বয়স তো সংখ্যামাত্র! নিজের ইচ্ছাপূরণ করার কি কোনও বয়স হয়! এ ধরনের গালভরা কথা তো বহু বিজ্ঞাপনেই দেখা যায়। তবে বাস্তবে ক’জন তেমন করার সুযোগ পান? সুযোগ পেলেও তার সদ্ব্যবহারই বা ক’জন করতে পারেন? তবে এমনই করে দেখিয়েছেন ৬৭ বছরের গীতা প্রকাশ।
গীতা পেশায় চিকিৎসক। পাশাপাশি ফ্যাশন মডেলিংয়ের জগতেও বেশ নাম করেছেন। দেশের নামীদামি ফ্যাশন ডিজাইনার বা পরিচিত ব্র্যান্ডের হয়ে মডেলিং করে ফেলেছেন গীতা।
গীতাকে ইতিমধ্যেই তরুণ তাহিলিয়ানি, অঞ্জু মোদী বা গৌরব গুপ্তের মতো খ্যাতনামী ফ্যাশন ডিজাইনারের পোশাকে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি বহু ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনেও নেমেছেন গীতা।
ফ্যাশন মডেল হিসাবে পেশাদার জীবন শুরু করেননি। মডেলিং যে করবেন, তা-ই ভাবেননি গীতা।
মডেলিং-এ গীতার শুরুটা বেশ আকস্মিক ভাবেই হয়েছিল। চিকিৎসক হিসাবে বেশ পসার ছিল তাঁর। তবে এক ইতালীয় ফোটোগ্রাফারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর বদলে গিয়েছিল গীতার জীবন।
সংবাদমাধ্যমে গীতা বলেন, ‘‘মডেলিং যে করব, তা কম বয়সেও ভাবিনি। বরং সব সময় মনে হত, মডেল হওয়ার কোনও যোগ্যতা আমার নেই। ডাক্তারি করে সন্তুষ্ট ছিলাম। কখনও ভাবিনি ৫৭ বছর বয়সে পৌঁছে মডেল হয়ে যাব!’’
বছর দশেক আগে গীতার জীবনে নতুন মোড় এসেছিল। সে সময় গীতার কাছে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন এক ইতালীয় ফটোগ্রাফার। গীতার সঙ্গে আলাপের পর জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর হয়ে মডেলিং করবেন কি না।
মাস কয়েক পরে গীতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই বিদেশি ফটোগ্রাফার। গীতার কয়েকটি ছবি তাঁকে পাঠাতে অনুরোধ করেছিলেন।
গীতা বলেন, ‘‘মডেল হিসাবে তো কখনও ছবি তোলাইনি। ফলে আমার সাধারণ কয়েকটি ছবিও ওই ফোটোগ্রাফারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ছেলেমেয়েরা সেগুলো বেছে দিয়েছিল। এর পর (মডেল হিসাবে) প্রথম ব্রেক পেয়ে যাই।’’
প্রথম বার দেশের প্রথমসারির জিজাইনারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন গীতা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ১০ বছর আগেকার কথা। ফ্যাশন ডিজাইনার তরুণ তাহিলিয়ানির হয়ে একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।’’
প্রথম কাজের পর গীতাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘তরুণ তাহিলিয়ানির পর অন্য একটি ব্র্যান্ডের থেকে কাজের অফার এসেছিল। ওই ব্র্যান্ডের একটি শালের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার অফার এসেছিল। সাধারণত আমার মতো বয়সিরাই ওই শাল ব্যবহার করেন। ফলে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।’’
মডেলিং করলেও মানুষের সেবায় ব্রতী থেকেছেন গীতা। বলেছেন, ‘‘মডেলিংয়ের কাজ করলেও রোগীদের অবহেলা করিনি। সাধারণত সপ্তাহের শেষে রোগী দেখার থেকে ফুরসত মেলে। ফলে চেষ্টা করি যাতে সপ্তাহান্তে মডেলিংয়ের কাজগুলো সেরে ফেলা যায়। মডেলিংয়ের মতো মানুষের সেবায় সমান আনন্দ পাই।’’
মডেলিং এবং চিকিৎসার কাজের ফাঁকে জনসেবাতে মন দিয়েছেন গীতা। নিজের বাড়িতে একটি ক্লিনিক খুলেছেন। তাতে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করেন তিনি।
এই বয়সে অনেকে যখন অবসরজীবনকে উপভোগ করেন, সে সময় প্রতি দিন দৌড়ে চলেছেন গীতা। নতুন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। দেশের প্রথমসারির মডেলদের মধ্যে রয়েছেন গীতা। তাঁর কাজ নিয়ে গর্বিত সন্তানেরা। গীতা বলেন, ‘‘হোর্ডিংয়ে আমার ছবি দেখলে প্রত্যেক বার আমাকে তা পাঠিয়ে দেয় ছেলেমেয়েরা। তাতে আমিও তৃপ্তি পাই।’’