জল্পনা ছিল অনেক দিন থেকেই। এ বার চিন সাগরের একাধিক দ্বীপের গোপন নৌঘাঁটিতে চিনা পিপলস লিবারেশন আর্মির সমরসজ্জার ছবি সামনে আনল আমেরিকায় চিত্র সংবাদ সংস্থা গেটি ইমেজেস।
গেটির চিত্রগ্রাহক এজরা আকায়ান আকাশপথে নজরদারি চালিয়ে চিনা যুদ্ধবিমানের হ্যাঙ্গার, এয়ার স্ট্রিপ, ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ, এমনকি ডুবোজাহাজের গোপন ডেরার খোঁজও পেয়েছেন। তুলে এনেছেন বেশ কিছু ছবি।
দক্ষিণ চিন সাগরের ওই বিতর্কিত অঞ্চলে প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেই সক্রিয় চিন। তবে প্রবালপ্রাচীরে ঘেরা ছোট্ট পাথুরে দ্বীপগুলিতে সামরিক ঘাঁটি বানানোর কথা কখনওই স্বীকার করেনি তারা।
পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি, মিসচিফ রিভ, গাভেন রিফস, সুবি রিফ, কুয়ার্টেরন রিফ, হিউজ রিফের মতো প্রবালপ্রাচীরের উপর বানানো কৃত্রিম দ্বীপগুলিতে চিনা ফৌজের নৌ এবং বিমানঘাঁটি রয়েছে।
বিতর্কিত স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ওই দ্বীপগুলির মধ্যে কয়েকটি কৃত্রিম। অর্থাৎ, প্রবালপ্রাচীরকে ভিত্তি করে সেগুলি নির্মাণ করেছেন চিনা ফৌজের ইঞ্জিনিয়াররা। এমন দ্বীপের উপর এয়ারস্ট্রিপও বানিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনাচক্রে, দক্ষিণ চিন সাগরের ওই অংশেই রয়েছে ‘গুপ্তধন’— প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের এক বিপুল ভান্ডার। ‘কৌশলগত ঘাঁটি’ বানিয়ে নৌ-আধিপত্য বজায় রাখতে বেজিং তাই এত তৎপর বলে মনে করেন কূটনীতিবিদদের একাংশ।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক পত্রিকা ‘আইএইচএস জেনস্ ডিফেন্স উইকলি’ প্রায় সাত বছর আগে দক্ষিণ চিন সাগরের কৃত্রিম দ্বীপে পিএলএর ঘাঁটি নির্মাণের কথা জানিয়েছিল। ওয়াশিংটনের ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এ সংক্রান্ত উপগ্রহ ছবিও প্রকাশ করেছিল।
দক্ষিণ চিন সাগরের পারাশেল দ্বীপপুঞ্জের উডি দ্বীপেও চিনা সেনা বড় ঘাঁটি বানিয়েছে। তার অদূরে ফেয়ারি ক্রস রিফে গড়া হয়েছে দশ হাজার ফুট লম্বা একটি রানওয়ে। যাতে নামতে পারে চিনা বায়ুসেনার আধুনিক যুদ্ধবিমান।
দক্ষিণ চিন সাগরের ওই বিতর্কিত অঞ্চলকে ‘নিজেদের’ বলে দাবি করে ব্রুনেই, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনামের মতো দেশও। তাদের মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা চিনা ফৌজের সাদার্ন থিয়েটার কমান্ড ওই ঘাঁটিগুলি বানিয়েছে।
‘সেন্টার ফর দ্য নিউ আমেরিকার সিকিউরিটি’-র গবেষক টম শোগার্ট সম্প্রতি জানান, ওই দ্বীপগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে চিন।
সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, ওই গোপন দ্বীপের ঘাঁটিতে রয়েছে একাধিক চিনা গুপ্তচর জাহাজও। যাদের মাধ্যমে ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান-সহ একাধিক পড়শি দেশের উপর চলে নজরদারি।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের কাছে এখন রয়েছে চিনা গুপ্তচর জাহাজ ইউয়ান ওয়াং-৬। ভারত মহাসাগরে ঢুকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)-র ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের উপর নজরদারি করা তার উদ্দেশ্য।
আগামী ১০ বা ১১ নভেম্বর ওড়িশা উপকূলে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে ২,২০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করতে চলেছে ভারত। তার গতিবিধি ‘নজর’ করাই ইউয়ান ওয়াং-৬-এর এ বারের ‘মিশন’।
নয়াদিল্লির আপত্তি উপেক্ষা করে অগস্টে চিনা নজরদারি জাহাজ ইউয়ান ওয়াং-৫ অগস্ট মাসের গোড়ায় শ্রীলঙ্কার হাম্বনটোটা বন্দরে ভিড়েছিল। ভারতীয় উপগ্রহের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর কাজ করে ওই জাহাজটি।
আগামী দিনে চিন যে পড়শি দেশগুলির প্রতি আগ্রাসী মনোভাব বজায় রেখেই চলবে, অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম সম্মেলেনে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বক্তৃতাতেই তা স্পষ্ট হয়েছে গিয়েছে।
পিপলস লিবারেশন আর্মিকে আরও শক্তিশালী করার বার্তা দিয়ে জিনপিং জানিয়েছেন, ২০৪৯ সালের মধ্যেই সামরিক শক্তিতে পশ্চিমি দুনিয়াকে পিছনে ফেলে দেবে চিন।