রাশিয়ার তেলের অন্যতম ক্রেতা ভারত। দীর্ঘ দিন ধরেই তেলের বাণিজ্যে রাশিয়া এবং ভারতের লেনদেন চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তেল কেনাবেচা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপে সেই থেকে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের পর ভারতে রাশিয়ার তেলের বিক্রি আরও বেড়ে গিয়েছে।
যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে নানা ভাবে সমালোচিত হয়েছে পুতিনের দেশ। তবু রাশিয়া যুদ্ধ থামায়নি। এর পরেই আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে।
রাশিয়ার উপর একাধিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল যুদ্ধ শুরুর পর। আমেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল। ফলে ব্যবসায়িক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্কো।
সে সময় অনেক দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক দিক থেকে অসহযোগিতা করলেও পাশে ছিল ভারত। তারা রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি বন্ধ করেনি। বরং ভারতের জন্য তেল কেনায় বিশেষ ছাড় দিয়েছিল রাশিয়া।
রাশিয়ার তেল বিক্রির জন্য পশ্চিমের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪,৯৪২ টাকা) কমে ভারতকে তেল বিক্রি করছিল মস্কো। ফলে তেল আমদানিতে দিল্লির খরচ আগের চেয়ে কমেছিল।
রাশিয়া ভারতকে তেলের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার কারণে দিল্লি রাশিয়া থেকে তেল কেনার পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছিল। গত কয়েক মাসে রাশিয়ার তেল ক্রেতাদের তালিকায় প্রথম সারিতে উঠে আসে ভারত।
ইউক্রেন যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের কেনা তেলের পরিমাণ ছিল মোট ক্রয়ের দুই শতাংশ। বিশেষ ছাড় পাওয়ার পর যুদ্ধের পরে এই ক্রয় বেড়ে হয় ৪৪ শতাংশ।
যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার কাছ থেকে দিনে ৪৪,৫০০ ব্যারেল তেল কিনত ভারত। পরে ক্রয়ের নিরিখে তারা চিনকেও ছাপিয়ে যায়।
কিন্তু সম্প্রতি ছাড়ের পরিমাণ আবার কমিয়ে দিতে শুরু করেছে মস্কো। ফলে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতকে আরও বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়া থেকে প্রতি ব্যারেল তেলের জন্য ৩০ ডলার (২,৪৭১ টাকা) ছাড় পাচ্ছিল ভারত। সম্প্রতি তা কমে হয়েছে মাত্র ৪ ডলার (৩২৯ টাকা)।
ছাড় কমে যাওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার তেলের পরিবহণ খরচও ভারতকে চিন্তায় রেখেছে। কারণ রাশিয়া থেকে তেলের পরিবহণ খরচ বরাবরই চড়া এবং অনিশ্চিত।
কেন রাশিয়া তেল বিক্রিতে ভারতকে দেওয়া ছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে? ভারতের তেল কোম্পানিগুলির কিছু ‘অদূরদর্শী’ পদক্ষেপ এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে।
ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম, মেঙ্গালুরু রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালসের মতো সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি, নায়রা এনার্জি লিমিটেডের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলি রাশিয়া থেকে তেল কেনে।
এই সংস্থাগুলি পৃথক ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে তেল কেনার বিষয়ে যোগাযোগ করছে। তাদের মধ্যে নানাবিধ চুক্তিও হচ্ছে। ভারতীয় সংস্থাগুলি একজোট হয়ে তেল কিনলে রাশিয়ার ছাড়ের পরিমাণ বেশি হত।
পাশাপাশি, যুদ্ধ শুরুর পরপরই পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া যে ধাক্কা খেয়েছিল, সময়ের সঙ্গে তা সামলে উঠেছে মস্কো। তাদের তেলের বাণিজ্যে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
সেই কারণেও অপরিশোধিত তেলের জন্য ভারতকে আর বাড়তি ছাড় দিতে আগ্রহী নয় রাশিয়া। তাদের তেলের চাহিদা তুলনায় বেড়ে গিয়েছে। তাই ছাড় কমিয়ে তেলের দাম বাড়িয়েই রাখছেন পুতিন।