বছর ছয়েক আগে ঝাঁপ ফেলেছিল লিভারপুলের পাবটি। শহরের বহু বাসিন্দার কাছেই নাকি সে পাবটি ছিল ‘চক্ষুশূল’। তা-ও কিসের টানে ঘন ঘন সেখানে যেতেন তাঁরা? কেন তার স্মৃতি আজও বয়ে বেড়ান স্থানীয়েরা? নেটমাধ্যমে ছেয়ে পড়া অসংখ্য মন্তব্যে এর হদিস মিলতে পারে।
লন্ডনের ঝাঁ-চকচকে পানশালার মতো নয়। বরং লিভারপুলের ‘দ্য পেনি ফার্দিং’ পাবের অন্দর বেশ অপরিচ্ছন্ন ছিল। তবে তাতে পা রাখলেই নাকি ‘অন্য জগতে’ চলে যেতেন সুরাপায়ীরা। এ পাবে ঢুকে বিয়ার অর্ডার করলে সঙ্গে আস্ত একটি বেকন স্যান্ডউইচ পাওয়া যেত। তা-ও আবার বিনামূল্যে!
‘দ্য পেনি ফার্দিং’ পাবে বিয়ারের দামও নাকি লিভারপুলের অন্য পানশালার তুলনায় সস্তা। সুরাপান করে ভরদুপুরে পানশালার মধ্যেই বমি করে ফেলেছেন, এমন দৃশ্যও হামেশাই চোখে পড়ত।
পেনি ফার্দিংয়ে ঢুকে বিয়ারে চুমুক দিতে ব্যস্ত। হঠাৎ দেখা যেত, সামনেই নেচে চলেছেন নগ্ন যুবতীরা। এ সবে ভালই মজে ছিলেন সুরাপায়ীরা।
লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারের গা ঘেঁষে থাকায় এই পাবটিতে লিভারপুলের বাসিন্দা ছাড়াও থিয়েটারপ্রেমীদের ভিড় লেগে থাকত। তবে এক কালের এ সব সোনালি দিন আর নেই। যদিও সে সব দিনের কথা আজও ধূসর হয়নি।
সত্তরের দশকের গোড়ায় প্রথম ঝাঁপ খুলেছিল পেনি ফার্দিং। তার পর থেকে টানা ৪৫ বছর ধরে শহরের বহু বিয়ারপ্রেমীর আস্তানা ছিল এটি। যদিও সুখের মুহূর্তগুলি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ২০১৬ সালে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন পাব কর্তৃপক্ষ।
পুরনো পাবটিই নতুন ভাবে ফিরে আসে তার পরের বছর। অবশ্য ২০১৫ সালেই এর মালিকানা বদল হয়েছিল। পাবটিকে অধিগ্রহণ করেন রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার কর্তৃপক্ষ। তার আগে অবশ্য এর নামও বদলে গিয়েছিল। এক কালে তা পরিচিতি পেয়েছিল ‘দ্য নিউ পেনি ফার্দিং’ হিসাবে।
অধিগ্রহণের পর পেনি ফার্দিংয়ের ভোল বদলে দিয়েছিলেন রয়্যাল কোর্ট থিয়েটার কর্তৃপক্ষ। পাবের বাইরেও বসে পান করার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। জুড়েছিল ঝাঁ-চকচকে রেস্তরাঁও। এ বার নতুন নামে সামনে এল পুরনো পাবটি— ‘কোর্টিয়ার্ড বার অ্যান্ড কিচেন’।
পেনি ফার্দিংয়ের নতুন চেহারায় দারুণ সাড়া মিলেছে। নতুন পানশালায় লোকজনের ভিড়ও হতে থাকে। তবে পুরনো চেহারার পাবটিকে ভুলতে পারেননি অনেকে।
৪৫ বছরের পুরনো ওই ‘নোংরা’ পাবটি ঝাঁপ ফেললেও অনেকেই তার কথা মনে রেখেছেন। অনেকের মতো স্থানীয় বাসিন্দা জ্যাকি জনসনও পেনি ফার্দিংয়ের একনিষ্ঠ ভক্ত।
জ্যাকির সাফ কথা, ‘‘খুব নোংরা চেহারার একটা জায়গা। পাবটিকে দেখলে আমাদের সুন্দর শহর সম্পর্কে খারাপ ধারণা হতে পারে। ট্রেন থেকে নেমে শহরে ঢুকে লাইম স্ট্রিটে পা বাড়াতেই প্রথমেই চোখে পড়ত এই পাব।’’ তা সত্ত্বেও পেনি ফার্দিংয়ের নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন জনসন।
কিসের টানে বার বার ফিরে যেতেন এই পাবে? পাবের ভিতরে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন স্টেফেন হ্যালিগান। তিনি বলেন, ‘‘মনে পড়ে, আমাদের শেষ অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এর পর আর বিয়ার পাওয়া যাবে না। কয়েক জন তাঁদের কোটের ভিতর থেকে ক্যান বার করে আমাদের গ্লাসে বিয়ার ঢেলে দিলেন। তার জন্য টাকাপয়সা চাননি। এমনটা শুধু পেনি ফার্দিংয়েই হতে পারে।’’
এলিজাবেথ বেনেটের আবার অন্য কথা মনে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমার বয়ফ্রেন্ড এক বার বিয়ার খাওয়াতে পেনি ফার্দিংয়ে নিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎই এক জন নগ্ন নর্তকী এসে পাবের ভিতরে নাচ করতে শুরু করে দিলেন। আমি একেবার হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বয়ফ্রেন্ড রসিকতা করে বলেছিল, ‘এখন বুঝলাম যে এক পাইন্ট বিয়ারের দাম এত চড়া কেন?’’’
পাবের ভিতরে ‘কুৎসিত’ দৃশ্যও চোখে পড়ত বলে জানিয়েছেন অনেকে। অলি মেলভিন নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘এটাই শহরের একমাত্র পাব যেখানে ভরদুপুরে পান করে লোকজনকে বমি করতে দেখেছি। এ সমস্ত ঘটনা আজও মনে পড়ে!’’
এমন ধরনের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও বহু বাসিন্দাই ঘুরেফিরে পেনি ফার্দিংয়ে পা রাখতেন। সে সব দিনের কথা মনে করে মারিয়া বাউম বলেন, ‘‘পুরনো ধাঁচের ওই পাবে ভিড় লেগেই থাকত। বহু বছর আগে ওখানে দারুণ সময় কাটিয়েছি আমি।’’
পেনি ফার্দিংয়ের জায়গায় গড়ে ওঠা নতুন পানশালাটি চুটিয়ে ব্যবসা করছে। তবে পুরনো পাবের চিহ্ন মিটে গেলেও তার স্মৃতি মুছে যায়নি।