সদ্য ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের মদ কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা। সেই সূত্র ধরে বাদ যাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গও। পড়শি দুই রাজ্যের পরে আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা এ বার সটান হাজির নদিয়ার কল্যাণীতে, মদ কারখানায়।
ঘটনার সূত্রপাত ওড়িশার মদ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘বৌধ ডিস্টিলারিজ়’-এর কারখানা চত্বর থেকে, যেখানে সম্প্রতি মিলেছে বিপুল পরিমাণে টাকা। ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নাম জড়িয়েছে কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ধীরজ সাহুর। এই ঘটনার সূত্র খুঁজতেই পশ্চিমবঙ্গের মদ কারখানাতেও আয়কর বিভাগের হানা।
আয়কর দফতরের ৬ জনের একটি দল সোমবার রাতে ‘অ্যালায়েড ব্লেন্ডার্স অ্যান্ড ডিস্টিলার্স লিমিটেড’ নামে ওই কারখানায় হানা দেয়। আয়কর দফতর সূত্রে খবর, ওড়িশার মদ কারখানায় নগদ উদ্ধারের সঙ্গে নদিয়ার আয়কর হানার যোগসূত্র রয়েছে।
আপাতত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা পুরো কারখানা ঘিরে রেখেছেন। কারখানার ভিতরের কোনও কর্মীকেই বাইরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ভেতরে প্রবেশেরও অনুমতি দেওয়া হয়নি কাউকে। সূত্রের খবর, মদ কারখানার ভিতরে থাকা আধিকারিক এবং কর্মীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আয়কর দফতরের তদন্তকারী আধিকারিকরা।
আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার কল্যাণীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই মদের কারখানায় অতর্কিতে হানা দেয় আয়কর দফতরের একটি দল। প্রথমে কারখানার ভিতরে থাকা নথি পরীক্ষা করে দেখেন আধিকারিকেরা।
একাধিক অসঙ্গতি মেলায় কর্মী এবং আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, এখনও সেই তল্লাশি অভিযান চলছে। এই মদ কারখানার সঙ্গে পড়শি রাজ্যের মদ কারখানা থেকে টাকা উদ্ধারের যোগ থাকতে পারে বলেও আয়কর সূত্রে খবর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে কল্যাণীর ওই মদের কারখানাটি তৈরি হয়েছিল। প্রথমে যে মালিক পক্ষ ছিল, তাঁরা দু’বছর পরে কারখানা বিক্রি করে দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে ‘অ্যালায়েড ব্লেন্ডার্স অ্যান্ড ডিস্টিলার্স লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা এই কারখানাটি চালাচ্ছে।
উল্লেখ্যযোগ্য যে, মদ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘বৌধ ডিস্টিলারিজ়’ থেকে টাকা উদ্ধারের পর ওড়িশায় এবং ঝাড়খণ্ডে হানা দেয় আয়কর দফতর। দু’রাজ্যে আয়কর হানায় রবিবার পর্যন্ত মোট ৩৫৩ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে আয়কর দফতর সূত্রে খবর। মনে করা হচ্ছে, দেশে এর আগে কোনও আয়কর হানায় একসঙ্গে এত কালো টাকা উদ্ধার হয়নি।
‘বৌধ ডিস্টিলারিজ়’ থেকে প্রথমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেই অর্থের উৎস সন্ধান করার সময় তদন্তকারীদের হাতে কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ ধীরজের নাম উঠে আসে।
তার পরই তাঁর বাড়িতে তল্লাশিতে যান আয়কর দফতরের আধিকারিকরা। শনিবার রাঁচীতে তাঁর বাড়ি-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। কংগ্রেস সাংসদের বাড়ি থেকে তিন ব্যাগ ভর্তি টাকা উদ্ধার হয়েছে।
এ ছাড়াও মদ কারখানার এক শীর্ষকর্তা বান্টি সাহুর বাড়ি থেকে টাকাভর্তি প্রায় ১৯টি ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে বলে আয়কর দফতর সূত্রে খবর। পড়শি রাজ্যে উদ্ধার হওয়া নগদ অর্থের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর মদ কারখানায় আয়কর হানার স্পষ্ট যোগ রয়েছে বলে আয়কর দফতর সূত্রে খবর।