বছর শেষ হতে চলল। নতুন বছরে পা দেওয়ার আগে পুরনো বছরের হিসাবখেতাব মিলিয়ে নেওয়ার পালা। পাওয়া-না পাওয়ার খতিয়ান কী বলছে, দেখে নেওয়া শেষ মুহূর্তে। তার আগে জেনে নেওয়া যাক, বছরভর চায়ের কাপে তুফান তুললেন কারা? কাদের নিয়ে আরও আরও তথ্য জানতে বার বার কি-প্যাডের উপর পড়ল চাপ?
বিশ্বকাপ, আইপিএল, রাজনীতির সুনামি থেকে বলিউড তারকাদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া— ২০২৩ সাল দেখেছে অনেকগুলি ‘বিগ ইভেন্ট’স। তবে সবাইকে মাত করে দিয়েছেন দক্ষিণ মুম্বইয়ের সুন্দরী। হালকা গোলাপি আভা ছড়ানো সেই ‘গ্র্যান্ড’ বিয়ে হাঁ করে গিলেছে গোটা দেশ মায় বিশ্ব। তিনি কিয়ারা আডবাণী।
এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি দিয়ে কিয়ারার যাত্রাশুরু। তার পর কবীর খান তাঁকে এনে দেয় খ্যাতি। সেই সঙ্গে ওটিটি প্ল্যাটর্মে কিয়ারার ‘লাস্ট স্টোরিজ়’ প্রশংসা কুড়োয় সমালোচকদেরও। কিন্তু সব পর্দা যেন খান খান করেন কিয়ারা নিজের বিয়ের আসরে। বহু দিনের বন্ধু সিদ্ধার্থের বাহুডোরে আবদ্ধ হন এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। সেই শাহি বিয়ের ইনস্টা পোস্ট বছরভর গিলেছে সমাজমাধ্যমের দুনিয়া। বছর শেষ হওয়ার আগে ১ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি ‘লাইক’ পড়েছে তাতে। সব মিলিয়ে কিয়ারা আডবাণীই এ বছরের সবচেয়ে বেশি ‘সার্চড’ হওয়া ব্যক্তিত্ব।
প্রথম স্থানটি বলিউডের দখলে গেলেও দ্বিতীয় স্থানে ক্রিকেট। তার উপর এ বছর ভারতেই হয়ে গেল বিশ্বকাপ। ভারতীয়রা যে কতটা ক্রিকেট পাগল, তা জানতে আর যা-ই হোক, গুগল ঘাঁটতে হয় না। আবার হয়ও। ভারতীয় দলের এক নবীন তারকাকে জানার বহর এমনই যে, গুগলের পর্যন্ত চোয়াল ব্যথা হওয়ার জোগাড়। বলুন তো, তিনি কে? উত্তর দেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। তিনি শুভমান গিল।
ব্যাট হাতে যেমন দাপট, চেহারাও তেমনই সুদর্শন। জনপ্রিয়তা তাঁকে খুঁজবে না তো কাকে খুঁজবে! গিল যেন ব্যাট ধরলেই শতরান। টি-টোয়েন্টি হোক বা একদিনের আন্তর্জাতিক— রানের ছররা ছুটছে সব দিকেই। ক্রিকেট কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা তাঁকে বলেছেন, ‘নব প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিভাধর ব্যাটার’। জীবনের শুরুতেই লারার প্রশংসা পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এ দিকে সুদর্শন ব্যাটারের মহিলা ভক্তের সংখ্যাও যেন তাঁর স্ট্রাইক রেটের সঙ্গেই পাল্লা দেয়। বছর শেষেও সেই লড়াই জারি।
বিশ্বকাপের আসর তিনি একা হাতে মাতিয়ে দিয়েছেন। মাথায় ঝাঁকড়া চুল মনে করিয়ে দেয় ৯০-এর সচিনকে। আর খেলার ভঙ্গিতেও যেন সেই ভয়ডরহীন ভাব। তবে নীল নয়, কালো জার্সি পরেন তিনি। পরিভাষায় ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’। তিনি রাচিন রবীন্দ্র।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ব্যাটারের ব্যাটে ভরা রয়েছে হিম্মত। বিশ্বকাপ শেষে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে বাজার মাত করেছে রাচিনের মানসিকতা। এ বার তারই দাম পেয়েছেন আইপিএলে। তাঁকে প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়ে ডেকে নিয়েছে ধোনির চেন্নাই। ক্যাপ্টেন কুলের তত্ত্বাবধানে রাচিনের উত্তরোত্তর অগ্রগতি ঠেকায় কে?
একটা সময় ভারত বিশ্বকাপ খেলছিল দাপটে। আর তিনি মাঠের বাইরে বসে হাততালি দিচ্ছিলেন। এক বার কপালজোরে খেলার সুযোগ আসে। আর প্রথম সুযোগেই বাজিমাত! তিনি মহম্মদ শামি। বাংলার হয়ে মাঠ দাপানোর পর ভারতের হয়েও দুনিয়াকে সুইং বোলিংয়ের পাঠ দিয়ে চলেছেন তিনি।
শামির বোলিংয়ের প্রভাব এতটাই যে, বেশ কয়েকটি ম্যাচে সুযোগ না পেলেও বিশ্বকাপে একাই দখল করে নিয়েছেন ২৪টি উইকেট। তিনি পেশায় ক্রিকেটার হলেও নেশায় শিল্পী। শামির শিল্পের ছোঁয়া অভিভূত হয়ে দেখেছে গোটা বিশ্ব। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত তাঁকে বুকে টেনে নিয়েছেন।
এলভিস যাদব। এই নামটা এখন আর খুব একটা অজানা বা অচেনা নয়। ইউটিউবার, স্ট্রিমার এবং গায়ক হিসাবে জনপ্রিয় হলেও, সেই জনপ্রিয়তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে রিয়্যালিটি শো ‘বিগ বস্’। ‘বিগ বস্ ওটিটি ২’ জেতার পর সার্চ ইঞ্জিনে একাই ঝড় তুলে দিয়েছিলেন হরিয়ানার গুরুগ্রামের ইউটিউবার।
এলভিসের নিত্যসঙ্গী বিতর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে সাপের বিষ পাচার করার অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, ইউটিউব তারকার বিরুদ্ধে এ-ও অভিযোগ ওঠে যে, তিনি নাকি অবৈধ রেভ পার্টির আয়োজন করেছেন। সব মিলিয়ে তাঁকে নিয়ে তথ্য জানতে চেয়ে বহু বহু বার মানুষ গুগলের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এর পরের জায়গাটি দখলে রেখেছেন সেই লোকটি। যাঁর বিয়ে কত পুরুষের যে হৃদয় ভেঙেছে তা কহতব্য নয়। আবার উল্টোটাও পুরোদমে সত্যি। তিনি সিদ্ধার্থ মলহোত্র। সম্পর্কে কিয়ারার স্বামী।
কিয়ারা-সিডের বিয়ের পাশাপাশি সিদ্ধার্থ নিজেও ব্যাপক জনপ্রিয় মহিলামহলে। ‘শেরশাহ’ ছবিতে তিনি মন জিতে নিয়েছেন সকলের। ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার চরিত্রে প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছেন সিদ্ধার্থ। জিতে নিয়েছেন কতই না পুরস্কার। বছরভর সিদ্ধার্থের সুলুকসন্ধান করেছেন কোটি কোটি মানুষ। বার বার গুগল করা হয়েছে তাঁরই খবর নিতে।
তালিকায় এ বার যিনি, তিনি আবার ভারতের জামাই। ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে তাঁর জুড়ি নেই। বেঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলে এ বারও তাঁর অপেক্ষায় পথ চেয়ে বিরাট কোহলি। তিনি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর মহাকাব্যিক ইনিংস ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম অসি ব্যাটার হিসাবে তিনি দ্বিশতরান করেছেন। যাকে জাদুকরের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শনীর সঙ্গে তুলনা করছেন ক্রিকেট পণ্ডিতেরা।
এ বার তালিকায় সেই ‘ইংলিশম্যান’। একদা তাঁর পরিহিত ৭ নম্বর জার্সি এখনও বিকোয় ময়দান মার্কেটে। বাঁক খাওয়া ফ্রি-কিকে এখনও যৌবন খোঁজে নব্বুইয়ের প্রজন্ম। তিনি ডেভিড বেকহ্যাম।
ইউনিসেফের ‘গুডউইল’ দূত হিসাবে বিশ্বকাপের সময় ভারতে এসেছিলেন বেকহ্যাম। কাপ হাতে মাঠে নেমেছিলেন সচিনকে পাশে নিয়ে। তার পর বলিউডের ‘হুজ়-হু’দের পার্টিতে আলো ছড়ানো, সবেতেই তিনি মধ্যমণি। আর ভারতে ‘শিল্পী’ বেকহ্যামের উপস্থিতিই তাঁকে করে তুলেছে অন্যতম সর্বোচ্চ ‘সার্চড’ ব্যক্তিত্ব।
এ বার তালিকায় সেই ব্যক্তি, যিনি হাসতে হাসতে ১৫৪ কিলোমিটার গতির বলকে ডিপ ফাইন লেগের উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেলে দেন। বোলার ভ্যাবাচাকা খেয়ে কেবল তাকিয়ে থাকেন। আবার কখনও কভারের উপর দিয়ে স্লাইস করে উড়িয়ে দেন দেড়শো কিলোমিটারের গোলা। তিনি পরিচিত স্কাই নামে। ভাল নাম সূর্যকুমার যাদব।
বিশ্বকাপে তাঁর খেলার ধরন কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কুড়ি ওভারের খেলায় তিনিই শ্রেষ্ঠ। আর মাঠে হেলায় গড়া কীর্তিগুলির জন্যই তাঁকে নিয়ে আরও আরও জানার আগ্রহ বেড়েছে মানুষের মধ্যে। বার বার গুগলের কাছে প্রশ্ন গিয়েছে স্কাইকে নিয়ে।
এই তালিকায় নাম রয়েছে সেই অসি তারকারও। যাঁর দাপটে ফাইনালে হেলায় ফেভারিট ভারতকে উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তিনি ট্রাভিস হেড। কে সেই ব্যাটার, যিনি ফাইনালে একার হাতে ভারতকে উড়িয়ে দিলেন! তাঁকে নিয়ে জানতে তাই গুগলে কার্যত ট্র্যাফিক জ্যাম লেগে গিয়েছিল। সেই সুবাদে এই তালিকা আলো করে রয়েছেন হেডও।