চলতি বছরের মার্চ মাসের গোড়ায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘মামলা লিগ্যাল হ্যায়’। আট পর্বের কোর্টরুম কমেডি ঘরানার ওয়েব সিরিজ়ে আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করে যেমন নজর কেড়েছেন ভোজপুরি অভিনেতা রবি কিষণ, ঠিক তেমনই রবির সঙ্গে সমান তালে অভিনয়ে পাল্লা দিয়েছেন নিধি বিস্ত ওরফে ওয়েব সিরিজ়ের সুজাতা দিদি। আদালত চত্বরে টেবিল-চেয়ার পেতে বসে থাকে সে। স্বপ্ন দেখে কোনও এক দিন আদালতের চার দেওয়ালের ভিতর তার নিজের দফতর হবে। তবে শুধু ওটিটির পর্দায় নয়, অভিনয়ে নামার আগে বাস্তবে আইনজীবীই ছিলেন নিধি।
১৯৮৫ সালের ২১ অক্টোবর জন্ম নিধির। দিল্লির একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তাঁর। কিন্তু অভিনয় নিয়ে যে পেশাগত জীবনে এগিয়ে যাবেন তা কখনও ভাবেননি নিধি।
নিধির বাবা পেশায় পুলিশকর্মী। তিনি চেয়েছিলেন নিধি যেন আইন নিয়েই পড়াশোনা করেন। বাবার কথায় দিল্লির একটি খ্যাতনামী কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন নিধি।
কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে থিয়েটারে অভিনয় করতেন নিধি। আইন নিয়ে পাশ করার পর এক বেসরকারি আইনি সহায়ক সংস্থায় কাজ শুরু করেন তিনি। এমনকি দিল্লি হাই কোর্টে এক বছর আইন নিয়ে চর্চাও করেছেন নিধি।
চাকরি করে ভাল বেতন পেতেন নিধি। কিন্তু মন যেন সব সময় অস্থির হয়ে থাকত। ধীরে ধীরে তিনি বুঝলেন যে অভিনয় নিয়েই এগিয়ে যেতে চান তিনি।
অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে সে কথা বাড়িতে জানালে প্রথমে আপত্তি জানান নিধির বাবা-মা। পরে অবশ্য দিল্লির একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিনয় শিখতে শুরু করেন তিনি।
২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন বলে মুম্বই চলে যান নিধি। সেখানে গিয়ে থিয়েটারে অভিনয় করতে শুরু করেন।
২০১৩ সালে ইউটিউবের একটি জনপ্রিয় চ্যানেলের সঙ্গে হাত মেলান নিধি। সেই চ্যানেলের সঙ্গে যত জন যুক্ত ছিলেন, নিধি ছাড়া তাঁরা সকলেই ছিলেন আইআইটির স্নাতক।
ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া ‘চায় সুট্টা ক্রনিকল্স’, ‘পার্মানেন্ট রুমমেট্স’, ‘ট্রিপলিং’, ‘বিস্ত, প্লিজ়!’, ‘ব্যাচেলর্স’, ‘হস্টেল ডেজ়’, ‘কিউবিকল্স’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মেসার্স’-এর মতো একাধিক সিরিজ়ে মজাদার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় নিধিকে। এমনকি বহু সিরিজ়ের চিত্রনাট্য লেখালিখির দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।
ইউটিউব মাধ্যমে অভিনয় করে নিজের পরিচিতি তৈরি করেন নিধি। সমাজমাধ্যমেও অনুরাগী মহল তৈরি হয় তাঁর। ইউটিউবের পাশাপাশি বড় পর্দায় অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
২০১৭ সালে বলি অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মার প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ফিলৌরি’। এই ছবিতে অনুষ্কা এবং দিলজিৎ দোসাঞ্জের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় নিধিকে। ‘ফিলৌরি’ ছবির মাধ্যমেই বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৮ সালে ‘কণিকা’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করেন নিধি। ‘টিভিএফ পিচার্স’ সিরিজ়ে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসাবে এবং ‘পার্মানেন্ট রুমমেট্স’ সিরিজ়ে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন তিনি।
২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পিএ-গার্লস্’ নামের সিরিজ় পরিচালনা করতে দেখা যায় নিধিকে। ২০২২ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘হোম শান্তি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়। এই সিরিজ়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
২০১৯ সালে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত ‘ড্রিম গার্ল’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই ছবিতে কৌতুকে মোড়া একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন নিধি। বক্স অফিসেও ছবিটি ভাল ব্যবসা করে।
২০২২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় কমেডি ঘরানার ছবি ‘ফোন ভূত’। ক্যাটরিনা কইফ, সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী এবং ঈশান খট্টরের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন নিধি। তবে এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০২৪ সালে আবার ওটিটির পর্দায় দেখা যায় নিধিকে। ‘মামলা লিগ্যাল হ্যায়’ সিরিজ়ে অভিনয় করে দর্শকের কাছে হাততালি কুড়োন তিনি।
বর্তমানে সমাজমাধ্যমে নিধির অনুগামীর সংখ্যা নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা এক লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।