সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে কিছু দিন আগেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশ। এ বার রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও দ্রুতগামী করার লক্ষ্যে মেট্রো রেল পরিষেবাও চালু হতে চলেছে সেখানে।
সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ‘বিজয় দিবস’-এর দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রীসাধারণের জন্য খুলে যাবে ঢাকা মেট্রোর দরজা। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেকগুলি পর্যায়ে এই মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ চলবে। আপাতত প্রথম দফায় ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করবে মেট্রো। এর জন্য মেট্রোর দশটি রেককে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি রেকে থাকবে ৬টি করে বগি।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলো জানিয়েছে, আপাতত স্থির হয়েছে, সাড়ে তিন মিনিট অন্তর মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কয়েক দিন ১০ মিনিট অন্তর মেট্রো চালানো হবে।
মেট্রো রেল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ঢাকার যাত্রীরা কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এবং যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেলে দু’টি ট্রেনের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ক্রমশ কমিয়ে আনা হবে।
জানা গিয়েছে, ভোর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে। মেট্রোরেলে যাত্রীদের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা।
আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত গেলে এক জন যাত্রীর খরচ হবে ১০০ টাকা। প্রতি কিলোমিটার পিছু পাঁচ টাকা করে ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেপ্টেম্বর মাসেই জানিয়ে দেন, মেট্রোর যে সব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন, তাঁদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে।
মন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর যোদ্ধাদের পরিবার প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখিয়ে বিনা মূল্যে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন। তবে পড়ুয়াদের কাছ থেকে কত ভাড়া নেওয়া হবে এবং তাদের এ ব্যাপারে কতটা ছাড় দেওয়া হবে, তা এখনও ঠিক করা যায়নি।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রাপথে মেট্রো পেরোবে মোট ৯টি স্টেশন। দ্বিতীয় দফায় মেট্রো ছুটবে ঢাকার আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত।
তবে ঢাকা মেট্রোর এই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হবে আগামী বছরের শেষে। সে যাত্রায় মোট ৭টি স্টেশন ধরে ছুটবে ঢাকা মেট্রো।
ঢাকার মেট্রো রেল পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তবে এ ব্যাপারে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা মিলেছে জাপানের তরফে। মূলত জাপানের প্রযুক্তিকৌশলীদের সাহায্য এবং বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদদের সহায়তায় সচল হচ্ছে ঢাকা মেট্রো।
কিছু দিন আগেই বাংলাদেশের মংলা বন্দরে এসে নোঙর করেছে ব্যাঙ্ককের একটি জাহাজ। সেই জাহাজে করেই জাপান থেকে পাঠানো মেট্রোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং কোচ এসে পৌঁছেছে।
আপাতত ঢাকা মেট্রো চালানোর দায়িত্বে থাকছেন জাপানের চালকরাই। তাঁরা মেট্রো রেল চালানোর বিষয়ে বাংলাদেশের চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছেন। এই প্রশিক্ষণ শেষ হলেই সে দেশের চালকদের নিয়ন্ত্রণে গড়াতে শুরু করবে মেট্রোর চাকা।
কিছু দিন আগেই রীতিমতো সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঢাকা মেট্রোর ষোলোটি বিভাগে ৫২ জনকে নিয়োগ করার কথা জানায় সরকার। মূলত প্রযুক্তিবিদদেরই এই শূন্যপদগুলিতে নেওয়া হবে।
ঢাকা মেট্রো রেলের পরিচালক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা পারিবারিক কার্ড আগে থেকে কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা মেশিনেও কার্ড রিচার্জ করা যাবে।
প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এর পর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ডটি পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী প্ল্যাটফর্ম থেকে বের হতে পারবেন না।
তবে দিনের দিন ভাড়া দিয়েও টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন যাত্রীরা। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে যাত্রীদের। এটিও অনেকটা স্বল্প মেয়াদের স্মার্ট কার্ডের মতোই।
তবে যাত্রী নির্ধারিত গন্তব্যের চেয়ে মেট্রোয় অতিরিক্ত পথ যাতায়াত করলে ওই টিকিট দিয়ে দরজা জরিমানা দিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার হতে পারবেন তিনি।
প্রতিটি স্টেশনে লিফ্ট ও চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। ৩ তলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক ভবন থাকবে। সেখানে টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকবে। ৩ তলায় থাকবে মেট্রোলাইন ও প্ল্যাটফর্ম।
শুধু টিকিট কাটা ব্যক্তিরাই ৩ তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে স্বয়ংক্রিয় পাঁচিল থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধও হয়ে যাবে।
২০১৩ সালে ঢাকা শহরের যানজটের সমস্যা এড়ানোর জন্য মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সে দেশের সরকার। এ ব্যাপারে কাজ শুরু করার জন্য অনুমোদনও মেলে।
প্রথম পর্যায়ে মেট্রো উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যে স্টেশনগুলিতে থামবে, সেগুলি হল উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া এবং শেওড়াপাড়া। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অংশে স্টেশন রয়েছে নয়টি। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের শেষে চালুর পরিকল্পনা আছে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে উন্নত দেশগুলোর মতোই মেট্রো পরিষেবা চালু করতে পেরে স্বভাবতই খুশি সে দেশের মানুষজন।