Chilukuri Santhamma

দু’লাঠিতে ভর করে ৬০ কিমি পেরিয়ে যান পড়াতে, ৯৩ বছরেও শিক্ষাদান থামেনি অধ্যাপিকার

পদার্থবিদ্যা পড়ানোর পাশাপাশি দানধ্যানেও যথেষ্ট আগ্রহী চিলুকুরি সন্তাম্মা। তিনি থাকেন ভাড়াবাড়িতে। নিজের বাড়িটি বিবেকানন্দ মেডিক্যাল ট্রাস্ট নামে সংগঠনকে দান করে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১৬:২৮
Share:
০১ ২০

ভোর ৪টে বাজলেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন। এর পর প্রাত্যহিক কাজকর্ম এবং প্রাতরাশ সেরে দু’হাতের লাঠিতে ভর করে রওনা দেন সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। অন্ধ্রপ্রদেশের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা পড়ান চিলুকুরি সন্তাম্মা।

০২ ২০

বিশ্ববিদ্যালয়ের রওনা দেওয়ার আগে ছাত্রছাত্রীদের জন্য নোট্‌স তৈরি করতে ভুল হয় না ৯৩ বছরের এই অধ্যাপিকার। অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনমের এই নবতিপর বৃদ্ধার দৈনিক রুটিন অনেকটা এ রকমই।

Advertisement
০৩ ২০

গত ৭ দশক ধরে শিক্ষাদানে ব্রতী সন্তাম্মা। প্রায় ছ’বছর তিনি পড়াচ্ছেন সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি তাঁর দু’হাঁটুর প্রতিস্থাপন হয়েছে। ফলে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়।

০৪ ২০

নিজের বাড়ি থেকে সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দৈনিক প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয় অধ্যাপিকাকে। তা সত্ত্বেও ক্লাসে যেতে এক মুহূর্তও দেরি হয় না সন্তাম্মার।

০৫ ২০

অধ্যাপিকার শৃঙ্খলাবোধ যে শিক্ষনীয়, তা মানেন সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও। তাঁর পদার্থবিদ্যার ক্লাসের নিয়মিত ছাত্রী হাসিনার কথায়, ‘‘সন্তাম্মার ক্লাস কখনও বাদ দিই না। তাঁর ক্লাসের অপেক্ষায় থাকি। শৃঙ্খলাবোধ হোক বা মনপ্রাণ ঢেলে কিছু করা, সবেতেই তিনি আমাদের আদর্শ।’’

০৬ ২০

পদার্থবিদ্যায় সন্তাম্মার অগাধ জ্ঞানেরও প্রশংসা করেছেন স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী হাসিনাও। সেঞ্চুরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে অপ্টোমেট্রি নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘‘সন্তাম্মা পদার্থবিদ্যার চলমান এনসাইক্লোপেডিয়া।’’

০৭ ২০

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পড়ানোর পাশাপাশি দানধ্যানেও যথেষ্ট আগ্রহী সন্তাম্মা। তিনি থাকেন ভাড়াবাড়িতে। নিজের বাড়িটি বিবেকানন্দ মেডিক্যাল ট্রাস্ট নামে সংগঠনকে দান করে দিয়েছেন। বিশাখাপত্তনমের জনজাতিদের নামমাত্র মূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করে ওই ট্রাস্ট।

০৮ ২০

নিজের জীবনের শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না সন্তাম্মার। ১৯২৯ সালের ৮ মার্চ মছলিপত্তনমে জন্ম তাঁর। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার পর থেকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন তাঁর কাকা।

০৯ ২০

ছোট থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহ ছিল সন্তাম্মার। বিশাখাপত্তনমের এভিএন কলেজে পড়াশোনার পর অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক-সহ স্নাতক হন। কলেজে পড়ার সময় ১৯৪৫ সালে মহারাজা বিক্রম দেও-র হাত থেকে পদার্থবিদ্যায় সোনার পদক লাভ করেন।

১০ ২০

অন্ধ্রের ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই মাইক্রোওয়েভ স্পেকট্রোস্কপিতে ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন সন্তাম্মা। সে সময়কার ওই ডিগ্রি ছিল পিএইচডি-র সমতুল।

১১ ২০

ডিএসসি ডিগ্রি লাভের পর অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় লেকচারার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন সন্তাম্মা। ১৯৫৬ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ সায়েন্সে যোগ দেন তিনি।

১২ ২০

লেকচারার থেকে অধ্যাপিকা। এমনকি, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে অনুসন্ধানকারী আধিকারিক হিসাবেও কাজ করেছেন সন্তাম্মা। পরে রিডার হিসাবেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।

১৩ ২০

কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিএসটি)-তে অনুসন্ধানকারী দলের নেতৃত্বও দিয়েছেন সন্তম্মা।

১৪ ২০

১৯৮৯ সালে ৬০ বছর বয়সে শিক্ষাদানের চাকরি থেকে অবসর নেন সন্তাম্মা। তবে অবসরের পরেও পড়ানোর নেশা পিছু ছাড়েনি তাঁর। সে সময় থেকে গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করেন। এক সময় অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক লেকচারার হিসাবে যোগ দেন। অবসরের পর অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ছ’বছর কাজ করেছিলেন সন্তাম্মা।

১৫ ২০

বয়স তাঁর শরীরে থাবা বসালেও থামেননি তিনি। আজও প্রতি দিন ভোর ৪টেয় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন সন্তাম্মা। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘আজও প্রতি দিন ৬টা করে ক্লাস নিতে পারি। সময়জ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাদানে অফুরন্ত কর্মশক্তি থাকা প্রয়োজন। সেটা সবর্দা মাথায় রাখি। বিশাখাপত্তনম থেকে বিজয়নগরমের সেঞ্চুলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে প্রতি দিন কমপক্ষে ৬০ কিলোমিটার সফর করি।’’

১৬ ২০

এ দেশের পাশাপাশি আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা এবং স্পেনের নানা সেমিনারেও অংশ নিয়েছেন সন্তাম্মা। অ্যাটমিক স্পেকট্রোস্কপি এবং মলিকিউলার স্পেকট্রোস্কপি নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ জিতে নিয়েছে পুরস্কারও।

১৭ ২০

পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি বেদ, পুরাণ এবং উপনিষদেও সমান আগ্রহী সন্তাম্মা। তা অবশ্য প্রয়াত স্বামী চিলুকুরি সুব্রক্ষণ্যম শাস্ত্রীর সৌজন্যে। সন্তাম্মা বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। তিনি তেলুগু ভাষার অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই উপনিষদের সঙ্গে পরিচয়।’’

১৮ ২০

গীতার নানা শ্লোকের উপর ভিত্তি করে একটি বই লিখেছেন সন্তাম্মা। ‘ভগবত গীতা- দ্য ডিভাইন ডিরেকটিভ’ নামের ইংরেজি ভাষার ওই বইটি ছাড়া উপনিষদের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও যুবসমাজের জন্য লিখতে চান তিনি। সন্তাম্মা বলেন, ‘‘আজকালকার ছেলেমেয়েদের যাতে কাজে লাগে, এমন এক বই লেখার জন্য উপনিষদের অধ্যয়ন করছি। শীঘ্রই তা নিয়ে বই প্রকাশ করব।’’

১৯ ২০

এই বয়সেও নিজেকে কী ভাবে কর্মক্ষম রেখেছেন সন্তাম্মা? এর নেপথ্যে কী ‘রহস্য’ রয়েছে? সন্তাম্মা বলেন, ‘‘আমার মা বনযক্ষাম্মা ১০৪ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। বয়স তো আমাদের মনের ভাবনা। আর ধনের খোঁজ তো হৃদয়ে মেলে। তাই হৃদয়-মন দুই-ই সুস্থ রাখা উচিত।’’

২০ ২০

কর্মজীবনের দায়িত্ব সেরে যখন অনেকেই অবসরের আনন্দ উপভোগ করেন, তখন কিসের জন্য আজও পড়িয়ে চলেছেন তিনি? এ প্রশ্নের উত্তরেও সোজা ব্যাটে সপাটে ছয় মেরেছেন সন্তম্মা। তাঁর কথায়, ‘‘নিজেকে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি না। তবে আমার মতে, সকলেই কোনও না কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে দুনিয়ায় এসেছি। আমার উদ্দেশ্য, শেষ জীবন পর্যন্ত পড়ানো!’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement