আমরা প্রায় সকলেই কম-বেশি স্বপ্ন দেখি বা দেখতে ভালবাসি। অনেকে বলেন, প্রতিটি স্বপ্নের সঙ্গে মানুষের জীবনের কোনও না কোনও যোগসূত্র থাকে। প্রত্যেক মানুষের জীবনের সঙ্গে স্বপ্নের নাকি বিশেষ সম্পর্ক আছে। আমরা যা স্বপ্ন দেখি, তা আমাদের জীবনে শুভ বা অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত দেয় বলেও দাবি করেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, সারা দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা, ক্লান্তি, চিন্তা আমাদের উপর এমন একটা প্রভাব ফেলে, যা ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। সব স্বপ্নেরই নাকি রয়েছে বিশেষ অর্থ, বিশেষ বার্তা।
আমরা প্রতিনিয়ত ভালমন্দ নানা রকম যে সব স্বপ্ন দেখি, সেগুলির বেশির ভাগেরই রেশ সকালে ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই ফুরিয়ে যায়। চেষ্টা করলেও বহু সুখের স্বপ্ন হারিয়ে যায় স্মৃতির ভিড়ে। ভাল স্বপ্নগুলি আমাদের তেমন মনে না থাকলেও দুঃস্বপ্নগুলি যেন মনে গেঁথে যায়।
মনোবিদদের মতে, স্বপ্নে আমরা কী দেখছি তার পুরোটা মনে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঘুম ভাঙার পরে গোটা স্বপ্নটি কী ছিল তা মনে করতে আমরা অস্থির হয়ে উঠি।
কেমন হত যদি পছন্দের স্বপ্ন ফিরে ফিরে দেখা যেত! অবাস্তব মনে হলেও এই ‘স্বপ্ন’ সত্যি হওয়ার পথে। অসাধ্যসাধনের পথে জাপানের বিজ্ঞানীরা।
জাপানের বিজ্ঞানীরা এমন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যাতে রেকর্ড করা সম্ভব মানুষের স্বপ্ন। দীর্ঘ গবেষণার পর তাঁরা তৈরি করেছেন এমন একটি যন্ত্র, যাতে ধরে রাখা যাবে স্বপ্ন। ভুলে গেলেও রেকর্ড হওয়া স্বপ্ন থেকে বুঝে নিতে পারবেন স্বপ্নে ঠিক কী দেখেছিলেন!
স্বপ্নগুলিকে যেন সিনেমার মতো দেখা যায়, সেই ব্যবস্থাও করেছেন জাপানি গবেষকেরা। নিরন্তর গবেষণার শেষে একটি যুগান্তকারী যন্ত্র তৈরি করেছেন, এমনটাই দাবি সে দেশের গবেষকদের।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি যন্ত্রটি মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবি তুলতে সক্ষম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে স্বপ্নের রহস্যময় এলাকায় প্রবেশ করতে পারে এই যন্ত্র। সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে স্বপ্ন তুলে আনতে সাহায্য করবে যন্ত্রটি।
জাপানের কিয়োটোতে অবস্থিত ‘এটিআর কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্স’-এর গবেষণাগারে এই সংক্রান্ত গবেষণা চালান বিশেষজ্ঞেরা। যেখানে তাঁরা ঘুমের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকাকালীন স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবিগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ৬০ শতাংশ নির্ভুল ভাবে স্বপ্নের বিষয়বস্তুগুলির ভবিষ্যদ্বাণী করতে সফল হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এটিআর কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্সের গবেষক অধ্যাপক ইউকিয়াসু কামিতানির দাবি, ঘুমের সময় মস্তিষ্ক যা কাজকর্ম চালায় তা থেকে স্বপ্নের বিষয়বস্তু বার করে তা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা।
অত্যাধুনিক অ্যালগরিদমগুলির সঙ্গে মস্তিষ্কের প্রতিচ্ছবিগুলিকে একত্র করে তার থেকে ভিডিয়ো তৈরির চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই ভিডিয়ো পরবর্তী কালে চালিয়ে দেখা যাবে ইচ্ছা মতো।
এই প্রযুক্তির সাহায্যে মস্তিষ্কের নানা ক্রিয়াকলাপকে ব্যবহার করে স্বপ্নের কিছু দিক উদ্ভাসিত হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
স্বপ্ন দেখার একটা বিশেষ পর্যায়ে মানুষ ঘুমের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় স্বপ্ন দেখার এই অবস্থার নাম ‘লুসিড ড্রিম’।
মনোবিদদের মতে, আমরা যখন স্বপ্ন দেখি, তখন আমরা ঘুমের বিশেষ একটি পর্যায়ে থাকি। যার নাম ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা আরইএম। এই সময়ে দেহ পুরোপুরি বিশ্রামে থাকে, কিন্তু মন ঘুরে বেড়ায় স্বপ্নের দেশে।
গবেষকদের দাবি, মস্তিষ্ক কতগুলি বিশেষ পথ ধরেই স্বপ্ন দেখায় মানুষকে। স্বপ্ন ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে।
স্নায়ুবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই অভিনব গবেষণা মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে সাহায্য করবে। অদূর ভবিষ্যতে এ বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণার ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে স্বপ্ন রেকর্ড করার যন্ত্র।
স্বপ্ন রেকর্ড করার যন্ত্রটি এখনও গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুনর্গঠিত স্বপ্নের ‘রেজ়োলিউশন’ আরও ভাল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন জাপানি বিজ্ঞানীরা। আপাতত যন্ত্রটিকে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে আরও উন্নত করতে সচেষ্ট তাঁরা।