রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতারির পর আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। তবে সম্প্রতি মেয়ের হাত দিয়ে একটি চিঠি পাঠানোর চেষ্টা করে ‘হাতেনাতে ধরা’ পরেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, সেই চিঠি নিয়ে। কে লিখেছেন, কাকেই বা উদ্দেশ্য করে লেখা?
বালুর ‘লেখা’ চিঠি নিয়ে জল্পনা চলছে রাজ্যের নানা স্তরে। কাদের নাম সেখানে উল্লেখ ফাঁস করেছেন, কোন কোন গোপন তথ্য রয়েছে, ইত্যাদি নিয়ে চলছে চর্চা। ইতিমধ্যেই ইডি সূত্রে খবর, গত ১৯ ডিসেম্বর তাদের জেরায় জ্যোতিপ্রিয় চিঠি লেখার বিষয়টি স্বীকার করে নেন।
কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের একাংশের আশঙ্কা, পরে মত বদল করে চিঠি লেখার বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেন রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয়। তাই তথ্যপ্রমাণ হাতে রাখতে চায় ইডি।
ইডির ওই সূত্রের খবর, এই তথ্যপ্রমাণ হাতে রাখতেই জ্যোতিপ্রিয়ের হাতের লেখা পরীক্ষা করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো ধৃত মন্ত্রীর অন্য কোনও লেখার সঙ্গে চিঠির লেখাটি মিলিয়ে দেখা হবে।
ইডির হাতে গ্রেফতারের পর এখন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি জ্যোতিপ্রিয়। শনিবার ইডি দাবি করে, হাসপাতাল থেকে ‘মেয়ের মাধ্যমে’ জ্যোতিপ্রিয় একটি চিঠি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন। সেই চিঠি নিরাপত্তারক্ষীদের মারফত তাদের হাতে এসেছে। বাংলা এবং ইংরেজি মিশিয়ে লেখা ছিল সেই চিঠি।
ইডির আরও দাবি, চিঠিতে একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাটি সূত্রে এ-ও দাবি করা হয় যে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ১৬ ডিসেম্বর জ্যোতিপ্রিয়ের ঘর থেকে সিসি ক্যামেরা খোলা হচ্ছিল।
সেই সময় ওই চিঠি মেয়েকে দিচ্ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। ইডির আরও দাবি, বাবা-মেয়ের মধ্যে এই চিঠি বিনিময় হয়েছিল। সেই চিঠি ধরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা।
হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়ের নিরাপত্তায় বহাল ছিলেন সিআরপিএফ জওয়ানেরা। তাঁদের মাধ্যমেই ইডির হাতে চিঠিটি এসেছে বলে দাবি। ইডি আরও দাবি করেছে, ওই চিঠিতে ‘বিস্ফোরক’ তথ্য রয়েছে।
এর আগে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করেছিল ইডি। এ বার রেশন মামলায় জ্যোতিপ্রিয়ের হস্তাক্ষর পরীক্ষা করতে চলেছে তারা। ইডি সূত্রে তেমনটাই খবর মিলেছে।
ইডি সূত্রে খবর, টাকার লেনদেন প্রসঙ্গেই কয়েকটি কথা কন্যা প্রিয়দর্শিনী মল্লিককে চিঠিতে জানিয়েছিলেন বালু। সেখানে উল্লেখ করা ছিল এই মামলায় ধৃত বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য ওরফে ‘ডাকু’র নামও।
গত শুক্রবার শঙ্করের বনগাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। তাঁকে মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন আদালতে ইডি জানায়, হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন ‘ডাকু’।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চিঠিতে অল্প কথায় কিছু তথ্য এবং নির্দেশ লিখেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। কন্যাকে জানিয়েছিলেন কোথায়, কার কাছে, কত টাকা রয়েছে।
তবে শঙ্কর ছাড়াও আরও কয়েক জনের নাম চিঠিতে ছিল বলে জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।
ইডি আদালতেই জানিয়েছিল, একাধিক ফরেক্স সংস্থা বা বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার সংস্থার মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেন করেছেন শঙ্কর। ওই টাকা প্রথমে বিদেশি মুদ্রায় (মূলত ডলার) পরিবর্তন করে তার পর পাঠানো হয়েছে দুবাইয়ে।
তার মধ্যে অন্তত ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা জ্যোতিপ্রিয়ের বলে দাবি করে ইডি। মনে করা হচ্ছে, সেই টাকার কথাই কন্যাকে চিঠিতে বলতে চেয়েছিলেন ধৃত মন্ত্রী।
ইডি সূত্রে খবর, চিঠির হস্তাক্ষর পরীক্ষা করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা। একই সঙ্গে হাসপাতালে কী ভাবে কাগজ, কলম পেলেন ধৃত মন্ত্রী, তা-ও তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছে, সেখানকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে বলে খবর।