দুর্ঘটনার তিন দিন পর অবশেষে পুলিশের জালে গ্রেফতার মুম্বইয়ের ঘাটকোপর বিলবোর্ডকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভাবেশ ভিন্ডে। তিন দিনের টানা অভিযানের পর রাজস্থানের উদয়পুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
কিন্তু এই তিন দিন কী ভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেড়িয়েছিলেন ভাবেশ? কী ভাবেই বা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল?
যে সংস্থা অবৈধ বিলবোর্ডটি ঘাটকোপরের ওই জায়গায় লাগিয়েছিল, তারই মালিক ভাবেশ। ভাবেশ একটি হোর্ডিং সংস্থার মালিক। একটি বিজ্ঞাপন সংস্থাও রয়েছে তাঁর।
দুর্ঘটনার পরে পরেই ভাবেশ আঁচ করেন, পুলিশ যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে গ্রেফতার করতে আসতে পারে। সেই বুঝেই আটঘাট বেঁধে গা ঢাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেন তিনি।
মুম্বই থেকে বেরিয়ে বার বার নিজের আস্তানা বদলাতে থাকেন ভাবেশ। গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে হোটেলে থাকছিলেন ভুয়ো পরিচয়ে।
অন্য দিকে, ভাবেশকে খুঁজে বার করতে তত ক্ষণে উঠে পড়ে লেগেছে মুম্বই পুলিশ। তাঁকে খুঁজে বার করতে আটটি দল মোতায়েন করা হয়। তবে প্রতি বার পুলিশ তাঁর কাছে পৌঁছনোর আগেই শহরে বদলে ফেলছিলেন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচতে ভাবেশ প্রথমে লোনাভলায় পালিয়ে যান। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পরদিন আবার মুম্বই ফিরে আসেন। তবে পুলিশি তৎপরতা বুঝে মুম্বই থেকে ঠাণে চলে যান।
ঠাণেতেও বেশি ক্ষণ থাকেননি ভাবেশ। ঠাণে থেকে বিমানে চেপে গুজরাতের আমদাবাদ পালিয়ে যান। সেখানে একটি হোটেলে রাত্রিবাস করে চলে যান উদয়পুরে।
নাম ভাঁড়িয়ে উদয়পুরের একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন ভাবেশ। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতে খোঁজ চালিয়ে পুলিশের একটি দলও তাঁর পিছু পিছু রাজস্থান পৌঁছয়। সেখানেই অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
ভাবেশকে ধরতে মুম্বই পুলিশের অভিযান এতটাই সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছিল যে, উদয়পুর পুলিশকেও অভিযান প্রসঙ্গে কিছু জানানো হয়নি।
মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, প্রযুক্তি এবং মানুষের মেধাকে একসঙ্গে কাজে লাগিয়েই ভাবেশকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। ধৃতকে ইতিমধ্যেই উদয়পুর থেকে মুম্বই আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ হঠাৎই আকাশ কালো করে ঝড় উঠেছিল মুম্বইয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় ঘণ্টায় ৬০ কিমি বেগে ধুলোঝড়। সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টিও।
ঝড়ের ধাক্কায় ঘাটকোপর এলাকায় উপড়ে যায় বিজ্ঞাপনের বিশালাকার ধাতব বোর্ডটি। ভেঙে পড়া বিলবোর্ডটির ওজন ছিল প্রায় ২৫০ টন (প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি)।
সেই বিলবোর্ডের নীচে চাপা পড়েন অনেকেই। ঘটনাস্থলের যে সমস্ত ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে, তাতে দেখা যায়, বিজ্ঞাপনী বোর্ডটি ভেঙে পড়ছে একটি পেট্রল পাম্পের উপর। যার আঘাতে দুমড়ে গিয়ে নীচে নেমে আসে পেট্রল পাম্পের ছাদ। চাপা পড়ে পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু গাড়িও। বিলবোর্ডের ধাতব কাঠামো বহু গাড়ির ছাদ ফুঁড়ে ঢুকে যায়। সেই ঘটনাতেই এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ৭৫।
স্থানীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, ঝড়বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন পেট্রল পাম্পে। কেউ কেউ এসেছিলেন তেল ভরাতে। আর সেই সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে।
সোমবার ঘাটকোপারে যে বিলবোর্ডটি ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছিল, তার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ছিল ১২০ ফুট করে। অথচ, মুম্বই শহর এলাকায় ৪০ ফুটের বেশি লম্বা বা চওড়া কোনও বিলবোর্ডে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা নয় পুরসভার। দেখা যায়, নিয়ম না মেনে ভবেশের সংস্থা বিলবোর্ডটি ওই জায়গায় লাগিয়েছিল। ‘ইগো মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক একটি সংস্থার মালিক ভাবেশ। ধসে পড়া বিলবোর্ডটি ওই সংস্থার তরফেই লাগানো হয়েছিল।
অভিযোগ, ভারতীয় রেলওয়ে এবং বৃহন্মুম্বই পুরসভা থেকে বহু বছর ধরে বিলবোর্ড এবং ব্যানার বসানোর চুক্তি পেয়ে এসেছেন তিনি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
পুলিশের মতে, ভাবেশের ‘কীর্তি’র শেষ নেই। ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই বছরের জানুয়ারিতে মুলুন্ড থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে নাকি মোট ২৩টি মামলা রয়েছে। তবে সোমবারের ঘটনার পর তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলাও রুজু হয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে মুলুন্ড কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনও লড়েছিলেন ভাবেশ। তবে হেরে যান।