সুযোগ এসেছিল ১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের। সুযোগ এসেছিল ২০ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের রাতের প্রতিশোধ নেওয়ার। কত রোমাঞ্চ, কত আবেগ-উৎকণ্ঠা ছিল এই ম্যাচকে ঘিরে। কিন্তু এ বারও সেই স্বপ্নভঙ্গ!
রবিবার গুজরাতের আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ২০ বছর আগের সেই রাতের স্মৃতিই ভারতবাসীকে ফিরিয়ে দিলেন অজ়িরা। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের দুরমুশ করে ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জিতে নিলেন তাঁরা।
২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ঠিক যা ঘটেছিল, ২০ বছর ব্যবধানে সেই দৃশ্যপট ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ২০০৩ সালে ১০টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। এ বার ভারতও ১০টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে ‘ফেভারিট’ হিসাবেই ভারত ফাইনালে উঠেছিল। সেই যাত্রা শুরুও হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে।
কিন্তু ফলাফলে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— সব ক্ষেত্রেই অজ়ি বাহিনীর কাছে হার মানল রাহুল দ্রাবিড়ের বাহিনী। ট্রেভিস হেডের শতরানে ভর করে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৬ উইকেটে।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ২৪০ রান তোলে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার সামনে তারা ২৪১ রানের লক্ষ্য রাখে। বিশ্বকাপে এই প্রথম বার অল আউট হল ভারতীয় দল। তাড়া করতে নেমে মাত্র চার উইকেট হারিয়ে ৪৩ ওভারের মধ্যেই সেই রান তুলে নেন অজ়িরা।
টস জিতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স আগে বল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। ঠিক যে ভাবে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে টসে জিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আগে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ সকলকে ভুল প্রমাণিত করলেন কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা।
এই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে রোহিত যে ভাবে খেলে এসেছেন, ফাইনালে শুরুতা তেমনই ছিল। নেমেই দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন ভারতের অধিনায়ক। কিন্তু আবারও বড় শট খেলতে গিয়েই আউট হন। ৩১ বলে ৪৭ রান করে ফিরতে হয় ডানহাতি ব্যাটারকে। রোহিতের ঝুলিতে চারটি চার এবং তিনটি ছয় ছিল। তাঁকে এই ম্যাচের জন্য ১০-এর মধ্যে ৬ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
ব্যাট করতে নেমে ভারত অবশ্য শুরুতেই ধাক্কা খায়। মাত্র চার রান করেই ফিরে যেতে হয়েছিল শুভমন গিলকে। তাঁকে ১০-এ ২ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
গিল আউট হওয়ার পর রোহিত এবং কোহলিই হাল ধরেন। ভাল এগোচ্ছিলেনও তাঁরা। কিন্তু রোহিত প্যাভিলিয়নে ফিরতেই খানিক গুটিয়ে যায় ভারত। বিরাট এবং লোকেশ রাহুল অবস্থা বুঝে সিঙ্গলস নিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তুলতে শুরু করেন। অর্ধশতরানও করেন কোহলি। রাহুল ও বিরাটের জুটিকে দেখে মনেও হচ্ছিল, বড় রানের দিকেই এগোচ্ছে ভারত। কিন্তু ৫৪ রানেই ফিরে যেতে হয় কোহলিকে। কামিন্সের বল বিরাটের ব্যাটে লেগে উইকেট ভেঙে দেয়। এই ম্যাচে তাঁকে ১০-এ ৭ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
বিরাটের পর নেমেছিলেন শ্রেয়স আয়ার। এই বিশ্বকাপে বিরাট, রোহিতের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পাশাপাশি শ্রেয়সকে নিয়েও বিস্তর চর্চা হয়েছে। বিশেষ করে নিউ জ়িল্যান্ড ম্যাচের পর। ফাইনালেও কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি হাল ধরবেন বলেই মনে করা হচ্ছিল। মাত্র চার রান করে আউট হয়ে যান তিনি। শ্রেয়স থাকলে আরও কিছু রান বেশি হতে পারত বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁকে ২ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
ক্রিজ়ে অনেক ক্ষণ টিকে থেকে ভারতকে সম্মানজনক রানে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন রাহুল। বিরাট আউট হওয়ার পর তাঁকে ঘিরে যাবতীয় ভরসা ছিল ভারতবাসীর মনে। রাহুল খেলছিলেনও ধরে ধরে। কিন্তু ১০৭ বলে মাত্র ৬৬ রান করেই আউট হন তিনি। তাঁকে ১০-এ ৭ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
ভারতের আশা ছিল সূর্যকুমার যাদবের উপরও। আইপিএলে ঝোড়ো ইনিংস খেলা সূর্য যদি শেষবেলায় দ্রুত ৫০ রানও করে দিতে পারতেন, তা হলে বোলারদের হাতে আরও কিছু রান বেশি থাকত। কিন্তু সূর্য পারলেন না। স্লগ ওভারে মাত্র ১৮ রান করেন ২৮টি বল খেলে। তাঁকে ১০-এ ৩ নম্বর দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাটারেরা ফাইনালে সে ভাবে নজর কাড়তে ব্যর্থ হওয়ায় বোলারদের উপরেই ভরসা ছিল। গোটা প্রতিযোগিতায় যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা যে দাপট দেখিয়েছিলেন, তা কার্যত উধাও হয়ে গেল ফাইনালে। শামি ছ’ম্যাচে ২৩টি উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু ফাইনালে প্রথম ওভার থেকেই তাঁর লাইন, লেংথ ঘেঁটে গেল। নতুন বলে বল করছিলেন তিনি। একটি উইকেট নিলেও শামি চাপ তৈরি করতে পারছিলেন না। সাত ওভারে ৪৭ রান দিয়েছেন তিনি। তাঁকে ৩ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রথম ওভারে ১৫ রান দিলেও একটু একটু করে অজ়িদের উপর চার সৃষ্টি করছিলেন বুমরা। পঞ্চম ওভারে মিচেল মার্শ এবং সপ্তম ওভারে স্মিথকে আউট করেন তিনি। তাঁকে ৫ নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।
রবীন্দ্র জাডেজা, কুলদীপ যাদব এবং মহম্মদ সিরাজ কোনও ভাবেই চাপ তৈরি করতে পারেননি অজ়ি ব্যাটারদের উপর। তিন উইকেট হওয়ার পরেই ট্রেভিস হেড এবং লাবুশেন জুটি তাঁদের সামনে দেওয়াল তুলে দেন। জাদেজা ব্যাট হাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। বিরাট আউট হওয়ার পর তাঁকেই পাঠানো হয়েছিল ভারতের স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ২২ বলে মাত্র ৯ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।
জাদেজা, কুলদীপ এবং সিরাজ এই তিন জনকেই ১০-এ ২ করে নম্বর দিচ্ছে আনন্দবাজার অনলাইন।