Gyanvapi Mosque

জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের ‘শিবলিঙ্গের’ বয়স কি সত্যিই জানা যেত ‘কার্বন ডেটিং’ পরীক্ষায়?

কোনও শিলাখণ্ডের বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে মূলত জীবাশ্ম বা দেহাবশেষের বয়স নির্ধারণ করা হয়।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
বারাণসী শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ১৭:১০
Share:
০১ ১৫

বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে তথাকথিত শিবলিঙ্গের কার্বন ডেটিং করা যাবে না। এমনই জানিয়েছে বারাণসী জেলা আদালত। মসজিদ চত্বরে ওজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে তার বয়স জানার জন্য ‘কার্বন ডেটিং’ পরীক্ষার যে আবেদন জানানো হয়েছিল, শুক্রবার সিনিয়র বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেশ তা খারিজ করে বলেছেন, ‘‘শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য জ্ঞানবাপী চত্বরে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ করা যাবে না।’’

০২ ১৫

গত ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পায় বারাণসী জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয় গত ২২ সেপ্টেম্বর।

Advertisement
০৩ ১৫

শুক্রবার হিন্দুপক্ষের কার্বন ডেটিং করে শিলার বয়স জানার আবেদন খারিজ করে দিল জেলা আদালত। কিন্তু কেন খারিজ হয়ে গেল কার্বন ডেটিং করে বয়স জানার আবেদন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে বিজ্ঞান।

০৪ ১৫

কোনও শিলাখণ্ডের বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে সংশয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে মূলত জীবাশ্ম বা দেহাবশেষের বয়স নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শিলার বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব কি?

০৫ ১৫

পরিবেশে কার্বনের সবচেয়ে বেশি যে আইসোটোপ পাওয়া যায় তা হল কার্বন-১২। সেই সঙ্গে খুব অল্প পরিমাণ কার্বন-১৪-ও পাওয়া যায়। পরিবেশে এই দুই আইসোটোপের অনুপাত প্রায় স্থির।

০৬ ১৫

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ থেকে এই দুই ধরনের কার্বন আইসোটোপই গ্রহণ এবং ত্যাগ করে প্রাণী বা উদ্ভিদ। মৃত্যুর পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। কার্বন-১২ আইসোটোপের ক্ষয় হয় না। কিন্তু কার্বন-১৪ আইসোটোপ তেজস্ক্রিয়। ৫,৭৩০ বছর পরে কার্বন-১৪-এর পরিমাণ অর্ধেক হয়ে যায়। একেই বিজ্ঞানীরা বলেন ‘হাফ লাইফ’।

০৭ ১৫

ফলে প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরে কার্বনের এই দুই আইসোটোপের অনুপাত বদলায়। কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে সেই পরিবর্তনের হিসেব করে ওই প্রাণী বা উদ্ভিদের মৃত্যুর আনুমানিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। কিন্তু শিলার মতো বস্তুর ক্ষেত্রে এ ভাবে বয়স নির্ধারণ কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৮ ১৫

যে মামলার এই রায়, তার নাম জ্ঞানবাপী মসজিদ-শৃঙ্গার গৌরীস্থল মামলা। ২০২১ সালে দায়ের হওয়া এই মামলার দাবি, জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল হিন্দুদের প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর। জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানা এবং তহখানা চত্বর, যেখানে নমাজ পড়ার আগে হাত-মুখে ধুয়ে নেন প্রার্থনা করতে আসা মানুষজন, তার মাটিতে শিবলিঙ্গ রয়েছে বলেও দাবি করা হয় মামলায়। বস্তুত সেই স্থলে পুজো-অর্চনার অনুমতি চেয়েই আদালতে যান পাঁচ হিন্দু মহিলা।

০৯ ১৫

সংঘাতের বীজ বপন হয়েছিল আনুমানিক ১১৯৪ সালেই, মসজিদ সংক্রান্ত একটি ইতিহাস অন্তত তেমনই বলছে। এই ইতিহাস এ-কথাও বলছে যে, এখন যেখানে জ্ঞানবাপী মসজিদ, সেখানে বহু পুরনো হিন্দু মন্দির ছিল। কিন্তু ইরান থেকে সুলতানি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ঘোরীর বাহিনী যখন রাজা জয়চন্দ্রকে পরাজিত করে কনৌজের দখল নিলেন, তখন সেই মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়। মন্দিরের সেই ধ্বংসাবশেষের উপরেই তৈরি হয়েছিল রাজিয়া মসজিদ। এর পর নাকি বহু বার মন্দির ভেঙে মসজিদ, মসজিদ ভেঙে মন্দির হয়েছে জ্ঞানবাপীতে।

১০ ১৫

ইতিহাসবিদদের একাংশ বলছেন, দ্বাদশ শতকে সুলতান ইলতুৎমিসের সময়ে এক গুজরাতি ব্যবসায়ী আবার মন্দির তৈরি করেছিলেন এই স্থানে। যা আবার চতুর্দশ শতকে ভেঙে ফেলেন কোনও এক মুসলিম শাসক। তিনি হুসেন শাহ সারকি হতে পারেন। আবার সিকন্দর লোধিও হতে পারেন। আকবরের জমানায় রাজা মান সিংহ নাকি আবারও মন্দির বানিয়েছিলেন জ্ঞানবাপীর এই চত্বরে, যা অওরঙ্গজেবের হাতে আবার ধ্বংস হয়।

১১ ১৫

জ্ঞানবাপীর ওই চত্বরে মন্দির থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় অওরঙ্গজেবের সময়কার এক ইতিহাসবিদের লেখা পুঁথিতে। ‘মা আশয়ের আলম গিরি’ নামে অওরঙ্গজেব জমানার বর্ণনা-সমৃদ্ধ একটি বইতে ওই ইতিহাসবিদ লিখেছিলেন, এখন যেখানে জ্ঞানবাপী মসজিদ, সেখানে ষোড়শ শতকে হিন্দুদের মন্দির ছিল।

১২ ১৫

ব্রিটিশ জমানাতে যখন জ্ঞানবাপীর জমিতে মন্দির গড়ার দাবি ওঠে এবং ১৯৩৭ সালে বারাণসীর আদালত জ্ঞানবাপীতে নমাজের অধিকার বজায় রাখে, তখন সেই বইয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন বারাণসীর এক শিক্ষাবিদ প্রফেসর পরমাত্মা স্মরণ।

১৩ ১৫

১৯৯১-এ সোমনাথ ব্যাস এবং রামরঙ্গ শর্মা নামে দুই আবেদনকারীও জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দুদের অধিকারের দাবিতে একটি মামলা করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ১৯৯১-এর ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন অনুযায়ী জ্ঞানবাপী মসজিদ আবেদনকারী পক্ষকে (হিন্দু) দেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে বর্তমান বন্দোবস্তই বহাল থাকবে। যদিও হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু জৈন এবং হরিশঙ্কর জৈনও পাল্টা দাবি করেন, ১৯৯১ সালের ওই আইন জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি আদালতকে জানান, ১৯৪৭ সালের পরেও শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পূজার্চনার প্রমাণ রয়েছে।

১৪ ১৫

১৯৯৮ সালে এই মামলাগুলির উপর স্থগিতাদেশ জারি হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টে অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনের উল্লেখ করে বলেন, সিভিল কোর্টে এই মামলার সমাধান সম্ভব নয়। এর পরই মামলার শুনানিতে স্থগিতাদেশ জারি করে হাই কোর্ট।

১৫ ১৫

এর পর কিছু দিনের জন্য থিতিয়ে গিয়েছিল জ্ঞানবাপী মামলা সংক্রান্ত আলোচনা। ২০১৯ সালে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের করিডোরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে আগুনে ঘি পড়ে। অক্টোবরে ওই করিডোর তৈরির জন্য মসজিদ চত্বরের একটি চবুতরখানা ভেঙে দেওয়া হয়। তাতেই ওই এলাকায় দুই ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর দু’বছরের মাথায় ২০২১-এর ১৮ এপ্রিল মামলা করেন পাঁচ হিন্দু মহিলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement