পদবি খান। তার উপর আবার সম্পর্কে বলিপাড়ার ‘পারফেকশনিস্ট’ আমির খানের ভাইপো। তবুও কাজের অভাবে টিনসেল নগরী থেকে হারিয়ে গিয়েছেন ইমরান খান।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, পরিচালক কর্ণ জোহর নাকি ইমরানের কেরিয়ার তৈরির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলিউডের নামকরা প্রযোজক এবং পরিচালকদেরও নাকি নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন ইমরানকে কোনও ছবিতে কাজ না দেওয়া হয়।
স্বজনপোষণ নিয়ে কথা উঠলে কর্ণ জোহরের নাম প্রথমে রাখেন বলিপাড়ার একাংশ। তিনি নাকি তারকা-সন্তানদের কেরিয়ার সোনায় মুড়ে ফেলেন। বেশির ভাগ তারকা-সন্তান কর্ণের হাত ধরেই ফিল্মজগতে নামেন। কিন্তু ইমরানের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছিল।
২০১০ সালে কর্ণ জোহরের জনপ্রিয় টক শোয়ে যাওয়াই কাল হয়েছিল ইমরানের। রণবীর কপূরের সঙ্গে অতিথি হিসাবে সেই শোয়ের একটি পর্বে উপস্থিত ছিলেন ইমরান।
কর্ণের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন ইমরান। কর্ণ ওই পর্বে ইমরানকে প্রশ্ন করেন, ইন্ডাস্ট্রির কোন পরিচালককে তিনি ‘ফিল্ম ডিরেকশন ফর ডামিজ়’ বইটি উপহার দিতে চান।
অভিনেতা খানিকটা মজার ছলেই কর্ণকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘আমি যদি আপনাকে এই বইটি উপহার দিই, তা হলে কি আপনি কিছু মনে করবেন?’’ ইমরানের এই প্রশ্ন শুনে তাজ্জব হয়ে যান কর্ণ। ইমরান এমন পাল্টা জবাব দেবেন, তা ভাবতেই পারেননি কর্ণ। যদিও রণবীর এই উত্তর শুনে সজোরে হেসে উঠেছিলেন।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ইমরান সঙ্গে সঙ্গে কর্ণকে বলেছিলেন, ‘‘আমি কিন্তু এখনও আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’’ ইমরানের এই জবাব মেনে নিতে পারেননি কর্ণ।
‘ফিল্ম ডিরেকশন ফর ডামিজ়’ বইটি পরিচালনায় অপারগ কোনও ব্যক্তিকে ইমরান উপহার দেবেন বলে ধারণা ছিল কর্ণের। তিনি সত্যি সত্যিই ভেবে বসেন যে, ইমরানের চোখে তিনি খারাপ পরিচালক।
বলিপাড়ার অনেকেই মনে করেন, এই কথোপকথনের পর কর্ণ চাননি যে, ইমরান বলিপাড়ায় বেশি দিন কাজ করুন। তাই তিনি নিজে ইমরানের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও কাজ করেননি। এমনকি, প্রভাব খাটিয়ে ইমরানের অন্য কাজ পাওয়ার সুযোগও কেড়ে নেন কর্ণ।
ইমরানের সঙ্গে বলিপাড়ার পরিচয় বহু দিনের। শিশু অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ইমরান। ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’, ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি।
তার পর দীর্ঘ বিরতি। ২০০৮ সালে আব্বাস টায়ারওয়ালার পরিচালনায় ‘জানে তু ইয়া জানে না’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় ফিরে আসেন ইমরান। ইমরানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন জেনেলিয়া ডি’সুজ়া।
২০০৮ সালেই সঞ্জয় গাড়ভির পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘কিডন্যাপ’ ছবিটি। ‘ধুম’ ছবির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব পরিচালনা করে সঞ্জয় ইতিমধ্যেই অ্যাকশন ঘরানার জনপ্রিয় পরিচালক হিসাবে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন।
‘কিডন্যাপ’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ইমরানকে। সঞ্জয় দত্ত, মিনিশা লাম্বার মতো তারকার সঙ্গে একই পর্দায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
এক বছর পর আবার একটি অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘লাক’-এ অভিনয় করেন ইমরান। সোহম শাহ পরিচালিত এই ছবিতে সঞ্জয় দত্ত, মিঠুন চক্রবর্তী, ড্যানি ডেনজংপা, শ্রুতি হাসনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। বহু তারকার ভিড়েও ইমরানের অভিনয় নজরে পড়ার মতো ছিল।
২০১০ সালে কর্ণ জোহরের সঙ্গে প্রথম কাজ করেন ইমরান। পুনীত মলহোত্র পরিচালিত ‘আই হেট লভ স্টোরিজ়’ ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন কর্ণ জোহর। এই ছবিতে ইমরান এবং অনিল কপূরের কন্যা সোনম অভিনয় করেছিলেন।
২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বলিপাড়ায় ‘দিল্লি বেলি’, ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’, ‘ব্রেক কে বাদ’-এর মতো একের পর এক বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় ইমরানকে।
২০১৫ সালে শেষ বারের মতো দেখা যায় ইমরানকে। ‘কা়ট্টি বাট্টি’ ছবিতে কঙ্গনা রানাউতের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার পর আর অভিনয়ে ফেরেননি ইমরান।
২০১১ সালে দীর্ঘকালীন প্রেমিকা অবন্তিকা মল্লিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ইমরান। বিয়ের তিন বছর পর ইমরান এবং অবন্তিকার কোলে কন্যাসন্তান আসে।
কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী থাকেনি ইমরান এবং অবন্তিকার সম্পর্ক। বিয়ের আট বছর পর মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন অবন্তিকা। শেষ পর্যন্ত দু’জনের সিদ্ধান্তে তাঁদের সম্পর্কে ইতি টানা হয়।
বর্তমানে ফিল্মজগৎ থেকে দূরে রয়েছেন ইমরান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘খবরে থাকার জন্য কোনও অপপ্রচারে বিশ্বাস করি না আমি। আমার কোনও ছবি মুক্তি পেলে তবেই আমি সকলের সামনে আসব।’’ আলোর রোশনাই থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন ইমরান।