২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার আক্রমণে পিছু হটেনি ইউক্রেন। আঘাত, পাল্টা আঘাতের সেই সংঘাতের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি হয়েছে। সংঘাতের অভিঘাতও অনেকটাই কমেছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বাধলেও, তা আলোচনার বস্তু হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর বাকি দেশগুলির কাছে। রাষ্ট্রপুঞ্জেও সেই যুদ্ধ নিয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে। প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে পরোক্ষ ভাবে দু’দেশকেই সমর্থন করেছে অনেক দেশ।
তবে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘাত এখন শুধু ওই দু’দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তা এখন দু’দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে আফ্রিকার এক দেশে।
আফ্রিকার সেই দেশটির নাম সুদান। সুদানে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে ইউক্রেনের সেনা।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘নিজস্ব বাহিনী’ হিসাবে পরিচিত ওয়াগনার গোষ্ঠী সমর্থিত বিদ্রোহী বাহিনীকে ঠেকাতে সুদানের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন।
বার বার অভিযোগ উঠেছে, আফ্রিকার দেশগুলিতে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে ওয়াগনার গোষ্ঠীর মতো সশস্ত্র সংগঠনকে সেই দেশগুলিতে রেখেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশগুলির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করার এবং প্রাকৃতিক সম্পদ চুরির অভিযোগও উঠেছে বার বার।
সুদানের সবচেয়ে দামি প্রাকৃতিক সম্পদ সোনা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সম্পদই লুট করছে তারা। সেই সোনার টাকাই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার সেই পরিকল্পনা বানচাল করতেই নাকি এবার সুদানের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদানে ওয়াগনার সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানও চালিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ দাবি করেছে, ২০২৩ সালে দেশের বিদ্রোহীদের দমন করতে ইউক্রেনের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন সুদানের ডি ফ্যাক্টো শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ্ আল-বুরহান।
২০২৩-এর এপ্রিলে, আফ্রিকার ওই দেশে আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং বুরহানের সামরিক সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর থেকেই সুদান চুপিচুপি কিভকে অস্ত্র সরবরাহ করছিল বলেও ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী,,বিদ্রোহীদের দমনে এ বার সুদানকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের সেনা ২০২৩-এর অগস্টের মাঝামাঝি সুদানে এসেছিল। খার্তুম থেকে বিদ্রোহী বাহিনীকে পরাস্ত্র করার যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, বিদ্রোহী দমনে বুরহানের রক্ষীদের হাতে নতুন অস্ত্রও তুলে দিয়েছে ইউক্রেন।
যদিও সুদানের গৃহযুদ্ধে যোগ থাকার কথা অস্বীকার করেছে কিভ। ইউক্রেনের ‘বন্ধু’ আমেরিকা, সুদানের সরকার এবং বিদ্রোহী— উভয়ের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছে। তাদের সামরিক সহায়তা বন্ধ করার আহ্বানও জানিয়েছে আমেরিকা।
তাই এখন যদি সুদানের যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, তা হলে আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। আর সেই কারণেই সুদানের যুদ্ধে তাদের যোগের কথা ইউক্রেন অস্বীকার করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
বিভিন্ন সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং বুরহান আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরে একটি ‘অপরিকল্পিত বৈঠক’ করেছিলেন।
সূত্রের এ-ও খবর, সেই বৈঠকে সুদানের নিরাপত্তা সমস্যা এবং রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহী দলগুলিকে নিয়ে আলোচনা হয় দু’পক্ষের। এর পরেই ইউক্রেন সে দেশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।