সে রাজপাটও গিয়েছে, সে রাজাও আর নেই! পুরনো দিনের সে সব রাজারাজড়ারা গল্পকথা হয়ে ইতিহাসের পাতাতেই ঠাঁই নিয়েছেন। তবে ব্রুনেইয়ের সুলতানের ক্ষেত্রে সে কথা খাটে কি? তাঁর ধনসম্পত্তির পরিমাণ বা বিলাসবহুল জীবনের কথা শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হবে।
পোশাকি নাম, তৃতীয় হাসানঅল বোকাইয়া ইবনি ওমর আলি সইফউদ্দিন। তবে গোটা দুনিয়া তাঁকে হাসানঅল বোকাইয়া নামেই চেনে। মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ চিন সাগরে ঘেরা বোর্নিয়ো দ্বীপের ছোট্ট দেশ ব্রুনেইয়ের সুলতান। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি একাধিক মন্ত্রকের সর্বেসর্বাও তিনি।
নিজের দেশে তিনিই রাজা। ব্রুনেইয়ের সুলতানের সম্পর্কে এ কথাটি আক্ষরিক অর্থেই খাঁটি। ইসলামিক রীতি মেনে সুলতান হওয়ার পাশাবাশি তিনি ব্রুনেইয়ের প্রধানমন্ত্রীও। সঙ্গে অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্য মন্ত্রকেরও রাশ নিজের কাছে রেখেছেন। এক দিকে পুলিশ সুপার হিসাবেও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। আবার সশস্ত্র বাহিনীরও প্রধান তিনিই।
সোনার কাঠি নিয়েই জন্মেছিলেন হাসানঅল বোকাইয়া। দুনিয়ার ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন। এই সে দিন পর্যন্ত তিনি ধনীতম ব্যক্তির তকমা দখল করে বসেছিলেন। তবে ইদানীং তাঁকে পিছনে ঠেলে শীর্ষে উঠে এসেছেন জনৈক এলন রিভ মাস্ক। টেলসা-র প্রতিষ্ঠাতা মাস্কের ঝুলিতে রয়েছে ২৪ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার।
ধনসম্পত্তির নিরিখে এলন মাস্কের থেকে পিছিয়ে পড়লেও কম বিলাসী নন হাসানঅল বোকাইয়া। ১৯৬৭ সালে ব্রুনেইয়ের সুলতানের গদিতে বসার পর থেকে তাঁর ধনসম্পত্তিও পরিমাণও কিছু কম নয়। ভারতীয় মুদ্রায় তা ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের সন্তান হওয়ার দৌলতে সোনার কাঠি মুখে নিয়েই জন্মেছিলেন বোকাইয়া। ১৫ জুলাই ১৯৪৬ সালে। তবে বাবা তৃতীয় সুলতান ওমর আলি সইফউদ্দিনের ১০ সন্তানের মধ্যে তাঁকেই রাজ্যপাট চালানোর জন্য বেছে নিয়েছেন। সেই থেকে এই ৭৫ বছর বয়সেও রাজ্যপাট সামলে চলেছেন বোকাইয়া।
ব্রুনেইয়ের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগে নিজেদের প্রাসাদেই প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষার পাঠ প়ড়ানো হয়েছিল সুলতানকে। পরে অবশ্য উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন যোগদান করেন তিনি। এর পর ইংল্যান্ডের রয়্যাল অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রথাগত পড়াশোনার পালা চুকিয়ে বিয়েও সেরে ফেলেন। তবে একটি নয়, তিনটি! ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি পাঁচটি পুত্রসন্তান এবং সাতটি কন্যাসন্তানের জনক বলে শোনা যায়।
দুনিয়ার সুলতানদের মধ্যেও প্রথম সারিতে রয়েছেন ব্রুনেইয়ের সুলতান। পৈত্রিক সূত্রে ধনপ্রাপ্তির পাশাপাশি তাঁর সে দেশের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভান্ডারগুলি থেকে মুনাফাও জুড়েছে তাঁর সম্পত্তিতে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিশ্বের ধনীতম। সে সময় তাঁর নিট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তবে আজকাল ব্রুনেইয়ের সুলতানকে মাত দিচ্ছেন এলন মাস্ক।
তেল উৎপাদনের নিরিখে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং তাইল্যান্ডের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পঞ্চম দেশ হল ব্রুনেই। অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির বিপুল অর্থও জমা পড়ছে সুলতানের কোষাগারে।
ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পাশাপাশি তা খরচ করাতেও কম উৎসাহী নন ব্রুনেইয়ের ৯২তম সুলতান। হটকারস রিপোর্ট নামে একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, তাঁর ১১০টি গ্যারাজে রয়েছে প্রায় সাত হাজার গাড়ি। তার মধ্যে ৫০০টি রোলস রয়েস এবং ৩০০টি ফেরারি। সব মিলিয়ে যার মূল্য ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট। রয়েছে সোনায় মোড়া বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বা এয়ারবাস এ৩৪০-২০০ জেটও।
ব্রুনেইয়ের সুলতানের প্রাসাদও কম জমকালো নয়। ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার ওই প্রাসাদের রয়েছে ১ হাজার ৭০০টি ঘর। ২৫৭টি বাথরুম। সঙ্গে পাঁচটি সুইমিং পুল। পাশাপাশি, ১১০টি গ্যারাজ এবং ২০০টি ঘোড়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আস্তাবলও জুড়ে নিন।
এ হেন বিলাসী সুলতান ফি মাসে অন্তত এক বার তাঁর চুলে ছাঁট দেন। তিন থেকে চার সপ্তাহ অন্তত তাঁর চুলের কায়দা ঠিক রাখতে খরচ পড়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। এ দাবি করেছে টাইমস পত্রিকা। লন্ডন থেকে উড়ে আসেন তাঁর হেয়ারড্রেসার। তাঁকে প্রথম শ্রেণির বিমানভাড়ার ১২ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ লক্ষ ৯৬ হাজার ২১২ টাকা)-রও জোগান দেন সুলতান।