চিন থেকে আস্তে আস্তে উধাও হয়ে যাচ্ছেন বিত্তশালীরা! সে দেশে কমছে বড়লোকদের সংখ্যা। না, তাঁরা রহস্যময় ভাবে গায়েব হচ্ছেন না, বরং পাততাড়ি গোটাচ্ছেন সে দেশ থেকে।
চিনে বড়লোকদের দেশ ছাড়ার চল শুরু হয়েছে বছর দুয়েক আগে থেকেই। গত বছরেও একাধিক বড় ব্যবসায়ী চিন ছেড়েছেন।
২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ২,৭০০ শতকোটিপতিদের মধ্যে ৬০০ জনেরও বেশি চিনের বাসিন্দা ছিলেন। তবে ফোর্বস পত্রিকা অনুযায়ী, গত বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬২-তে।
কিন্তু কেন এই বিত্তশালীরা চিন-বিমুখ? আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ এবং সে দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশের কারণেই দেশ ছাড়ছেন চিনের বড়লোকেরা। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের অর্থও।
দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের অর্থ বিদেশে নিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজছেন চিনের অভিজাতরা। যে কারণে চাপের মুখে পড়ছে শি জিনপিং সরকার।
বর্তমানে চিনের সরকার নিয়ম করে দিয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি বছরে কেবল ৫০ হাজার ডলার দেশের বাইরে পাঠাতে পারেন। তবে চিনের ধনীরা তাঁদের টাকা দেশের বাইরে পাঠাতে এতটাই উঠেপড়ে লেগেছেন যে, কখনও কখনও বেআইনি ভাবেও টাকা দেশের বাইরে পাঠাচ্ছেন তাঁরা। অন্তত এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
গত বছরের অগস্টে সাংহাইয়ের পুলিশ ১১০ লক্ষ পাউন্ডের বেশি অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল।
অতিমারির আগে চিন থেকে প্রতি বছর ১৫ হাজার কোটি ডলার স্রেফ পর্যটকদের হাত ধরে বিদেশে পাড়ি দিত বলে দাবি করেছে ফরাসি ব্যাঙ্কগোষ্ঠী নাটিক্সিস।
করোনা পরবর্তী আন্তর্জাতিক পর্যটন আগের অবস্থায় না পৌঁছলেও আমেরিকার উচ্চ সুদ এবং দুর্বল ইউয়ানের ফলে বিত্তবান চিনারা তাঁদের অর্থ অন্য দেশে সরিয়ে ফেলছেন। এমনটাই দাবি করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
২০২৩ সালের প্রথমার্ধে, চিনের অর্থ আদানপ্রদানের ভারসাম্যে ১৯৫০ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। এই সূচকের মাধ্যমে দেশে অর্থ আদানপ্রদানের হিসাব রাখে সরকার। যা দেখে অর্থনীতিবিদেরা দাবি করেছিলেন, চিনের টাকা বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিনের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক নীতি এবং ব্যবসার সুযোগ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার কারণেই নিজেদের সঞ্চয় দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চাইছেন সে দেশের বিত্তশালীরা।
২০২১ সালে জিনপিং সরকার চিনের বিত্তশালীদের দেশের স্বার্থে তাঁদের সম্পদ আরও বেশি করে ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০১৫ সালে চিনের মুদ্রা ইউয়ানের দাম পড়ার পর হাজার হাজার কোটির ক্ষতির মুখে পড়ে চিন। তার পর থেকেই দেশের সম্পদের উপর দখল পোক্ত করার চেষ্টা করেছে বেজিং। এই সময়ে জ্যাক মা-র মতো চিনের ধনকুবেরেরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে খোলাখুলি প্রশ্ন করতে শুরু করলে আরও কড়া হয় সরকার।
এই সব কারণেই চিনের বিত্তশালীরা চিন থেকে পাতাতাড়ি গোটাতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের একাংশ এ-ও মনে করছে, আয়তনে ছোট প্রতিবেশীদের ভয় দেখিয়ে অনেক দিন ধরেই সেই দেশগুলির উপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে চিন।
পাশাপাশি ওই ছোট দেশগুলির সামনে সামরিক ক্ষমতার আস্ফালনও দেখাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। ফলে দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকেও বিগত কয়েক মাস ধরে চিনের অনেক বিত্তশালী ব্যবসায়ী সে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।