Rachana Banerjee

কখনও প্রশ্ন করায় বাধা, কখনও ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ বন্ধ করার দাবি, একা মা ঝুমঝুমের অন্য লড়াই

ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বয়স হয়ে গেল প্রায় ২৮ বছর। যত দিন গড়িয়েছে অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা তত বেড়েছে। কেমন তাঁর এই যাত্রা?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৩৩
Share:
০১ ২৫

তিনি ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এর সকলের দিদি। শেষ দশ বছরে নায়িকা রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় কবে যে ‘দিদি’ হয়ে উঠেছেন, তা হয় তো তিনি নিজেই জানেন না। আসল নাম ঝুমঝুম বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯০ সালে একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরার খেতাব পান। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু। তবে তখনও তিনি ঝুমঝুম হিসাবেই পরিচিত ছিলেন।

০২ ২৫

প্রথম ছবিতেই অবশ্য নাম বদলে যায় তাঁর। সুখেন দাস পরিচালিত ছবি ‘দান প্রতিদান’-এর হাত ধরে বড় পর্দায় হাতেখড়ি। পরিচালক সুখেনই তাঁর নাম দেন রচনা।

Advertisement
০৩ ২৫

সেই শুরু নায়িকা রচনার নতুন অধ্যায়। নব্বই দশকের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বর্তমানে টলিউডে নিজের এক স্বতন্ত্র স্থান করে নিয়েছেন। তিনি যা করতে পেরেছেন, তা হয়তো অনেক নায়িকাই পারেননি।

০৪ ২৫

বাংলা ছবি দিয়ে অভিনয়ের জগতে রচনার হাতেখড়ি হলেও প্রায় দশ বছর তিনি অন্য ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছেন। চুটিয়ে ওড়িয়া, তামিল, তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয় করেন নায়িকা। কন্নড় এবং হিন্দিও অবশ্য ছিল তার মধ্যে কয়েকটা। সময়টা ১৯৯৫ থেকে ২০০৫।

০৫ ২৫

বাংলার বাইরে ওড়িয়া চলচ্চিত্র জগতে রচনা আর সিদ্ধার্থ মহাপাত্রর জুটি চূড়ান্ত জনপ্রিয়তা পায়। শোনা যায়, সেখান থেকেই সিদ্ধার্থর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান নায়িকা। একসঙ্গে প্রায় ১৫টার বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তাঁরা।

০৬ ২৫

একসঙ্গে কাজ করতে গিয়েই সিদ্ধার্থর সঙ্গে বন্ধুত্বের শুরু। তার পর অবশ্য তাঁরা বিয়েও করেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর এমনটাই। কিন্তু সেই সম্পর্ক টেকেনি। ২০০৪-এ বিচ্ছেদ হয় রচনা এবং সিদ্ধার্থর। কিন্তু এই সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে নিয়ে কখনও মুখ খোলেননি নায়িকা।

০৭ ২৫

২০০৪ সালে সিদ্ধার্থের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অবশ্য ওড়িয়া ছবিতে নায়িকার আনাগোনাও কমে যায়। একটা সময়ের পর শুধু ওড়িয়া ছবিতেই মন দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পর আচমকাই ছন্দপতন। শোনা যায়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতির কারণেই ওড়িয়া ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছিলেন নায়িকা।

০৮ ২৫

তত দিনে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন নায়িকা। সেই সময় প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি প্রায় ভাঙার পথে। তখনই পথ চলা শুরু প্রসেনজিৎ-রচনা জুটির। সেই জুটি নিয়েও কম গুঞ্জন হয়নি। ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটির পর রচনার সঙ্গেই প্রসেনজিৎকে বেশ ভালবেসেছিল দর্শক।

০৯ ২৫

বহু বহু হিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছে এই জুটি। একসঙ্গে প্রায় ৩৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁরা। সেখান থেকেই প্রশ্ন ওঠে তবে কি এ বার রচনায় মন মজেছে স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রির? তবে সেই সব গুঞ্জনকেই ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রসেনজিৎ এক বার মন্তব্য করেন যে রচনা এমন এক জন মানুষ, যাঁকে তিনি জনসমক্ষে জড়িয়েও ধরতে পারেন!

১০ ২৫

এত কিছুর মধ্যে রচনার হৃদয় হরণ করেছেন কলকাতারই এক ব্যবসায়ী। নাম প্রবাল বসু। চুপিচুপি মন দেওয়া-নেওয়া হয়ে যায়। কাকপক্ষীতেও টের পায়নি। কাজ ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা হোক তা কখনও চান না রচনা। এ ক্ষেত্রেও ভেবেছিলেন সবটাই আড়ালে থাকবে। কিন্তু কথায় আছে, দেওয়ালেরও কান থাকে!

১১ ২৫

খুব বেশি দিন গোপন থাকেনি রচনার প্রেমের খবর। প্রবালের সঙ্গে ২০০৭ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন নায়িকা। কেরিয়ারের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নায়িকা বিয়ে করে নেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছিল নানা প্রশ্ন। যদিও কখনও লোকের কথাতে গুরুত্ব দিতে রাজি নন নায়িকা। এ ক্ষেত্রেও তাই করেছিলেন।

১২ ২৫

রচনা এবং প্রবালের একটি পুত্রসন্তান। নাম প্রণিল বসু। এখন অবশ্য অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছে। ১৪ বছর বয়স তার। একা হাতেই ছেলেকে বড় করছেন রচনা। সিদ্ধার্থের পর প্রবালের সঙ্গে সম্পর্কটাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি নায়িকার।

১৩ ২৫

দু’জনের মতাদর্শ আলাদা। তাই খুব বেশি দিন একসঙ্গে সংসার করা হয়নি রচনা-প্রবালের। ছেলে হওয়ার পরই শুরু হয় সমস্যা। যে জন্য তাঁদের মনে হয়েছিল আলাদা থাকাই ভাল। খুব বেশি দিন একসঙ্গে ছিলেন না তাঁরা। যে যাঁর মতো আলাদা হয়ে যান। তবে ছেলে থাকে রচনার কাছেই।

১৪ ২৫

আলাদা থাকলেও রচনা এবং প্রবালের আইনত কোনও বিচ্ছেদ হয়নি। কারণ নায়িকা কখনও চাননি তাঁর ছেলেকে কোনও কথা শুনতে হোক। এক সাক্ষাৎকারে রচনা বলেছিলেন, “আমার ছেলে বড় হচ্ছে। তাঁর নিজস্ব একটা জগৎ তৈরি হয়েছে। আমি চাই না কেউ ওকে বলুক ওর মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।”

১৫ ২৫

তবে সময়-অসময়ে তাঁরা একে অপরের পাশে আছেন। বাইপাসের বিলাসবহুল আবাসনে থাকেন নায়িকা। সুযোগ পেলে প্রবাল আসেন। তাঁরা একসঙ্গে সময় কাটান। একসঙ্গে খেতেও যান। ছেলের পরীক্ষার সময় বাবা তাঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করেন। দিনের শেষে যে যাঁর বাড়িতে শান্তির ঘুম।

১৬ ২৫

বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ না থাকলেও তাঁরা নিজেদের ভাল বন্ধু বলেই দাবি করেন। প্রবালের নতুন লাইফস্টাইল এবং ফ্যাশনের সংস্থা হয়েছে। তাঁর ব্যবসার পাশে সব সময় রয়েছেন রচনা। এই যেমন কিছু দিন আগে এই নতুন সংস্থার তরফে একটি আলোচনা সভার আয়োজন হয়েছিল। সেখানেও প্রবালের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রচনা।

১৭ ২৫

এক দিকে যেমন ব্যক্তিগত জীবন, অন্য দিকে ধীরে ধীরে সিনেমা করাও কমিয়ে দিয়েছিলেন নায়িকা। তাঁর জীবনে ছেলে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনও আছে। নিজেই জানিয়েছেন, ছেলে প্রণিলের ছোটবেলার কোনও মুহূর্ত একবিন্দুও মিস্‌ করতে চান না বলে সেই অনুযায়ী কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি।

১৮ ২৫

সিনেমা থেকে নিজেকে প্রায় এক প্রকার সরিয়েই নেন নায়িকা। বড় পর্দায় কাজ কমালেও ছোট পর্দায় আস্তে আস্তে নিজের পসার জমাচ্ছিলেন নায়িকা। ছোট পর্দায়ও প্রসেনজিৎ-রচনার হিট জুটি। ২০১৪ সালে ‘তুমি যে আমার’ নামে একটি রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালক হিসাবে দেখা যায় তাঁদের।

১৯ ২৫

তবে তত দিনে ‘দিদি’ হিসাবে তাঁকে দেখে ফেলেছিল দর্শক। তার এক বছর আগেই শুরু হয় নতুন ধরনের রিয়্যালিটি শো। যে অনুষ্ঠান সেই সব মহিলার জন্য, যাঁরা হয়তো কখনও ভাবতেও পারতেন না তাঁরাও টেলিভিশনের পর্দায় আসতে পারেন। সেখান থেকে শুরু হয় এক অন্য রচনার পথ চলা।

২০ ২৫

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা মহিলা এই শো-এ অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের কথা মন দিয়ে শোনেন রচনা। তাঁদের খুশিতে খুশি হন। আবার তাঁদের দুঃখের কথা শুনলে চোখ ভরে ওঠে জলে। প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ নিয়ে দর্শকমনে উন্মাদনা এখনও এক রকম।

২১ ২৫

অবশ্য এই নিয়ে কম বিতর্কও হয়নি। রচনা এবং তাঁর এই শোয়ের উপর ক্ষেপে লাল এক প্রতিযোগীর স্বামী। কোনও এক পর্বে নিজের বিচ্ছেদ, স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করেছিলেন এক মহিলা। তা দেখে রেগে লাল হয়ে যান তাঁর স্বামী।

২২ ২৫

প্রতিযোগীর স্বামীর দাবি, শুধু মহিলাদের কথা শুনলে চলবে না। একতরফা শুনে বিচার করলে তা অনৈতিক। যদি দু’তরফের কথা না শোনা হয়, তা হলে এই শো অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। হাত জোড় করে ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ বন্ধ করার আর্জি করেন তিনি।

২৩ ২৫

যদিও এই সব নিয়ে কোনও দিনই ভাবিত নন রচনা। রিয়্যালিটি শো-এর পাশাপাশি নিজের বুটিকও শুরু করেছেন নায়িকা। যেখানে রয়েছে নানা ধরনের শাড়ি, গয়না, ব্যাগ। নায়িকার ইচ্ছে রচনা নাম যেন থেকে যায় সকলের মনে। তাই এই নতুন ব্যবসার শুরু।

২৪ ২৫

রচনা বলেছিলেন, “নায়িকারা কফির দোকান খুললে সমস্যা নেই, শাড়ির দোকান খুললে সমস্যা কিসের!”

২৫ ২৫

ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন থেকে পেশাদারি জীবন— নিজের শর্তে বাঁচেন তিনি। তাই যতই বিতর্ক হোক সব সময়ই চুপ থেকেছেন। কখনও কোনও বিষয়েই মুখ খোলেননি। বাবার মৃত্যুর পর নিজেকে আরও শক্ত করে ফেলেছেন। নিজের লড়াইটা নিজেই করতে চান নায়িকা।

ছবি: ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement