এ বার ইজ়রায়েলের হয়ে সুর চড়াল জার্মানি। সেই জার্মানি, এক সময় ইহুদিদের যে দেশ থেকে বার করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন হিটলার।
তবে জার্মানি যে ভাবে ইজ়রায়েলের সমর্থনে এসে দাঁড়িয়েছে, তা দেখে অবাক হচ্ছেন কূটনীতি মহলের অনেকেই। সমালোচনা হচ্ছে জার্মানির আনা আইন নিয়েও।
জার্মানি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি (নদী থেকে সমুদ্র, প্যালেস্টাইন স্বাধীন হবে)’— সমাজমাধ্যমে এই স্লোগান যাঁরাই পোস্ট বা শেয়ার করবেন, তাঁদেরই নাগরিকত্ব অস্বীকার করবে জার্মানি।
এমনকি, সমাজমাধ্যমে এই স্লোগান থাকা পোস্ট যাঁরা লাইক করবেন বা সেই পোস্টে যাঁরা মন্তব্য করবেন, তাঁরাও হারাবেন জার্মানির নাগরিকত্ব। তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনটাই।
অর্থাৎ, ইজ়রায়েলের বিপক্ষে এবং প্যালেস্টাইনের পক্ষে জার্মানিতে বসবাসকারী যাঁরাই আওয়াজ তুলবেন, তাঁরাই বঞ্চিত হবেন নাগরিকত্ব থেকে।
আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর জার্মান রেডিয়ো অ্যান্ড টেলিভিশন (এনডিআর)-এর মাধ্যমে এই ঘোষণা করেছে জার্মান সরকার। জার্মান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের নতুন নিয়মবিধি অনুযায়ী, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ স্লোগানটি ব্যবহার করলেই সে দেশে বসবাসকারী মানুষ জার্মান নাগরিক হওয়ার অধিকার হারাবে।
জার্মানিতে ক্রমবর্ধমান ইহুদি বিদ্বেষ ও বৈষম্য শেষ করতে নাগরিকত্ব আইন আরও কঠোর করেছে সে দেশের সরকার।
কিন্তু কেন ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’— এই নির্দিষ্ট স্লোগান নিয়েই আপত্তি তুলেছে জার্মানি?
আদতে এই স্লোগান উঠেছিল ইজ়রায়েল তৈরি হওয়ার কয়েক দশক পর। স্লোগান তুলেছিল প্যালেস্টাইন। ইজ়রায়েলের এক পাশে জর্ডন নদী এবং অন্য পাশে ভূমধ্যসাগর।
তাই ইজ়রায়েল মনে করে প্যালেস্টাইনের এই স্লোগান আসলে তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। পাশাপাশি, ইজ়রায়েলকে দখল করে নেওয়ার বা নিশ্চিহ্ন করার দাবিতে এই স্লোগান বলেও দাবি করা হয়।
সহজ কথায়, ইজ়রায়েল মনে করে যে স্লোগানটি তাদের ধ্বংসের কথা বলে। ‘নদী থেকে সমুদ্র’ স্লোগান আসলে জর্ডন নদী থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা প্যালেস্টাইনের দখলে নেওয়ার দাবি। যার অর্থ নাকি ইহুদি রাষ্ট্র ইজ়রায়েলকে ভেঙে ফেলা।
আর সেই কারণেই এই স্লোগান নিয়ে বার বার আপত্তি জানিয়ে এসেছে ইজ়রায়েল। পাল্টা স্লোগানও দিয়েছে। এ বার ইজ়রায়েলের হয়ে সেই স্লোগান নিয়ে আপত্তির কথা জানাল জার্মানিও। একই সঙ্গে জানিয়ে দিল নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার কথা।
তবে এই নিয়ম জার্মানির স্থায়ী বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। যাঁরা চাকরির সূত্রে বা পড়াশোনার কারণে সে দেশে রয়েছেন এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বা করবেন, এই আইন তাঁদের জন্য প্রযোজ্য।
আগে জার্মানিতে কর্মরত বিদেশিরা আট বছর সে দেশে কাজ করার পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারতেন। তবে জার্মানির নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, সেই সময়সীমা পাঁচ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে।
জার্মানির নাগরিকত্ব আইনের একটি নির্দিষ্ট ধারা অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ইহুদিদের প্রতি দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে বা ইহুদিদের উপর অত্যাচারের কথা অস্বীকার করে বা ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়ান, তা হলে তাঁকে সে দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না।
এ প্রসঙ্গে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজ়ার বলেছেন, “আপনি যদি আমাদের নিয়ম না মেনে চলেন, তা হলে আপনি জার্মান পাসপোর্ট পাবেন না। আমরা এখানে একটি পরিষ্কার লাল রেখা কেটে রেখেছি।’’