২০০৫ সালের জুন মাস। স্কুল থেকে ফেরার সময় অপহরণ করা হয় ইথিওপিয়ার এক ১২ বছর বয়সি স্কুলছাত্রীকে। কয়েক দিনের লাগাতার অত্যাচারের পর ওই ছাত্রীর যখন অবস্থা আশঙ্কাজনক, সেই সময় তাঁকে উদ্ধার করে সিংহের দল!
১৮ বছরের আগের সেই ঘটনা দেশে-বিদেশের বহু সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিল। এই ঘটনার সত্যতা নিয়েও উঠেছিল বহু প্রশ্ন। কী কী গুঞ্জন উঠেছিল সেই ঘটনা নিয়ে? সত্যিটাই বা কী? তা নিয়েও নানা মুনি নানা মত দিয়েছিলেন।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার এই ঘটনা ঘটে। স্কুল থেকে ফেরার পথে এক কিশোরীকে অপহরণ করে চার দুষ্কৃতী।
কিশোরীর পরিবারকে যোগাযোগ করে প্রচুর টাকা মুক্তিপণও নাকি চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকা জোগাড় করার জন্য কিশোরীর পরিবারকে সপ্তাহখানেক সময়ও দিয়েছিল অপহরণকারীরা।
কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে ওই কিশোরীর উপর চালানো হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। মারধর তো চলতই। পাশাপাশি যৌন নির্যাতনও চালানো হয়েছিল ওই কিশোরীর উপর।
এক সপ্তাহ পরে অপহরণকারীদের গোপন আস্তানার খোঁজ পেয়ে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশের তাড়া খেয়ে বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়েই ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
পালানোর পথে হঠাৎই সিংহের একটি দলের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা। তিনটি সিংহকে সামনাসামনি দেখে তারা ওই অর্ধমৃত কিশোরীকে ওখানেই ফেলে রেখে পড়িমড়ি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
এর পরই ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। দুষ্কৃতীদের খুঁজতে খুঁজতে পুলিশ ওই জায়গায় পৌঁছে দেখে আহত কিশোরীকে ঘিরে ‘পাহারা’ দিচ্ছে তিনটি সিংহ।
স্বভাববিরুদ্ধ হয়ে তিন সিংহের মধ্যে কেউ ওই কিশোরীর গায়ে নাকি একটি আঁচড় অবধি কাটেনি। আর তা দেখেই হতবাক হয়ে যায় পুলিশ।
শোনা যায়, পুলিশ দেখে ওই তিন সিংহ আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়। প্রায় অচৈতন্য কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জ্ঞান ফেরার পর পুলিশ কিশোরীর কাছে পুরো বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় যে অপহরণকারীরা কী ভাবে তার উপর নির্যাতন চালিয়েছিল। তবে সিংহরা তার কোনও ক্ষতি করেনি বলেও জানায়।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার দূরে বিতা গেনেট গ্রামে এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছিল। সার্জেন্ট ওয়ান্ডমু ওয়েদাজ এ-ও জানিয়েছিলেন যে তাঁরা মেয়েটিকে জীবিত দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
এক সংবাদমাধ্যমে ওয়ান্ডমু বলেন, ‘‘আমরা ওই কিশোরীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সিংহরা তাকে পাহারা দিচ্ছিল। আমাদের দেখে তারা জঙ্গলে ফিরে যায়।’’
তবে কিছু পশু বিশেষজ্ঞ এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পশু বিশেষজ্ঞ কর্নেল লেমা লেগেসের দাবি ছিল, ওই কিশোরীকে মোটেও পাহারা দিচ্ছিল না সিংহের দল। উল্টে বাচ্চা মেয়েটির মরার অপেক্ষায় ছিল তারা।
লেমা জানান, কিশোরীর মারা যাওয়ার পর তাকে দিয়ে রসনাতৃপ্তির পরিকল্পনা ছিল তিন সিংহের। যাতে অন্য কোনও প্রাণী এসে তাদের শিকারে ভাগ না বসাতে পারে, সেই জন্যই ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল তারা। কিন্তু একসঙ্গে অনেক পুলিশকে দেখে তারা পালিয়ে যায়।
লেমার দাবি, ওই অঞ্চলে মানুষ এবং খামারের পশুদের ওপর সিংহের আক্রমণ সেই সময়ে বেড়েছিল। তাই সিংহের দলের ওই কিশোরীকে পাহারা দেওয়ার দাবি ভ্রান্ত।
ইথিওপিয়ার এক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞের আবার দাবি ছিল, কিশোরীর কান্না অনেকটা সিংহ শাবকের কান্নার মতো মনে হয়েছিল সিংহ দলের। আর সেই কারণেই তারা ওই কিশোরীকে মারতে পারেনি।
সার্জেন্ট ওয়ান্ডিমু অবশ্য পরে এই ঘটনাতে ‘অলৌকিক’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন। কিশোরীকে অপহরণের ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করে।