সারা বিশ্বে ইন্টারনেট পরিষেবার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, আমেরিকায় এই পরিষেবার জন্য খরচ বেশি। তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে কম খরচে ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়া গেলেও ক্রেতাদের খরচের বিষয় মাথায় রাখলে ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১১৯ নম্বর স্থানে রয়েছে আমেরিকা।
একেই বেশি খরচ, তার উপর ইন্টারেট পরিষেবাও ধীর গতির। দিনের পর দিন এ ভাবে চলতে থাকলে গ্রাহকদের বিরক্ত হওয়ারই কথা। আমেরিকাতে এমনই এক পরিস্থিতির শিকার হলেন জারেদ।
মিচিগান শহরের বাসিন্দা জারেদ মক। তবে শহরের ভিতরের দিকে গ্রামাঞ্চলে থাকেন তিনি। আকামাই সংস্থায় নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট পদে কাজ করতেন তিনি। ২০০২ সালে বাড়ি ফিরে আসেন জারেদ। তাঁর বাড়িতে ১.৫ এমবিপিএস গতিবিশিষ্ট ইন্টারনেট ব্যবহার করা হত।
কিন্তু, জারেদের এর চেয়েও বেশি গতির ইন্টারনেট পরিষেবার প্রয়োজন ছিল। তিনি ভেবেছিলেন, ইন্টারনেট প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে হয়তো তাঁর এলাকায় পরিষেবাও উন্নত হবে। কবে কেব্ল অথবা ফাইবার নেটওয়ার্ক পরিষেবা দেওয়া হবে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন জারেদ।
জারেদ যখন বুঝতে পারলেন তাঁর এই অপেক্ষার কোনও অন্ত নেই, তখন তিনি ৫০ এমবিপিএস গতিবিশিষ্ট ওয়্যারলেস (তারবিহীন) ইন্টারনেট পরিষেবা নিতে শুরু করলেন। নির্দিষ্ট সংস্থার সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে সংস্থার তরফে জানানো হয়, জারেদকে ৫০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা) দিতে হবে। তা হলেই তাঁর বাড়িতে কেবল নেটওয়ার্কের পরিষেবা দেওয়া হবে।
খরচের হিসাব শুনে জারেদের মাথায় হাত! ২০০২ সালে ১.৫ এমবিপিএস গতিতে কোনও রকমে কাজ করা গেলেও ১৮ বছর পরে এত কম গতির ইন্টারনেটে তিনি কী ভাবে কাজ করবেন, তা ভেবে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
জারেদ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি নিজেই একটি ব্রডব্যান্ড তৈরি করবেন। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঠিকাদারের সঙ্গে ব্রডব্যান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইবার নেটওয়ার্কের চুক্তি করেন তিনি। মাটির নীচে ৬ ফুট থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত ফাইবার কেবলগুলি লাগানোরও ব্যবস্থা করে ফেলেন তিনি।
এর পর বাড়ি বসে কম খরচে বেশি গতির ইন্টারনেট পরিষেবা লাভ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু তাঁর প্রতিবেশীরা একই সমস্যায় ভুগছিলেন দেখে তিনি ব্রডব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করতে শুরু করেন।
১০০ এমবিপিএস গতির পরিষেবার জন্য মাসপিছু ৫৫ আমেরিকান ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪,৩০০ টাকা) এবং ১ জিবিপিএস গতির পরিষেবার জন্য তিনি ৭৯ আমেরিকান ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৬,৩০০ টাকা) ধার্য করেন।
প্রথমে ৩০টি বাড়িতে এই পরিষেবা দেওয়া শুরু করলেও বর্তমানে লিমা এবং সিও টাউনশিপের বেশির ভাগ বাড়িতে জারেদের কাছ থেকে ফাইবার কেবল পরিষেবা নিয়ে উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়।
এমনকি, আমেরিকার সরকারের তরফে জারেদকে তাঁর ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য ২.৬ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা) দেওয়া হয়।
জারেদ জানান, তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে ৭০ জন তাঁর কাছ থেকে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা নিয়েছেন। সরকারের তরফে তাঁকে যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে, তিনি আরও ৬০০টি আবাসনে এই পরিষেবা দিতে পারবেন।
বর্তমানে তিনি পাঁচ কিলোমিটার লম্বা ফাইবার নেটওয়ার্কের পরিষেবা দিতে পারেন। জারেদ নিজে থেকে যে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমেরিকায় একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।