কেরিয়ারের প্রথম ছবিই সলমন খানের সঙ্গে। শুধু সলমন নন, মিঠুন চক্রবর্তী, শাহরুখ খান এবং অক্ষয় কুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজও করেছেন তিনি। দর্শকের মনে জায়গা করে নিলেও সেই তুলনায় অভিনয়জগতে কেরিয়ার গড়ে তুলতে পারেননি ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকের জেঠালাল।
জেঠালালের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দিলীপ জোশী। হিন্দি ধারাবাহিকের পরিচিত মুখ তিনি। দুর্দান্ত কমিক টাইমিংয়ের জন্য দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। কিন্তু দিলীপের কেরিয়ারে এমন সময় আসে, যখন তিনি মাত্র ৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন।
১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় সুরজ বরজাতিয়ার ছবি ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’। এই ছবিতে সলমন এবং ভাগ্যশ্রীর জুটি দর্শকের মনে দাগ কাটে। বক্স অফিস থেকেও বিপুল ব্যবসা করে রোম্যান্টিক ঘরানার এই হিন্দি ছবিটি।
‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিতে কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে প্রথম অভিনয় দিলীপের। বড় পর্দায় পা রাখলেও তার পাশাপাশি গুজরাতি নাটকে অভিনয় করতেন দিলীপ।
পাঁচ বছর পর আবার সলমনের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান দিলীপ। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে সলমন এবং মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে কাজ করেন দিলীপ। আবার কৌতুকাভিনেতার চরিত্রের জন্যই অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে।
‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিটিও বক্স অফিসে হিট হয়। পর পর দু’টি হিট ছবিতে অভিনয়ের পর দিলীপ ভাবেন যে, হিন্দি ফিল্মজগতে তিনি নিজের জায়গা এ বার নিশ্চিন্তে তৈরি করে নিতে পারবেন। অভিনেতা হিসাবে সফলও হয়ে যাবেন খুব দ্রুত। কিন্তু তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয় অচিরেই।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে দিলীপ জানান, তিনি যখন অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁর কাছে ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবির প্রস্তাব এসেছিল। দিলীপ বলেন, ‘‘১৯৯২ সালে আমার কন্যা নিয়তির জন্ম হয়। তখন প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল।’’
দিলীপ জানান, তাঁর সঞ্চয়ে সেই সময় মোট ২৫ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু কন্যার জন্মের পর হাসপাতালে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন দিলীপ।
বাবা হওয়ার সময় কোনও ছবিতে অভিনয় করতেন না দিলীপ। সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান, মাত্র একটি নাটকে অভিনয় করতেন তিনি। সেই নাটকে কাজ করে শো প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করতেন তিনি।
কন্যার জন্মের দু’বছর পর্যন্ত অর্থাভাবেই দিন কাটাতেন দিলীপ। তার পর সলমনের সঙ্গে দ্বিতীয় ছবিতে অভিনয়ের পর দিলীপ ভাবেন, এ বার হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি গড়বেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি। ছবি হিট হলেও কাজের সুযোগ পাননি দিলীপ।
বড় পর্দায় কাজের আশা ছেড়ে ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করেন দিলীপ। ১৯৯৫ সালে প্রথম হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় তাঁর। টেলিভিশনে পাঁচ বছর পর অভিনয় করার পর শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব পান তিনি।
২০০০ সালে ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’ ছবিতে শাহরুখ এবং জুহি চাওলার সঙ্গে অভিনয় করেন দিলীপ। এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন দিলীপ। ছবির শুটিংয়ের প্রথম দিন প্রযোজক নাজির আহমেদ নাকি দিলীপকে ভয় পেতে বারণ করেছিলেন।
নাজির বলেছিলেন, ‘‘শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করছ প্রথম বার। একদম ভয় পাবে না।’’ নাজিরের কথা শুনে অবশ্য অবাক হন দিলীপ। তিনি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘‘অকারণে ভয় পেতে যাব কেন? শাহরুখও অভিনেতা, আমিও অভিনেতা।’’
সলমন খানের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন দিলীপ। তিনি জানান, ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দিলীপ। ছবিতে কম সময়ের জন্য দেখানো হয়েছিল তাঁকে। দিলীপের দাবি, অধিকাংশ সময় ফ্লোরের একপাশে বসেই থাকতেন তিনি।
দিলীপ যে থিয়েটারে কাজ করতেন তা জানতে পারেন সলমন। তার পর অভিনয় সংক্রান্ত ছোটখাটো মতামত নিতে দিলীপের কাছেই নাকি যেতেন সলমন। সাক্ষাৎকারে দিলীপ বলেন, ‘‘শট দেওয়ার পর সলমন মাঝেমধ্যে আমার কাছে আসতেন। শট ঠিকঠাক হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নও করতেন আমাকে।’’
সলমন এবং শাহরুখের সঙ্গে অভিনয়ের পর ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খিলাড়ি ৪২০’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় দিলীপকে। তার আট বছর পর মিঠুন চক্রবর্তীর মতো তারকার সঙ্গে ‘ডন মুথুস্বামী’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
কিন্তু বড় পর্দায় নামী তারকাদের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিলেও বলিজগতে নিজের কেরিয়ার গড়তে পারেননি দিলীপ। অভিনেতার দাবি, তাঁর দক্ষতা অনুযায়ী কাজের প্রস্তাব পাননি। ২০০৮ সালে ‘তরক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকে জেঠালাল চরিত্রে অভিনয় করে নিজের কেরিয়ারে নতুন মাইলফলক গড়ে তোলেন তিনি।