ভারতের মাটিতে মিলল অমূল্য লিথিয়াম ধাতুর সন্ধান। জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার সালাল-হাইমানা এলাকায় লিথিয়ামের খনির হদিস পেয়েছে ভারতীয় ভূ-তাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া)।
বর্তমানে বিদেশ থেকে লিথিয়াম আমদানি করে ভারত। কিন্তু এ বার সেই ছবি বদলে যেতে চলেছে। লিথিয়াম খনির সন্ধান পাওয়ায়, বদলে যেতে পারে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ভবিষ্যৎ। কারণ মোবাইল ছাড়াও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যাটারি তৈরিতে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয়। ফলে লাভ হতে পারে আম-আদমির জীবনেও। কম দামে মিলতে পারে রিচার্জেবল ব্যাটারি।
খনি মন্ত্রকের তরফে আরও জানানো হয়েছে, লিথিয়ামের পাশাপাশি ৫টি সোনার খনির হদিস পাওয়া গিয়েছে। এই ভান্ডারগুলি কোন রাজ্যে পাওয়া গিয়েছে, তা এখনও সঠিক ভাবে জানানো হয়নি।
জম্মু ও কাশ্মীরের পাশাপাশি ছত্তীসগঢ়, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানাতেও খনিজ পদার্থ পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পটাশ, মলিবডেনামের মতো খনিজ।
লিথিয়ামের খনির পাশাপাশি নতুন ৫ সোনার ভান্ডারের হদিস মেলায় আরও ধনী হল ভারত।
২০২২-এর অর্থবর্ষের হিসাব অনুযায়ী, ভারতের মোট আমদানি করা দ্রব্যের ৭.৫৩ শতাংশ সোনা। কর্নাটকের রায়চুর জেলার হুট্টি গোল্ড মাইন দেশের একমাত্র সোনার খনি যা ১৯৪৭ সাল থেকে প্রায় ৮৪ টন সোনা উৎপাদন করেছে।
ন্যাশনাল মিনারেল ইনভেন্টরি (এনএমআই) বা জাতীয় খনিজ তালিকার ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ৫০১৮.৪ লক্ষ টন সোনার আকরিক মজুত রয়েছে বলে অনুমান।
এনএমআই-এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের মধ্যে সব থেকে বেশি সোনার আকরিক রয়েছে বিহারের মাটিতে। যা প্রায় ৪৪ শতাংশ।
বিহারের পরে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থান এবং কর্নাটক। যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশে সোনার আকরিক রয়েছে ৩ শতাংশ করে। ঝাড়খণ্ডে রয়েছে ২ শতাংশ।
অবশিষ্ট ২ শতাংশ সোনার আকরিক রয়েছে ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ুতে। তবে নতুন পাঁচ সোনার খনির খোঁজ মেলায় দেশে মজুত সোনার পরিমাণ আরও বাড়বে। যার মধ্যে মূলত বাড়বে মাটির তলায় মজুত সোনার পরিমাণ।
গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল কেন্দ্র শীঘ্রই দেশে হলুদ ধাতুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিশদে পরিকল্পনা করবে। সোনার আমদানি এবং দাম কমানোর লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কেন্দ্র জানিয়েছিল ২০৩০ সালের মধ্যে সোনার খোঁজ পাওয়া যেতে পারে, এই রকম অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করা হবে এবং সোনার খনিতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
দেশের সম্ভাব্য সোনার ভান্ডার শনাক্ত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে নীতি আয়োগ। আগামী বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চালানো হবে।
চিনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, যেখানের নাগরিকরা সব থেকে বেশি সোনা ব্যবহার করে।
২০২১-২২ সালের মধ্যে ভারতের সোনা আমদানি তার আগের বছরের তুলনায় ৩৩.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই বছর দেশে প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার সোনা আমদানি করা হয়েছিল।
দেশের বাণিজ্য মন্ত্রক চিহ্নিত করেছে যে, সোনা হল অগ্রাধিকার পাওয়া সেই ১০২টি বস্তুর মধ্যে অন্যতম যার আমদানি ভারতে বেশি। আর সেই কারণেই দেশে সোনা খোঁজার এই উদ্যোগ৷
ভারতে সোনার গয়নার চাহিদা বেশি হওয়ার কারণেই সোনা আমদানির পরিমাণও বেশি। এ ছাড়াও বিশেষ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বৈদ্যুতিক খাতেও সোনার ব্যবহার হয়।
এ ছাড়াও, দন্ত্যচিকিৎসা এবং ওষুধ তৈরিতে সোনার ব্যবহার রয়েছে। গবেষণায় অনুঘটক হিসাবে এবং ন্যানো প্রযুক্তিতেও সোনার ব্যবহার বেড়েছে।
বিনিয়োগ এবং ব্যাঙ্ক রিজার্ভের জন্যও সোনা একটি মূল্যবান সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়।