হিন্দি সিনেমার পর্দায় এঁরা কতই না সাহসী! কখনও জঙ্গিহানা থেকে রক্ষা করছেন দেশকে। কখনও আবার একার হাতেই ভেস্তে দিচ্ছেন খলনায়কের চক্রান্ত। সে সব কাণ্ডকারখানায় বাহবাও কুড়িয়েছেন। তবে ব্যক্তিগত জীবনে এই বলিউড তারকাদের অনেকেই নাকি ভূতের ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছেন। নিজেদের সে সব অভিজ্ঞতার কথাই অকপটে জানিয়েছেন তাঁরা।
বলিউডে বছর আটেক কাটিয়ে ফেলেছেন কৃতী শ্যানন। এই কয়েক বছরের কেরিয়ারে রোম্যান্টিক ছবির সংখ্যাই বেশি। তার কয়েকটায় কৃতী ঠোঁটকাটা, ভরডরহীন। তবে বড়পর্দার সেই ডাকাবুকো মেয়েটিই এক বার বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। সে অভিজ্ঞতা হয়েছিল রোহিত শেট্টির এক ছবির শুট্যিংয়ের সময়।
২০১৫ সালের সেই ঘটনা আজও মনে রয়েছে কৃতীর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তখন ‘দিলওয়ালে’র শ্যুটিং করছিলাম। আমার রূপটানের দায়িত্বে ছিলেন যে শিল্পী, তাঁর হোটেলের ঘরে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘরে কারও উপস্থিতি টের পান ওই মহিলা। হঠাৎ টেবিল থেকে একটা বডি লোশনের বোতল পড়ে গিয়েছিল। টেবিলে তুলে রাখার পর তা আবার পড়ে যায়। মহিলা অবাক! হাওয়াবাতাস নেই, টেবিল নড়ছে না। তা-ও কী করে বোতলটা পড়ে গেল? ওই রাতে ফাঁকা ঘরে কেউ নাকি তাঁকে ধাক্কাও দেয়। সব শুনে আমরা তো ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম।’’
আর সকলের মতো তেনাদের সম্পর্কে লুকোছাপা নেই তাপসী পান্নুর। সাফ বলেন, তিনি ভূতে বিশ্বাসী! তেনাদের ভয়ও পান। সিনেমার পর্দায় সাহসী নায়িকা সত্যিই এত ভীতু?
নিজেকে ভীতু বলতে ভয়ডর নেই তাপসীর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমেই বলে রাখি আমার খুবই ভূতের ভয়। ভূতেরা সত্যিই রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। এক বার হায়দরাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটিতে শ্যুটিং চলছিল। সে সময় হোটেলের ঘরে একাই ছিলাম। ঘরটা যে ভুতুড়ে, সে গল্প আগেই শুনেছিলাম। হঠাৎ শুনি, পায়ের শব্দ! ভূত নিয়ে আমার যা ভয়! নিজেকে বোঝাতে লাগলাম, এ সবই আমার কল্পনা। তার পর জোর করে ঘুমনোর চেষ্টা করলাম। ভূতের সঙ্গে তো আর লড়াই করা যায় না!’’
১০ বছরের কেরিয়ারে নানা স্বাদের ছবি করেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। ‘আত্মা’ বা ‘রাত অকেলি হ্যায়’-এর মতো হরর ছবিতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সে রকম এক ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ই তাঁর অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয় বলে দাবি।
২০১৩ সালে ‘আত্মা’-য় বিপাসা বসুর সঙ্গে কাজ করেছিলেন নওয়াজ। ওই ছবির প্রযোজক অভিষেক পাঠক বলেন, ‘‘নওয়াজের সঙ্গে একটা দৃশ্যের শ্যুটিংয়ের সময় তাঁর পিছনের দেওয়ালে একটি ফোটো ফ্রেম ঝুলছিল। হঠাৎই সেটি তেরচা হয়ে যায়। তখন শ্যুটিংয়ে নওয়াজ এতটাই মগ্ন যে তা খেয়াল করেননি। সে ভাবেই ওই দৃশ্যটির শ্যুটিং চালিয়ে যান পরিচালক সুপর্ণ বর্মা। পরে ওই ফ্রেমটি দেওয়াল থেকে খসে পড়ে। অথচ ঘরে বিশেষ হাওয়া বইছিল না!’’
নায়িকার সঙ্গে মিষ্টি প্রেম বা খলনায়ককে বেদম পেটানো— হিন্দি ছবিতে এ সবই করে ফেলেছেন বরুণ ধবন। পরের মাসেই ‘ভেড়িয়া’ নামে তাঁর একটি হরর ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। তাতে অতিপ্রাকৃত কাণ্ডকারখানার প্রসঙ্গ উঠে আসবে। বাস্তবে কি তেমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে বরুণের? তাঁর দাবি, ২০১৫ সালের ‘এবিসিডি-২’ শ্যুটিংয়ের সময় অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটেছিল।
বরুণের কথায়, ‘‘লাস ভেগাসে আমরা শ্যুটিং করছিলাম। মিরাজ হোটেলের একটি স্যুইটে আমার থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেটিকে সিনাত্রা স্যুইটও বলা হয়। কারণ ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রা সে শহরে গান গাইতে এলে সেটিতেই থাকতেন। ওই স্যুইটটা সত্যিই ভুতুড়ে। কারণ রাত হলেই হঠাৎ স্যুইটের দরজা খুলে যেত। আর গান গাওয়ার আওয়াজ আসত।’’
ইমরান হাশমি কি ভূতে বিশ্বাস করেন? এ প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেছিলেন, ‘‘আমি বলব না যে ভূত নেই। এ নিয়ে আমার কৌতূহল এখনও মেটেনি। আবার ভূতে বিশ্বাস না করলে ওই ধরনের ছবিও করতাম না। ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে আমি ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’-এর মাঝামাঝিতে রয়েছি।’’
বন্ধুদের সঙ্গে মাথেরানে ছুটি কাটাতে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথাও শুনিয়েছেন ইমরান। হোটেলের ঘরের বাইরে কেউ চিৎকার করছে না? ইমরানকে জানিয়েছিলেন বন্ধুরা। রাতের অন্ধকারে ছুটে গিয়ে দেখেন, কেউ নেই! তবে তখনও চিৎকার থামেনি। সকাল হতেই সে হোটেল থেকে দে ছুট ইমরানরা।
রাজকুমার রাওয়ের ‘স্ত্রী’-কে মনে পড়ে? সে ছবিতে গায়ে কাঁটা দেওয়া দৃশ্যের অভাব ছিল না। শ্রদ্ধা কপূরের সঙ্গে ওই ছবিতে শ্যুটিংয়ের সময় নাকি অদ্ভুতুড়ে ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন রাজকুমার।
রাজকুমার বলেন, ‘‘শ্যুটিংয়ের আগে আমাদের সাফ বলে দেওয়া হয়েছিল, সুগন্ধি মাখবেন না। মেয়েরা যেন চুল খুলে না রাখেন। এবং অবশ্যই একা বাইরে যাবেন না। আমরা রাত ৩টে পর্যন্ত ‘স্ত্রী’-র শ্যুটিং করতাম। এক বার আমাদের দলের লাইট বয় প্রায় ২০-৩০ ফুট উঁচুতে বসেছিল। আচমকা সেখান থেকে পড়ে যায় সে। এর পর চিৎকার করতে থাকে, ‘আমাকে কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছে।’ প়ড়ে গিয়ে এতটাই চোট পায় যে ওকে তিন-চার দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। ওই ঘটনায় সকলেই ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম।’’
‘অ্যালোন’, ‘রাজ’, ‘ডরনা জরুরি হ্যায়’, ‘আত্মা’— বিপাসা বসুর একাধিক হরর ছবি করেছেন। তবে সে সব ছবির শ্যুটিং নিশ্চিন্তেই কেটেছে। তবে ‘ফুটপাত’-এর মতো গ্যাংস্টার ছবিতে নাকি ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর।
ইমরান হাশমির অভিষেক ছবিতে কী হয়েছিল? বিপাসা বলেন, ‘‘মুম্বইয়ের মুকেশ মিলসে আমরা ‘ফুটপাত’ ছবির শ্যুটিং করছিলাম। দিনের বেলায় আমি তিনতলার ঘরে একাই ছিলাম। অন্যরা বাকি ঘরগুলিতে... সাধারণত আমি সংলাপ ভুলে যাই না। তবে প্রতি বার হেঁটে গিয়ে সংলাপ বলার চেষ্টা করছি আর মনে হচ্ছিল যেন কেউ আমাকে বাধা দিচ্ছে।’’
অশরীরীরা কি এত সহজে ধরা দেয়? নীল নীতিন মুকেশও বোধ হয় জবাব খুঁজেছেন। এক বার নাকি তেনাদের উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন তাঁর ‘থ্রি-জি’ শ্যুটিং দলের এক কর্মী।
কী হয়েছিল? সে দিনের কথা জানিয়েছেন নীল নীতিন। তিনি বলেন, ‘‘এমন এক লোকেশনে ‘থ্রি-জি’র শ্যুটিং করছিলাম, যে জায়গাটা ভুতুড়ে বলে মনে করা হয়। এক বার শ্যুটিং চলাকালীন আমাদের লাইট বয় ছুটতে ছুটতে এসে বলেন যে তাঁর পাশে নাকি কেউ দাঁড়িয়ে... এমনকি, তাঁর ভিতর দিয়ে কেউ যেন চলে গেল। প্রথমটায় ভাবলাম, মজা করছেন। তবে তিনি থরথর করে কাঁপছিলেন।’’
বিদেহী আত্মাদের সঙ্গে মোলাকাত হয়নি বটে। তবে তেনাদের আশপাশেই পেয়েছিলেন বলে দাবি সানি লিওনির। তবে তেনাদের ভয় পেলেও দুষ্টু বলতে রাজি নন সানি।
এম টিভির রিয়্যালিটি শো ‘স্প্লিটস্ভিলা’র এক মরসুমের শ্যুটিংয়ের জন্য রাজস্থানে গিয়েছিলেন সানি। সেখানেই নাকি তেনাদের উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সার দিন শ্যুটিংয়ের পর এতই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম! হোটেলের ঘরে ঢোকামাত্রই আমি ঘুমিয়ে কাদা। আমাকে নড়ানো যেত না। তবে এক বার ঘুমের মধ্যেই টের পেলাম, ঘরে যেন কেউ রয়েছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চিৎকার করে উঠলাম, ‘আমাকে ছেড়ে দাও।’ ওই ভূতটার বোধ হয় দয়ামায়া ছিল। আমাকে ছেড়ে চলে গেল। তার পর সব স্বাভাবিক!’’
শ্যুটিং করতে গিয়ে কোনও হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা নেই। তবে ছোটবেলায়ই অশরীরীর দেখা পেয়েছিলেন বলে মনে করেন বরুণ শর্মা। ‘ফুকরে’র চুচা নাকি ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলেন। এই ৩২ বছর বয়সেও সে কথা ভোলেননি তিনি।
বরুণ বলেন, ‘‘ছোটবেলায় মানালিতে বেড়ানোর সময় সে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমরা সকলে গাড়িতে বেরিয়েছি। কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে রাস্তা। আমি গাড়ির ড্রাইভারের পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি রাস্তার উপরে যেন একটা মানুষে মূর্তি। তবে মুহূর্তের মধ্যে তা গায়েব! হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল। আমি কি কল্পনা করছি না সত্যিই কেউ ছিল? আজ পর্যন্ত তা বুঝে উঠতে পারিনি। এমন মনে হয় যেন গত কালই এমনটা হয়েছে। এখনও ভয়ে কেঁপে উঠি।’’
‘বাজিরাও মস্তানি’তে তাঁর বিক্রম দেখে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। তবে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ওই ছবির শ্যুটিংয়ের সময় নাকি খোদ বাজিরাওয়ের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন রণবীর সিংহ।
রণবীর বলেন, ‘‘হাড় হিম করা ওই ঘটনায় ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে গিয়েছিলাম আমি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার এখনও মনে রয়েছে, ‘বাজিরাও’য়ের শ্যুটিংয়ের সেটে একটা কালো দেওয়াল ছিল। তাতে ধুলো পড়ে কিছুটা অংশ ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল। একটা অবয়বও ফুটে উঠেছিল। সেটি ছিল বাজিরাওয়ের। অবিকল তাঁর পাগড়ি, চোখ, গোঁফ। তাঁর দু’টি হাতও দেখা যাচ্ছিল। সকলেই তা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, ওটা বাজিরাওয়ের অবয়ব।’’
হলিউউ থেকে বলিউডের কত ছবিতেই তো দেখা গিয়েছে, অশরীরী কারও শরীরে ঢুকে পড়ে তাঁকে বশ করে ফেলেছে। তেমনটা আবার সত্যিই হয় নাকি! টেলিভিশন তারকা গুরমীত চৌধরি এ বিষয়ে সহমত হতে পারেন। কারণ, তেমনই নাকি তিনি দেখেছিলেন।
টিভির দুনিয়ার বাসিন্দা বলিউডেও পা রেখেছেন। তবে যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন গুরমীত, তা টেলি সিরিজ ‘রামায়ণে’র শ্যুটিংয়ের সময়কার। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী দেবিনা (বন্দ্যোপাধ্যায়)-র সঙ্গে নর্মদার ধারে এক শ্মশানঘাটে শ্যুটিং করছিলাম। ব়ডোদরায় ওই শ্যুটিং আচমকাই থামাতে হয়েছিল। আমার হেয়ারস্টাইলিস্ট হঠাৎই চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছেন। কিছু ক্ষণ পর গুজরাতিতে কথাও বলতে লাগলেন। ওই মহিলা দক্ষিণের। জীবনেও গুজরাতি বলেননি। আমরা ওঁকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও থামতে চান না। পরে তাঁকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখনও একই অবস্থা। সকলের সামনেই এটা ঘটেছিলা। কোনও দিন সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলব না।’’