চারপেয়েদের ভালবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছেন। সন্তানস্নেহে তাদের বড় করেও তোলেন অনেকে। কিন্তু কুকুরকে দেবতাদের স্থানে বসিয়ে পুজো করা হয় তা শুনেছেন কি?
প্রতি বছর অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে নেপালে ‘কুকুর তেওহর’ নামে একটি উৎসব পালন করা হয়। শতাব্দীপ্রাচীন এই উৎসব পালন হয় কুকুরদের পুজো করে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী যম হলেন মৃত্যু এবং ন্যায়বিচারের দেবতা। যমের দু’টি কুকুর রয়েছে যাদের দায়িত্ব মৃত ব্যক্তিদের সন্ধান রাখা এবং যমের রাজ্যের পথ পাহারা দেওয়া।
মহাভারতে রয়েছে, মহাপ্রস্থানের সময় পঞ্চপাণ্ডব এবং দ্রৌপদীকে স্বর্গের পথে যাওয়ার সময় সঙ্গ দিয়েছিল একটি কুকুর। নেপালি হিন্দুদের বিশ্বাস, কুকুর আসলে ভগবানের দূত।
মৃত্যুর পর শেষযাত্রার সময় সমস্ত বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করে কুকুর। তাই কুকুরদের শ্রদ্ধা জানাতে ‘কুকুর তেওহর’ উৎসব পালন করা হয়।
শুধুমাত্র পোষ্য কুকুরদের নয়, রাস্তার কুকুর থেকে শুরু করে পুলিশে কাজ করা কুকুরগুলিকেও এই উৎসব উপলক্ষে পুজো করা হয়।
‘কুকুর তেওহর’ উৎসবের নিয়মানুযায়ী দীপাবলির দ্বিতীয় দিনে নেপালের সমস্ত কুকুরকে স্নান করানো হয়। তার পর কুকুরদের গলায় পরানো হয় ফুলের মালা।
মালা পরানোর পাশাপাশি দই, চাল এবং সিঁদুর মিশিয়ে কুকুরদের কপালে বিশেষ ধরনের তিলক লাগানো হয়।
মাংস, দুধ, ডিম, ডগ ফুড থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবার ভোগ হিসাবে অর্পণ করা হয়।
নেপালি হিন্দুদের বিশ্বাস, উৎসব পালনের দিন যদি কেউ কোনও কুকুরের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তবে তা অশুভ।
২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্প হওয়ার পর অনাথ চারপেয়েদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ‘কুকুর তেওহর’ পালন করা হয়েছিল।
২০১৬ সালে মেক্সিকোয় কুকুরদের পুজো করা শুরু হয়। এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় যে নেপালি হিন্দুদের বাস রয়েছে তাঁরাও ‘কুকুর তেওহর’ উৎসব পালন করা শুরু করেন।
২০১৮ সালে নেপালে ‘কুকুর তেওহর’ উৎসব পালনের সময় কুশল নামের একটি কুকুরকে ‘বছরের সেরা কুকুর’ হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়। ১০ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যুর নেপথ্যে যে অপরাধী রয়েছেন তাঁকে খুঁজে বার করতে নেপাল পুলিশকে সাহায্য করেছিল কুশল।