চিড়িয়াখানার প্রাচীরের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে কখনও দর্শনার্থীদের দিকে হাত নাড়ছে। কখনও বা তাঁদের ছুড়ে দেওয়া খাবার লুফে নিচ্ছে। এক ঝলকে দেখলে ভালুক বলে মনে হলেও সেগুলি কি আসলে ফারের কোট পরা দু’পেয়ে? এমনধারা প্রশ্নবাণে জর্জরিত চিনের এক চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
পূর্ব চিনের ঝেজিয়াং প্রদেশে হ্যাংঝৌ চিড়িয়াখানার ভালুকদের নিয়ে সন্দিহান সমাজমাধ্যমের একাংশ। তাদের দাবি, ওই চি়ড়িয়াখানার ভালুকেরা সবাই ছদ্মবেশী দু’পেয়ে। ভালুকের ছদ্মবেশে প্রতারণা করছেন তাঁরা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সন্দিহান প্রশ্নের জবাব দিতে অভিনব পন্থা নিয়েছেন তাঁরা।
সান বেয়ার প্রজাতির ওই বণ্যপ্রাণীরা যে ছদ্মবেশী দু’পেয়ে নন, তা বোঝাতে ভালুকের কণ্ঠস্বর নকল করেই যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
সমাজমাধ্যমে ওই পোস্টে যে ভালুকের নকল কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, সেটির নাম অ্যাঞ্জেলা। তার কণ্ঠে হ্যাংঝৌ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘কয়েক জনের মনে হচ্ছে, আমি মানুষের মতো দাঁড়িয়ে থাকি.... তবে মনে হয় তাঁরা আমাকে খুব ভাল করে বোঝেন না।’’
অ্যাঞ্জেলার কণ্ঠটি বলে চলে, ‘‘ভালুকের কথা মনে এলে প্রথমেই মাথায় আসে অসীম শক্তিশালী একটা বড়সড় চেহারার কথা... কিন্তু সব ভালুক যে এমন বিশালাকার দৈত্যের মতো ভয়ঙ্কর চেহারার, তা নয়।’’
চিনের ওই চিড়িয়াখানায় ভালুকদের দু’পায়ে দাঁড়ানো কয়েকটি ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সন্দেহের তির ছুড়তে শুরু করেছেন অনেকে।
১৪ সেকেন্ডের এমনই একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের দিকে মুখোমুখি দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে লম্বা গলা উঁচিয়ে রয়েছে একটি ‘ভালুক’। কিছু ক্ষণ দর্শনার্থীদের সঙ্গে চোখাচুখির পর সেটি নিজের আস্তানার ঢুকে যাচ্ছে। যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
অনেকেই বলাবলি করেছেন, ঠিক যেন মানুষের মতো দাঁড়িয়ে পড়ছে ভালুকগুলি। লোকজনের দিকে হাত নাড়ছে। আশপাশ থেকে ছুড়ে দেওয়া খাবার দু’হাতে লুফে ধরার চেষ্টা করছে। কখনও পাথরের উপরে বসে পড়ছে। তবে কি সেটি ভালুকের মতো পোশাক পরা কোনও মানুষ?
চিনের ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সান বেয়ার প্রজাতির ভালুক উত্তর আমেরিকার গ্রিজ়লি বিয়ারের মতো দৈতাকার নয়। তারা ছোটখাটো চেহারার হয়। এই বিপন্ন প্রজাতির ভালুকেরা দুনিয়ার সবচেয়ে ছোট আকারের ভালুক।”
চিনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহমত ইংল্যান্ডের চেস্টার চিড়িয়াখানার অ্যাশলে মার্শাল। ওই ভিডিয়োগুলি দেখার পর তাঁর মত, সেগুলি নিশ্চিত ভাবে আসল ভালুক। তিনি আরও জানিয়েছেন, সান বেয়ার প্রজাতির ভালুকদের দেখে অনেক সময় মনে হয় যেন তারা ছদ্মবেশী দু’পেয়ে।
সমাজমাধ্যমের পোস্টে বলা হয়েছে, সান বেয়ার প্রজাতির ভালুকেরা দাঁড়িয়ে থাকলেও উচ্চতায় ৪ ফুট ৩ ইঞ্চির হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চলের এই বাসিন্দাদের এক-একটি ২৫ থেকে ৬৫ কিলো ওজনের হয়।
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে চিড়িয়াখানার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভালুক সাজার জন্য ফারের কোটে থাকতেই পারবেন না কোনও মানুষ। কারণ, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তীব্র গরমে ওই শীতের পোশাকে কয়েক মিনিটের বেশি টেকা অসম্ভব।
চিনের অন্যান্য চিড়িয়াখানায় এ হেন ‘জোচ্চুরি’র অভিযোগ আগেও উঠেছে। অভিযোগ, এক বার কুকুরদের গায়ে রং করিয়ে সেগুলিকে আফ্রিকার বিড়াল বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
২০১৯ সালে চ্যাংঝৌ প্রদেশের ‘ইয়াংচেং ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল ওয়ার্ল্ড’ নামে চিড়িয়াখানায় গোরিলার ছদ্মবেশে নাকি ঘুরে বেড়াতেন সেখানকার দুই কর্মী।
‘ইয়াংচেং ওয়াইল্ড অ্যানিম্যাল ওয়ার্ল্ড’-এর বিরুদ্ধে এ হেন অভিযোগ ওঠার পর ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, ‘এপ্রিল ফুল’ দিবসে খানিক মজা করার জন্যই ওই কাণ্ড করা হয়েছিল।
দুনিয়ায় এমন জোচ্চুরির উদাহরণ বিরল নয় বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের। কায়রোর একটি চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ধোঁকা দিতে নাকি গাধার গায়ে রং মাখিয়ে জেব্রা হিসাবে সাজিয়ে রাখা হত।
মিশরের এক ছাত্রের নজরে সেই জোচ্চুরি ধরা পড়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই সে দেশের পশু চিকিৎসকেরা একযোগে জানিয়েছিলেন, ওই প্রাণীটি জেব্রা নয়, পুরোদস্তুর গাধা।