অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তবে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ছিল ভারতের প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। এ বার সেই অভিযোগের তিরে বিদ্ধ ভারতও!
অভিযোগকারী কানাডা। ‘অভিযুক্ত’ ভারত এবং চিন। কিন্তু অভিযোগটা কী?
কানাডা ২০১৯ এবং ২০২১ সালে সে দেশে জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিশন তৈরি করেছিল। প্রথমে কানাডার অভিযোগ ছিল, তাদের জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে চিন।
সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় কানাডার ‘ফরেন ইন্টারফেয়ারেন্স কমিশন’কে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় তদন্ত।
তদন্ত চলাকালীন ভারতের বিরুদ্ধেও সে দেশের জাতীয় নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ করার অভিযোগ তুলেছে ট্রুডো সরকার। তবে চিন এবং ভারত একসঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিল কি না তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কানাডা।
কানাডা যে নথির ভিত্তিতে ভারতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ তুলেছে, সেই নথিও ট্রুডো সরকারকে সরবরাহ করতে বলেছেন তদন্ত কমিশনার।
কমিশন সরকারের দেওয়া সেই নথি পরীক্ষা করবে এবং কানাডা সরকার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কী পদক্ষেপ করেছে তা মূল্যায়ন করবে।
বিদেশি কোনও শক্তির কানাডার জাতীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অবকাশ রয়েছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিশন।
চলতি বছরের ৩ মে-র মধ্যে কমিশন অন্তর্বর্তী তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়ার কথা। চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়বে বছরের শেষ দিনে অর্থাৎ, ৩১ ডিসেম্বর।
চিন এবং ভারতের পাশাপাশি কানাডার নির্বাচন প্রভাবিত করতে রাশিয়া এবং ইরানের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে কমিশন।
কানাডা সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই বিদেশি শক্তিরা চেষ্টা চালিয়েছিল।
গত সেপ্টেম্বরে খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিংহ নিজ্জরের খুনের জন্য কানাডার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ভারতকে নিশানা করেছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কিন্তু দু’সপ্তাহের মাথাতেই সুর নরম করে ট্রুডো জানান বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে সংঘাতের পথে হাঁটতে চান না তিনি।
কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নয়াদিল্লির চাপ সত্ত্বেও ট্রুডোর পক্ষে খলিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা কঠিন কারণ, ট্রুডো একটি সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁকে সমর্থন নিতে হচ্ছে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জগমীত সিংহের।
জগমীত নিজে ঘোষিত খলিস্তানপন্থী। গত অক্টোবরে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতায় জয়শঙ্কর সেই পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে কানাডায় খলিস্তানপন্থীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
দেশ থেকে কানাডার ৪১ জন কূটনীতিককেও বহিষ্কার করেছে ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কারণেই তাঁদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
ফলে খলিস্তনি ‘ইস্যু’ নিয়ে ভারত এবং কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কে বড়সড় চিড় ধরেছে। এবং কানাডা এখন ভারতের দিকে অভিযোগের যে তির ছুড়েছে, তা সেই চিড়কে ফাটলে পরিণত করতে পারে বলেও মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তবে কানাডার তোলা সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে ভারত। ভারতের দাবি, কানাডার সরকার সে দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার যে অভিযোগ এনেছে, তা ভিত্তিহীন। কোনও প্রমাণ ছাড়া কানাডা অভিযোগ তুলেছে বলেও দাবি করেছে ভারত।