হিন্দি ফিল্মজগতের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, অতীতে এমন এক সময় ছিল যখন ৪০ কোটি টাকা খরচ করে ছবি নির্মাণ করলে তাকে বড় বাজেটের ছবি হিসাবে ধরা হত। কিন্তু বর্তমানে ফিল্মজগতের চেহারা পাল্টে গিয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে একটি হিন্দি ছবি তৈরি করতে ২০০ কোটি টাকা বা তার বেশি খরচ হলে তাকে বড় বাজেটের ছবি হিসাবে গণ্য করা হয়। চলতি বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখ খান অভিনীত ‘জওয়ান’ বড় বাজেটের ছবির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সলমন খানের ‘টাইগার ৩’-র নামও রয়েছে এই তালিকায়। কিন্তু বলিউডের অধিকাংশ বড় বাজেটের ছবিকেও খরচের নিরিখে হারিয়ে দিয়েছে এক হিন্দি ধারাবাহিক।
২০১৭-’১৮ সালে ছোট পর্দায় সম্প্রচার শুরু হয় ‘পোরাস’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকের। ঐতিহাসিক ঘরানার এই ধারাবাহিকে টেলিভিশনের কোনও জনপ্রিয় মুখ না থাকা সত্ত্বেও রাতারাতি তার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খরচের ভিত্তিতেও বড় পর্দার ‘বিগ বাজেট’-এর ছবিগুলিকে টেক্কা দেয় ‘পোরাস’। টেলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘পোরাস’ ধারাবাহিকটি তৈরি করতে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
‘পোরাস’ ধারাবাহিকের সেট তৈরির পাশাপাশি ভিএফএক্স প্রযুক্তির জন্য প্রচুর টাকা খরচ করা হয়। তা ছাড়া চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে কোনও যুদ্ধের দৃশ্য শুট করতে হলে সেট ছেড়ে বাইরে গিয়ে শুটিং করা হত।
‘পোরাস’ যে সময় সম্প্রচারিত হয় সে সময় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বাহুবলি ২: দ্য কনক্লুশন’। প্রভাস, রানা দগ্গুবতী, অনুষ্কা শেট্টি এবং তমন্না ভাটিয়া এই ছবিতে অভিনয় করেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘বাহুবলি ২: দ্য কনক্লুশন’ তৈরি করতে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। এসএস রাজামৌলি পরিচালিত এই ছবির চেয়েও দ্বিগুণ খরচে তৈরি হয় ‘পোরাস’।
পরে অবশ্য বাজেটের দিক থেকে ‘বাহুবলি ২: দ্য কনক্লুশন’ ছবিটিকে টেক্কা দেয় ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘২.০’।
রজনীকান্ত এবং অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘২.০’ ছবিটি তৈরি করতে ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়। তবুও খরচের হিসাবে ‘পোরাস’কে টপকাতে পারেনি রজনীকান্ত-অক্ষয়ের ছবি।
২০১৮ সালের পর থেকে বলিউডের পাশাপাশি দক্ষিণী ফিল্মজগতেও এমন অসংখ্য ছবি মুক্তি পেয়েছে যা ‘বিগ বাজেট’ ছবি হিসাবে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু সেই ছবিগুলিও ‘পোরাস’কে টেক্কা দিতে পারেনি।
২০২২ সালে অয়ন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান— শিবা’। এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় রণবীর কপূর, আলিয়া ভট্ট, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, মৌনি রায় এবং ডিম্পল কপাডিয়ার মতো বলি তারকাদের।
‘ব্রহ্মাস্ত্র: পার্ট ওয়ান— শিবা’ ছবিটি তৈরি করতে ৪৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। রণবীরের ছবি ছাড়াও শাহরুখ এবং সলমনের ছবিকেও হার মানায় ‘পোরাস’।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, শাহরুখের ‘জওয়ান’ ছবি নির্মাণের জন্য ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
চলতি বছরের ১২ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে সলমনের ‘টাইগার ৩’। এই ছবিটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা।
দক্ষিণী অভিনেতা বিজয়ের ছবিকেও হার মানিয়েছে ‘পোরাস’। অক্টোবর মাসে মুক্তি পেয়েছে বিজয়ের ছবি ‘লিয়ো’। এই ছবিটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা।
ভারতীয় সিনেমায় এমন তিনটি ছবি রয়েছে যার বাজেট ‘পোরাস’-এর তুলনায় বেশি। চলতি বছরের জুন মাসে ওম রাউতের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘আদিপুরুষ’। এই ছবিটি তৈরি করতে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ হয়।
এসএস রাজামৌলির পরিচালনায় ২০২২ সালে মুক্তি পায় ‘আরআরআর’ ছবিটি। এই ছবিটি তৈরি করতে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’। প্রভাস, অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোন, কমল হাসন, দিশা পাটানি, দুলকের সলমনের মতো তারকাদের এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যাবে। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবি তৈরিতে ৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
‘পোরাস’ ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন লক্ষ লালওয়ানি। ‘পোরাস’-এ অভিনয়ের আগে অন্য কোনও হিন্দি ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
‘পোরাস’ ধারাবাহিকে আলেকজান্ডারের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় রোহিত পুরোহিতকে। ‘পোরাস’-এর আগে অন্যান্য ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় ছিলেন না রোহিত।
ছোট পর্দায় ‘পোরাস’ এতটা জনপ্রিয়তা পায় যে ২০১৮-’১৯ সালে এই ধারাবাহিকের সিকোয়েল হিসাবে সম্প্রচারণ শুরু হয় ‘চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য’ নামের ধারাবাহিক।