Lakshadweep Tourism

মলদ্বীপ ছেড়ে লক্ষদ্বীপে ঘুরতে গেলে গভীর এক সমস্যার মুখে পড়তে পারেন পর্যটকেরা! কী সেই সমস্যা?

লক্ষদ্বীপ ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি হলেও এর মধ্যে কাভারত্তি, আগত্তি, বাঙ্গারাম, কদমত এবং মিনিকয়—এই পাঁচটি দ্বীপেই ভ্রমণ করার অনুমতি রয়েছে পর্যটকদের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪৪
Share:
০১ ২৭

ভারতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে বিপদ বেড়েছে মলদ্বীপের। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট যে দ্বীপরাষ্ট্র এত দিন ভারতীয়দের ভ্রমণের স্বপ্নরাজ্য ছিল, সেই মলদ্বীপকে বয়কটের ডাকও দিচ্ছেন ভারতীয়েরা।

০২ ২৭

‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর আওয়াজ তুলেছেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে ক্রিকেট মহলের তাবড় তারকারা। যে তারকারা ছুটি কাটাতে মলদ্বীপে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতেন, তাঁরাও মলদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মলদ্বীপ না গিয়ে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগুলিতে ছুটি কাটানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement
০৩ ২৭

এই আবহে ভারতবাসীর নজর এখন দেশের যে পর্যটনস্থলের দিকে, তা হল লক্ষদ্বীপ।

০৪ ২৭

লক্ষদ্বীপ। ভারতের ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি হয়েছে ৩৬টি আলাদা আলাদা দ্বীপ নিয়ে। মোট আয়তন ৩২ বর্গ কিলোমিটার।

০৫ ২৭

এত দিন সেই জায়গা সম্বন্ধে সকলের কমবেশি জানা থাকলেও, বছরে খুব কম ভারতীয়েরই পা পড়ত সেখানে। তবে এ বার লক্ষদ্বীপকে ঢেলে সাজাতে উদ্যত হয়েছে ভারত সরকার।

০৬ ২৭

ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির নির্জন সৈকত এবং প্রচুর প্রবাল— লক্ষদ্বীপ এবং মলদ্বীপের মধ্যে মিল প্রচুর। লক্ষদ্বীপের পুরনো সৈকতগুলি সাদা বালি এবং স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জলের জন্য বিখ্যাত।

০৭ ২৭

কিন্তু তবুও বিলাসবহুল ভ্রমণের উদ্দেশে ভারতীয়দের বেশি ভিড় জমে মলদ্বীপে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ ভারতীয় মলদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেই রীতিই পাল্টাতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মলদ্বীপের বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে চলেছে কেন্দ্রশাসিত লক্ষদ্বীপ।

০৮ ২৭

তবে শত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের কাছে মলদ্বীপের বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে গেলে লক্ষদ্বীপ কাটিয়ে উঠতে হবে এক গভীর সমস্যা। সেই সমস্যা যে-সে সমস্যা নয়, একেবারে জীবন-মরণ সমস্যা। আর তা হল জলের সমস্যা।

০৯ ২৭

লক্ষদ্বীপে ক্রমেই ‘দুষ্প্রাপ্য’ হয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও দিনে দিনে কমছে। উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে লক্ষদ্বীপের বাসিন্দাদের।

১০ ২৭

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে জলের সমস্যা নিয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে ২০১৮ সালে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের (এনজিটি) দরজায় কড়া নাড়িয়েছিল লক্ষদ্বীপের বাসিন্দারা।

১১ ২৭

লক্ষদ্বীপ ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি হলেও এর মধ্যে কাভারত্তি, আগত্তি, বাঙ্গারাম, কদমত এবং মিনিকয়— এই পাঁচটি দ্বীপেই ভ্রমণ করার অনুমতি রয়েছে পর্যটকদের। লক্ষদ্বীপের দ্বীপগুলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বহু আদিবাসী উপজাতিদের বাস। তাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখেই সব দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।

১২ ২৭

সেই কাভারত্তি দ্বীপের বাসিন্দাদের চিঠি বিবেচনা করার পরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল কর্তৃপক্ষকে (সিজিডব্লিউএ) তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। লক্ষদ্বীপের জলসমস্যা আদালত পর্যন্ত যায়।

১৩ ২৭

কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয় যে, তড়িঘড়ি জলের ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করলে ভূগর্ভস্থ মিঠে জল লক্ষদ্বীপ থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

১৪ ২৭

এর পরে কাভারত্তি দ্বীপে জল শোধনাগার তৈরি করে প্রশাসন। তার পর থেকে লক্ষদ্বীপের জলের সমস্যা বেশ কিছুটা কমেছে। তবে তা একেবারে কমেনি।

১৫ ২৭

সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লক্ষদ্বীপের সমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্নর্কেলিং (এক ধরনের জলক্রীড়া) করা, সাদা বালির উপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার দিনই ৫০ হাজার মানুষ লক্ষদ্বীপ নিয়ে গুগ্‌লে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে চলতি বছর থেকে ভিড় আরও বাড়বে লক্ষদ্বীপের সমুদ্রসৈকতে।

১৬ ২৭

লক্ষদ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে, জলের সমস্যা আবার ফিরবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৭ ২৭

লক্ষদ্বীপের জলসমস্যা দূর করতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে ভারতের এক বন্ধু দেশ। যে দেশের ‘ক্রীড়নক’ বলে মলদ্বীপের নিলম্বিত এক মন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করেছিলেন, সেই ইজ়রায়েল হাত বাড়িয়েছে লক্ষদ্বীপের উন্নতি সাধনে।

১৮ ২৭

লক্ষদ্বীপের মতো ইজ়রায়েলেও পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ইজ়রায়েল উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ওই প্রযুক্তির সাহায্যে মূলত সমুদ্রের নোনা জল পানযোগ্য করা হয়।

১৯ ২৭

ইজ়রায়েলের সেই উন্নত জল পরিশোধন প্রযুক্তিই এ বার কাজে লাগতে চলেছে লক্ষদ্বীপে। গত মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

২০ ২৭

সোমবার সমাজমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের একটি পোস্টে ইজ়রায়েলি দূতাবাস লিখেছে, ‘‘ভারত সরকারের অনুরোধে জল পরিশোধন প্রকল্প শুরু করার জন্য আমরা গত বছর লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলাম। ইজ়রায়েল মঙ্গলবার থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।’’

২১ ২৭

উল্লেখযোগ্য যে, মালয়ালম এবং সংস্কৃতে লক্ষদ্বীপ কথার অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমন্বয়। এই দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে লক্ষদ্বীপ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা হিসেবে কাজ করে। চারদিকে সমুদ্র দিয়ে ঘেরা। তাই বাইরে থেকে জল সরবরাহ করে জলের সমস্যা মেটানো এক প্রকার অসম্ভব। তাই লক্ষদ্বীপের দ্বীপগুলিতে প্রযুক্তির সাহায্যেই পানীয় জলের সমস্যা দূর করার চেষ্টা চলছে।

২২ ২৭

সম্প্রতি লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশাসনিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত দ্বীপরাজ্যের সমুদ্রসৈকতেও অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে সেই সফরের স্মৃতিচারণাও মোদী করেছেন। সফরে কাটানো মুহূর্তের প্রচুর ছবিও তিনি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

২৩ ২৭

এর পরেই প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতকে নিয়ে কুমন্তব্য করেন মলদ্বীপ সরকারের তিন প্রতিনিধি। অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ছবিগুলি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পর মলদ্বীপ সরকারের তিন মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ সেই ছবিগুলি নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘জোকার’ এবং ‘ইজ়রায়েলের ক্রীড়নক’ বলেও অপমান করা হয়েছে। কটাক্ষ করা হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়েও। এর পরেই বিতর্কের মুখে পড়েন ওই তিন মন্ত্রী এবং মলদ্বীপ সরকার। বিতর্কের মুখে পড়ে নিজেদের পোস্টগুলিও মুছে ফেলেন তাঁরা। সেই সব পোস্টের ছবি (স্ক্রিনশট) সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। যদিও সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তবে চাপের মুখে ওই তিন মন্ত্রীকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছে সে দেশের মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার।

২৪ ২৭

কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। বিতর্ক শুরু হতেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন অক্ষয় কুমার, সচিন তেন্ডুলকর, সলমন খান, কঙ্গনা রানাউত, জন আব্রাহাম, শ্রদ্ধা কপূর, হার্দিক পাণ্ড্যের মতো তারকারা। মলদ্বীপ যেতে বারণ করার পাশাপাশি, দেশবাসীকে ভারতীয় দ্বীপগুলি অন্বেষণ করার বার্তাও দিয়েছেন তাঁরা।

২৫ ২৭

সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের উপরে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

২৬ ২৭

যাঁরা বুকিং বাতিল করছেন, তাঁদের দাবি, টাকা যাচ্ছে যাক। আগে দেশ। দেশের অপমান কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যাবে না বলেও কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে মতপ্রকাশ করেছেন।

২৭ ২৭

সেই বিতর্কের মাঝেই লক্ষদ্বীপকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন হোটেল, রিসর্ট, বিমানবন্দর। পাশাপাশি, জল সমস্যা মেটাতেও তৎপর হয়েছে সরকার।

ছবি: আনপ্ল্যাশ, এক্স এবং ফাইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement