গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়েতে শনিবার সাতসকাল থেকেই চোখে পড়ার মতো ব্যস্ততা। আনা হয়েছে বস্তা বস্তা বিস্ফোরক। ২৮ অগস্ট তা দিয়েই ও়ড়ানো হবে ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’— গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ৪০ তলা উঁচু জোড়া বহুতল। সে কাজেই লেগে পড়়েছেন এডিফাইস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইঞ্জিনিয়ার-সহ বিশেষজ্ঞরা।
সুপারটেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেটার নয়ডায় নির্মাণ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করে ওই জোড়া টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। গত বছর টাওয়ার দু’টি গুঁড়িয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে স্থির হয়েছিল, ২১ অগস্ট দুপুর আড়াইটেয় ওই কাজ করা হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এএস বোপন্নার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ২৮ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জোড়া টাওয়ার ভেঙে ফেলতে হবে। সে কাজেরই তোড়জোড় তুঙ্গে।
জোড়া বহুতলের ৪০তলা ভেঙে ফেলা তো চাট্টিখানি কথা নয়। ফলে দিনের পর দিন ধরে ভেঙে ফেলার বদলে অন্য পন্থা নেওয়া হয়েছে। বহুতলের স্তম্ভগুলিতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক গুঁজে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক ঝটকায় সে দু’টি গুঁড়িয়ে ফেলা হবে।
সুপারটেকের জোড়া বহুতল বিস্ফোরণে ওড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছে এডিফাইস ইঞ্জিনিয়ারিং। সংস্থাটির পার্টনার উৎকর্ষ মেহতা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়ায় মোটামুটি ৩,৭০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হবে। সে জন্য প্রতিদিন আড়াইশো থেকে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক বহুতল দু’টির স্তম্ভগুলিতে গোঁজার কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে বলে চার্জিং।’’
উৎকর্ষ আরও বলেন, ‘‘শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দু’টি ভ্যানে করে গ্রেটার নয়ডায় বিস্ফোরক আনা হচ্ছে। তার সুরক্ষার দায়িত্বে ছিল নয়ডা পুলিশ। আমরা প্রথমে পুজো করে তার পর সকাল ১০টা থেকে চার্জিং শুরু করেছি।’’
জোড়া বহুতল ওড়াতে সেখানকার স্তম্ভগুলিতে ড্রিল করে ৯,৬৪টি গর্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন উৎকর্ষ। তাতেই গুঁজে দেওয়া হবে বিস্ফোরক।
শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সুপারটেকে চার্জিংয়ের কাজ চলছিল। উৎকর্ষ জানিয়েছেন, এক দিনে প্রায় ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, স্তম্ভের প্রতি মিটারে অন্তত ৮০ গ্রাম বিস্ফোরক প্রায় ২ মিটার গভীরে গুঁজে দেওয়া হবে।
বিস্ফোরকের মাধ্যমে বহুতল ভাঙার কাজ অবশ্য ভারতে প্রথম নয়। তবে ৪০ তলা সুপারটেকই এ দেশের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং যেখানে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভাঙা হবে। এর আগে এডিফাইস একটি ১৮ তলা বহুতল বিস্ফোরকের সাহায্যে ভেঙেছিল।
বহুতল ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের চরিত্র আলাদা। সাধারণত খননকাজে যে ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়, তা বেশ ভারী ওজনের হয়। তবে সে তুলনায় বহুতলের স্তম্ভে পোরার জন্য বিস্ফোরক এমন ভাবে তৈরি, যাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্তম্ভগুলিই ভেঙে পড়ে। যার জেরে আস্ত বহুতলটিই ভাঙতে ভাঙতে একের পর এক নীচের তলে ধসে পড়তে থাকে।
উৎকর্ষ জানিয়েছেন, সুপারটেকের জোড়া বহুতল ভাঙতে হরিয়ানার পাওয়াল থেকে বিস্ফোরক আনা হয়েছে। সেখানকার কেএমপি এন্টারপ্রাইজ নামে এক সংস্থাকে বিস্ফোরকের বরাত দিয়েছিলেন তাঁরা।
বিস্ফোরণের কাজ শেষ হলে উদ্বৃত্ত বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন উৎকর্ষ। তিনি বলেন, ‘‘এক গ্রাম বিস্ফোরকও এখানে ফেলে রাখা যাবে না। এগুলি সোনার মতোই দামি। ফলে সমস্ত কিছুর হিসাব রাখা হচ্ছে।’’
সুপারটেকে চার্জিংয়ের জন্য ৪৬ জন কাজ করছেন। উৎকর্ষ বলেন, ‘‘আমাদের দলে রয়েছেন ১০ জন স্থানীয় এবং পাঁচ জন দক্ষিণ আফ্রিকার জেট ডেমোলিশন সংস্থার ব্লাস্টার, যাঁরা বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজ করবেন। সেই সঙ্গে ব্রিটেনের এক জন বিশেষজ্ঞকেও এ দলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, ৩০ জন শ্রমিক লাগাতার কাজ করছেন।’’
বিস্ফোরণের সময় সুপারটেকের আশপাশের ঘরবাড়ি বা বহুতলগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকেও তারা নজর রেখেছে বলে দাবি এডিফাইসের। সুপারটেক ভেঙে পড়ার পর যে ধ্বংসাবশেষ তৈরি হবে, তা ধরা পড়বে ত্রিস্তরীয় জালে। সে জন্য মোটা জাল, কাপড় এবং পর্দা ব্যবহার করছে এডিফাইস। পাশাপাশি, সুপারটেকের চারপাশে পরিখার মতো বিশালাকায় গর্তও খোঁড়া হচ্ছে। সুপারটেকে থাকা জিওটেক্সটাইলসেও ইট-বালি-চুন-সিমেন্টের গুঁড়ো ধরা পড়বে বলে জানিয়েছেন উৎকর্ষ।
উৎকর্ষের কথায়, ‘‘৭-৮ মিনিটেই জলের মতো ঝরে পড়বে সুপারটেকের ৪০ তলা জোড়া বহুতল। বিস্ফোরণের গোটা প্রক্রিয়াটির শেষে ধুলোর ঝড় থামতে আরও ৭-৮ মিনিট সময় লাগবে। এই নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণটি এমন ভাবে করা হবে যাতে প্রতিটি তল তার নীচের তলে গিয়ে পড়বে।’’
বিস্ফোরণের সময় সুপারটেকের আশপাশের বহুতলগুলির বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকেও বসেছে এডিফাইস। উৎকর্ষের দাবি, ‘‘সুপারটেকের আশপাশের বাসিন্দারা আমাদের সুরক্ষা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট।’’