নবীন নিশ্চল। বলিউডের ‘চকলেট বয়’। সত্তরের দশকে পুরুষের চেয়ে তাঁর মহিলা অনুরাগীর সংখ্যাই ছিল বেশি। এমনকি, তাঁর এত খ্যাতি দেখে রাকেশ খন্নার মতো অভিনেতাও এক সময় নিজের কেরিয়ার নিয়ে সতর্ক হয়ে পড়েছিলেন।
১৯৭০ সালে ‘সাবন ভাদো’ ছবিতে রেখার সঙ্গে কাজ করে বলিজগতে পা রাখেন নবীন। তার পর একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি। পরবর্তী কালে ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল মে’, ‘আশিক বনায়া আপনে’, ‘খোসলা কা ঘোসলা’-র মতো ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
২০১১ সালে ‘ব্রেক কে বাদ’ ছবিতে তাঁকে শেষ বারের মতো বড়পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায়। শুধু বলিউডই নয়, পঞ্জাবি ছবিতেও কাজ করেছেন নবীন। ছোটপর্দার দর্শকদেরও নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে মাতিয়ে রেখেছিলেন।
অভিনেতা নবীনকে শ্রদ্ধা করতেন বহু বলি তারকা। এমন সফল এক জন অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবনে নারীচরিত্রের আনাগোনা এত বেশি ছিল যে, এই কারণে এক সময় জেলও খাটতে হয়েছিল অভিনেতাকে।
কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকাকালীন তিনি নীলু কপূরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নীলু অভিনেত্রী না হলেও বলিপাড়ার পরিচিত মুখ ছিলেন। অভিনেতা দেব আনন্দের ভাইঝি এবং পরিচালক শেখর কপূরের বোন ছিলেন নীলু।
বিয়ের পর নবীনের জীবনে আরও সাফল্য আসে। দুই সন্তান ও স্ত্রী-সহ তাঁর সংসার বেশ সুন্দর সেজে উঠেছিল। কিন্তু সেই সময় তিনি এক অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
অভিনেত্রীর নাম পদ্মিনী কপিলা। দিনের বেশির ভাগ সময় তাঁর সঙ্গেই সময় কাটাতেন নবীন। বলিউডের এই তারকা যে সম্পর্কে রয়েছেন, এই নিয়ে বলিপাড়ায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। নীলুর কাছেও এই খবর পৌঁছয়।
স্বামীর জীবনে তিনি ছাড়াও দ্বিতীয় নারী রয়েছেন তা মানতে পারেননি তিনি। তাই দু’জনে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। বিবাহবিচ্ছেদের পর নবীন ও পদ্মিনী একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
নবীনের সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীনই পদ্মিনী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পরিচালক প্রকাশ মেহরার সঙ্গে। এর পর অভিনেত্রী নিজেই নবীনের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন।
পদ্মিনীর সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়ার পরেও নবীনের জীবনে আরও এক নারীচরিত্রের আবির্ভাব হয়। এ বার দিল্লির বাসিন্দা পাম্মির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান তিনি। সেই সময়ে নবীন অন্য কোনও সম্পর্কে না থাকলেও পাম্মি বিবাহিত ছিলেন।
নবীনের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে থাকার প্রভাব পড়তে থাকে পাম্মির মেয়ের সংসারে। তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বার করে দেয়। নিজের সাজানো সংসার ছেড়ে মায়ের কাছে এসে থাকতে শুরু করেন পাম্মির মেয়ে।
এই ঘটনায় অনুশোচনায় ডুবে যান পাম্মি। নবীনের সঙ্গে বাড়াতে থাকেন দূরত্ব। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির চাপে এই সম্পর্কেও ইতি টানতে বাধ্য হন দু’জন।
তিন তিন বার সম্পর্কে বিচ্ছেদের পর আবার নতুন সঙ্গিনীর খোঁজশুরু করেন নবীন। সেই সময় গীতাঞ্জলি নামের এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেতার। তিনি ছিলেন বিবাহবিচ্ছিন্না।
বিবাহবিচ্ছেদের পর নতুন জীবনসঙ্গী খুঁজছিলেন গীতাঞ্জলি। নবীনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিয়ের মণ্ডপ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিয়ের পর নবীনের অন্য রূপ দেখেন তিনি।
মুম্বইয়ের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন গীতাঞ্জলি। নবীন থাকতেন পুণেয়। নিজের ইচ্ছা মতো মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে আসতেন নবীন। গীতাঞ্জলির দাবি, মদ্যপান করে তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। এমনকি, গীতাঞ্জলিকে নাকি বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার হুমকিও দিতেন অভিনেতা।
এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন গীতাঞ্জলি। তাঁর ঘরের ভিতর থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়। এই নোটে লেখা ছিল, তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী নবীন এবং নবীনের ভাই প্রবীণ।
প্রবীণ নাকি তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুমন্তব্য করতেন। সেই কারণেই নবীন তাঁর উপর অত্যাচার করতেন। পুলিশ এই অভিযোগে অভিনেতাকে গ্রেফতার করে।
জেল খাটার কিছু দিন পরেই জামিনে ছাড়া পান নবীন। এই ঘটনার পাঁচ বছর পর হৃদ্রোগে মারা যান তিনি।