ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলা সংঘাতে কি প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠনটির পক্ষ নিয়েছে চিন? ইজ়রায়েলের একটি তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য এই জল্পনা উস্কে দিয়েছে।
ইজ়রায়েলের দাবি, তাদের তদন্তে দেখা গিয়েছে, হামাসের হাতে এমন সব অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, যেগুলি চিনে তৈরি হয়েছে। সরাসরি চিন সেই অস্ত্র হামাসের হাতে তুলে দিয়েছে না কি, অস্ত্রের চোরাকারবারীদের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠনটির কাছে এসেছে, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
তবে অস্ত্রের পরিমাণ দেখে ইজ়রায়েলের সমর বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সরাসরি কোনও দেশের মাধ্যমেই সেগুলি প্যালেস্টাইনে ঢুকেছে। তবে অস্ত্রগুলি চিনে নির্মিত বলেই বেজিং এর নেপথ্যে রয়েছে, এখনই এমন কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে না ইজ়রায়েল।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দি টেলিগ্রাফ’-এর একটি প্রতিবেদনে ইজ়রায়েলের গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, চিনের সঙ্গে ‘মোটের উপর ভাল’ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও হামাসের হাতে চিনা অস্ত্র দেখে ভীষণ অবাক হয়েছে ইজ়রায়েল।
অস্ত্রের মান এবং ধরণ ব্যাখ্যা করে ইজ়রায়েলের তরফে বলা হয়েছে, সম্প্রতি হামাস এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে, বছর দু’য়েক আগেও যা চালনা করার ক্ষমতাও তাদের ছিল না।
তবে অন্য একটি সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখছে ইজ়রায়েল। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ইরান সরাসরি এই সংঘাতে হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আবার গত কয়েক বছরে ইরান-আমেরিকার মধ্যে ফাটল যত চওড়া হয়েছে, ততই তেহরানের কাছাকাছি এসেছে বেজিং।
সে ক্ষেত্রে চিন থেকে কেনা অস্ত্র ইরান হামাসের হাতে তুলে দিচ্ছে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে ইজ়রায়েলের। ইজ়রায়েল সঙ্কটে চিনের পরিবর্তিত কৌশলও মাথায় রাখতে চাইছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ।
চিন বরাবরই পশ্চিম এশিয়ায় শান্তির কথা বলে এসেছে। এই অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বের মাধ্যমে শান্তিস্থাপনের জন্যই তাদের যাবতীয় পদক্ষেপ, অতীতে এমনটাই জানিয়েছে বেজিং।
কিন্তু ইজ়রায়েল এবং হামাসের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বে চিনের অবস্থান গোলমেলে। তারা প্রথম দিকে প্যালেস্টাইনের পক্ষে কথা বললেও পরে সুর খানিক বদলেছে।
পশ্চিম এশিয়ায় চিনের প্রাথমিক লক্ষ্য, আরব দেশগুলির পাশাপাশি ইজ়রায়েলের স্বার্থও লালন করা। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারলেই ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসাবে চিনের স্বার্থও সুরক্ষিত হবে।
পশ্চিম এশিয়ায় তাদের সাধের প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী চিন। তাই আরব দেশগুলির বিরাগভাজন হওয়া জিনপিংয়ের কাম্য নয়। ইতিমধ্যে পশ্চিম এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলেছে চিন।
প্রথমে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্যালেস্টাইনি যোদ্ধাদের সমর্থন করে মিশর এবং অন্যান্য আরব দেশর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব প্যালেস্তাইন সমস্যার একটি ন্যায্য এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য চাপ তৈরি করতে হবে।’’
পরে অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দিয়ে চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই গাজ়ায় ইজ়রায়েল সেনার হামলাকে যেন সমর্থনই করে বসেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক দেশেরই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’’ তবে সেই সঙ্গেই তাঁর বার্তা, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলা উচিত। অসামরিক নাগরিকদের যাতে ক্ষতি না হয়, সে দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’
পশ্চিম এশিয়ায় কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে চিনের এই দোলাচল প্রকাশ্যে চলে এসেছিল আগেই। এই পরিস্থিতিতে চিন সরাসরি হামাসের পক্ষ নেবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ইজ়রায়েলেরও।
তবে ইজ়রায়েলের সাম্প্রতিক ওই তদন্তে এ-ও উঠে এসেছে যে, গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাস যখন অতর্কিতে হামলা চালায়, তখনও তাদের হাতে ছিল চিনে তৈরি হওয়া অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। আমেরিকার অস্ত্রে বলীয়ান ইজ়রায়েলকে শিক্ষা দিতে হামাস চিনের শরণাপন্ন হয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন চর্চা চলছে।