খ্যাতনামীদের মধ্যে যেন বিয়ের ধুম লেগেছে। আথিয়া শেট্টির সঙ্গে লোকেশ রাহুলের বিয়ে মিটতে না মিটতেই ছাঁদনাতলায় বসেছেন অক্ষর পটেল এবং মেহা পটেল। এ বার দীর্ঘ দিনের প্রেমিক তথা অভিনেতা সত্যদীপ মিশ্রের সঙ্গে নতুন পথে পাড়ি দিলেন মাসাবা গুপ্ত।
নীনা গুপ্তের একমাত্র মেয়ে অবশ্য আথিয়াদের মতো ধুমধাম করে বিয়ে সারেননি। বরং শুক্রবার সকালে আদালতে গিয়ে সইসাবুদ করে সত্যদীপের সঙ্গে ‘বিবাহিত’ তকমা পরেছেন। সঙ্গে পরিবার এবং ঘনিষ্ঠেরা ছিলেন। এবং অবশ্যই মা নীনা গুপ্ত এবং জন্মদাতা ভিভ রিচার্ডস।
নিজেদের বিয়ের খবরটা ইনস্টাগ্রামে দিয়েছিলেন মাসাবা। তবে আর পাঁচটা খ্যাতনামীদের মতো বিয়ের অনুষ্ঠানে জাঁকজমকহীন কেন? প্রশ্ন উঠেছে। তার উত্তরে ‘ভোগ’ পত্রিকাকে মাসাবা বলেছিলেন, ‘‘এই অন্তরঙ্গ মুহূর্তকে শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই দু’জনেই। তা ছাড়া, অযথা বিপুল অর্থনষ্ট করাটাও উচিত মনে হয়নি আমাদের।’’
মাসাবার মতে, ‘‘ব্যক্তিগত ঘেরাটোপে সকলের প্রবেশ ঘটানো যায় না। এটাই বিশ্বাস করি আমরা দু’জনে। ফলে আজকের মতো স্মরণীয় দিনে শুধুমাত্র পরিবার আর প্রিয়জনেরাই উপস্থিত ছিলেন।’’
৩৩ বছরের মাসাবার অবশ্য এটাই প্রথম বিয়ে নয়। এর আগে প্রযোজক মধু মন্টেনার সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন তিনি। তবে ২০১৫ সালের সেই বিয়ে টিকেছিল মোটে ৪ বছর। ’১৯-এ মন্টেনার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর।
মাসাবার মতো সত্যদীপেরও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। বলিউডের অতি পরিচিত মুখ অদিতি রাও হায়দারির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়েছিল ২০১৩ সালে।
দু’জনেই দ্বিতীয় বার সংসার পেতেছেন। এ নিয়ে ‘ভোগ’ পত্রিকায় মাসাবা বলেছেন, ‘‘আমরা দু’জনে আগেও এ পথে গিয়েছি। ফলে দেখলাম, এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে নিজেদের উপর অযথা চাপ বাড়িয়ে লাভ নেই। শুধু মূহূর্তগুলি উপভোগ করতে চেয়েছি।’’
শুক্রবার আদালতে বিয়ের পর ছিমছাম ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মাসাবা আর সত্যদীপের প্রিয়জনেরা জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের পাশে দেখা গিয়েছে নীনা এবং ভিভকে। সঙ্গে ছিলেন নীনার বর্তমান স্বামী বিবেক মেহরাও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের কোনও দিনই আইনি বিয়ে সারেননি নীনা। তবে আশির দশকে মাসাবার জন্মের পর ভিভের সঙ্গে সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করেননি তিনি। শুক্রবার মেয়ের বিয়ের পর ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ভিভকে পাশে পেয়েছেন নীনা।
ছিমছাম অনুষ্ঠান হলেও এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে নিজেদের সাজপোশাকের দিকে বেশ খেয়াল রেখেছেন মাসাবারা। নবদম্পতির পরনে উঠেছে মাসাবারই ডিজাইন করা পোশাক।
ইনস্টাগ্রামের ছবিতে দেখা গিয়েছে, মাসাবার পরনে ছিল গোলাপির আভার লেহঙ্গা। সঙ্গে মায়ের দেওয়া গয়নায় নিজেকে মানানসই ভাবে সাজিয়েছেন তিনি। নতুন কনের সাজের সঙ্গে রং মিলিয়ে গোলাপিতে সেজেছিলেন সত্যদীপও। তাঁর গায়ে উঠেছে বরফি ছাপের গোলাপি গলাবন্ধ কুর্তা এবং পাজামা।
ইনস্টাগ্রামে বিয়ের ছবি পোস্ট করেছেন মাসাবা। সেই পোস্টে নিজেদের জন্য ‘প্রেম, শান্তি, স্থায়িত্ব এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদানন্দের প্রার্থনা’ও করেছেন। ক্যাপশন বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সত্যদীপকে ধন্যবাদও দিয়েছেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে নবদম্পতিকে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিয়েছেন সদ্য রাহুলের সঙ্গে ঘরপাতা আথিয়া শেট্টি-সহ বলিউডের একগুচ্ছ তারকা। আয়ুষ্মান খুরানা, অনন্যা পাণ্ডে, অনিল কপূর থেকে মীরা কপূর-সহ অনেকে।
মাসাবার বিয়ের পর আর একটি প্রশ্নও উঠছে, নবদম্পতির মধ্যে আলাপ-পরিচয় কবে জমে উঠল? আসলে নেটফ্লিক্সের সিরিজ় ‘মাসাবা মাসাবা’র শুটিংয়ের সময় দু’জনের আলাপ। এর পর থেকে হামেশাই পরস্পরের ইনস্টাগ্রামে টুকরো মন্তব্য করতেন তাঁরা। তা থেকেই নাকি ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
২০২০ সাল থেকেই নাকি দু’জনের মধ্যে মন দেওয়ানেওয়ার পর্ব শুরু হয়েছিল। শুটিংয়ের কাজ মিটিয়ে হামেশাই একসঙ্গে দেখা যেত তাঁদের।
বলিউডে ডিজাইনার হিসাবে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন মাসাবা। আবার মায়ের মতো নিয়মিত না হলেও দু’একটি ওটিটি-র মঞ্চে তাঁর অভিনয়ও দেখা গিয়েছে। একটি তো নিজের নামেই—‘মাসাবা মাসাবা’। ‘মডার্ন লভ: মুম্বই’-এর একটি পর্বেও চুটিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি।
মাসাবার তুলনায় ছোট-বড় মিলিয়ে দু’পর্দায় বেশ পরিচিত সত্যদীপ। ২০১১ সালে রাজকুমার গুপ্তের ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’-তে অভিষেকেই নজর কেড়েছিলেন।
বলিউডে এর পর ‘চিল্লর পার্টি’, ‘বম্বে ভেলভেট’ এবং অবশ্যই হালফিলের হৃতিক রোশন এবং সইফ আলি খানের সঙ্গে ‘বিক্রম বেদা’। নিজেকে শক্ত জমির উপর দাঁড় করিয়েছেন সত্যদীপ।
বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায়ও চুটিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন সত্যদীপ। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ডিগ্রিধারীর ওয়েব সিরিজ় ‘ইললিগাল’ বা ‘তাণ্ডব’ দেখে অনেকেই মুগ্ধ।
সত্যদীপকে নিজের জীবনে পেয়ে যে সদর্থক বদল ঘটেছে, তা জানিয়েছেন মাসাবা। তাঁর কথায়, ‘‘মজার কথা হল, ‘মাসাবা মাসাবা’-য় আমার প্রাক্তন স্বামীর ভূমিকায় ছিলেন সত্যদীপ। আমার মনে হয়, আমরা দু’জনের চিন্তাভাবনায় মিল রয়েছে। একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যেতে পারি। দু’জনেই শান্ত, সুস্থ জীবনযাপন পছন্দ করি। বাইরে যা কিছুই হোক না কেন, যেন আমাদের ছুঁতেও পারে না। এটা বিশেষ অনুভূতি।’’