বিচারপতির তলব। আধ ঘণ্টার মধ্যে হাজির হন থানার ওসি। ঘটনাস্থল হেয়ার স্ট্রিট থানা, ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ মামলায় এফআইআর করা হচ্ছিল না। তাই এমন তলব বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। (এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় তথ্যগত কিছু গুরুতর ত্রুটি ছিল। সেই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)
ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ করে পিএফ ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ওঠে। থানায় এফআইআর করা হচ্ছিল না বলে বিচারপতি ওসিকে ডেকেছিলেন। তাঁর নির্দেশের পরেই তড়িঘড়ি এফআইআর করা হয়। আদালতে হাজিরাও দিয়েছেন ওই থানার ওসি। (এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, ‘‘ভুয়ো ডিরেক্টর নিয়োগ মামলায় এফআইআর করা হচ্ছিল না ওসির নামে।’’ বস্তুত, ওসির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।)
ডেল্টা লিমিটেড এবং ওলিসা রিয়্যালিটি প্রাইভেট লিমিটেড নামক দুই সংস্থার বিরুদ্ধে কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আদালতে মামলা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংস্থার তরফে তাঁদের প্রাপ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা দেওয়া হচ্ছে না।
তাঁদের তরফে আদালতে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। ওই মামলাতেই দুই সংস্থার পাঁচ জন ডিরেক্টরকে তলব করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)-কে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার।
এসএফআইও-র আইনজীবী সৌভিক নন্দী শুক্রবার আদালতে জানান, দুপুর ২টোয় হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়েছিলেন তাদের আধিকারিকেরা। থানায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশনামার কপি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির পরে এফআইআর দায়ের করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এর পরেই ওই থানার ওসিকে তলব করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তাঁর নির্দেশের কিছু ক্ষণের মধ্যে এসএফআইও-র আইনজীবীর ফোনে একটি মেসেজ আসে। এফআইআর দায়ের হয়ে গিয়েছে বলে বিচারপতিকে জানান আইনজীবী।
বিচারপতির নির্দেশ, ওই অভিযোগপত্র এবং এফআইআর কপি দ্রুত ইডিকে দিতে হবে। সেগুলি পেলেই তদন্ত শুরু করতে হবে ইডিকে।
ইডির তরফে আইনজীবী ছিলেন ধীরজ ত্রিবেদী। এফআইআরের পর হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসিকে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয় বৃহস্পতিবার রাতেও। রাত ১০টা নাগাদ তাঁর এজলাস বসেছিল। এসএফআইও-কে তিনি শুক্রবার বিকেল ৩টেয় রিপোর্ট দিতে বলেছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার তারা আদালতে জানায়, রিপোর্ট দিতে আরও এক দিন সময় লাগবে। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘আমি কোনও কথা শুনতে চাই না। ১০ মিনিটের মধ্যে রিপোর্ট চাই।’’
অভিযুক্ত দুই সংস্থার বিরুদ্ধে ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। কিন্তু এ যাবৎ এফআইআর দায়ের না হওয়ায় কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্ত শুরু করতে পারেনি। সেই কারণেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এসএফআইও-কে শুক্রবার এফআইআর দায়ের জন্য থানায় অভিযোগ জানাতে বলেন।
পিএফ ‘দুর্নীতি’র মামলায় ‘বড় বড়’ মাথা যুক্ত রয়েছেন বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘‘ওঁরা আমার বদলিও করে দিতে পারেন। কিন্তু আমি এ সব বরদাস্ত করব না।’’
তার পরেই বিচারপতি জানিয়েছিলেন, রাত পর্যন্ত প্রয়োজনে তিনি এজলাসে থাকবেন এবং এই মামলা শুনবেন। বৃহস্পতিবার রাতে ৪৭ মিনিট শুনানি হয় তাঁর এজলাসে।
শুক্রবার বিচারপতি জানান, মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ইডি এবং এসএফআইও-কে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।