও গ্রাহকদের দেওয়া হত।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মেয়াদি জমা, ঋণ ও গয়নাতে চড়া সুদের প্রলোভন দেখিয়ে আরও বেশি গ্রাহক জোগাড় করার চেষ্টা করছিল ওই ভুয়ো ব্যাঙ্ক।
তদন্তে উঠে আসে, কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছিল গ্রাহকদের থেকে। শুধু অম্বত্তূর শাখার গ্রাহকদের থেকেই দু’কোটি টাকা তোলা হয়েছিল।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কৃষকদের ৬.৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার প্রলোভনও দেখায় ওই ব্যাঙ্ক। এতেও আকৃষ্ট হতেন কৃষকেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রাহকদের বোকা বানানোর জন্য সমাজমাধ্যমের পেজ এবং ভুয়ো ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছিল।
চন্দ্র গ্রেফতার হওয়ার সময় তাঁর কাছ থেকে ভুয়ো পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, স্ট্যাম্প পেপার আর ৫৭ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছিল। এই দুর্নীতিতে আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদের খোঁজে এখনও তল্লাশি চালাচ্ছে চেন্নাই পুলিশ।