আশির দশকের গোড়া থেকেই হিন্দি ছবির এবং দক্ষিণী ফিল্মজগতে অভিনয় করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রতি অগ্নিহোত্রী। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন নায়িকা। অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বহুলচর্চিত।
কেরিয়ার শুরুর প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যেই সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিলেন রতি। ১৯৮২ সাল থেকে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন তিনি। ‘মেরা ফয়সালা’, ‘জনি আই লভ ইউ’ এবং ‘ম্যায় আওয়ারা হুঁ’-এর মতো হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জয়-রতি জুটিকে।
শুটিং চলাকালীন সহ-অভিনেতা সঞ্জয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে রতির। কিন্তু বেশি দিন তাঁদের সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বের পর্যায়ে থাকেনি। ধীরে ধীরে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান দুই তারকা।
রতি যে সঞ্জয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, সে খবর পাঁচকান হতে বেশি সময় লাগেনি। কন্যার প্রেমের খবর পৌঁছয় রতির বাবার কানেও। সঞ্জয়ের নাম শুনেই রেগে যান তিনি।
মেয়েকে বার বার সঞ্জয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানতে বলেন রতির বাবা। সঞ্জয় যে রতির জীবনসঙ্গী হিসাবে উপযুক্ত নন, তা রতিকে নানা ভাবে বোঝাতেন রতির বাবা।
কিন্তু রতি তাঁর বাবার কথা কিছুতেই শুনতেন না। সঞ্জয় যে অধিকাংশ সময় মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন, তা অজানা ছিল রতির। কিন্তু রতির বাবা সে খবর জানতেন।
সত্যি জানা সত্ত্বেও মেয়ের বিশ্বাস অর্জন করতে পারছিলেন না রতির বাবা। তাই নিরুপায় হয়ে কন্যাকে হাতেনাতে প্রমাণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি।
আলোকচিত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রতির বাবা। তাঁদের নির্দেশ দেন সঞ্জয়কে বিভিন্ন জায়গায় অনুসরণ করার। সঞ্জয় মাদক সেবনের পর যে ধরনের আচরণ করেন, তা ক্যামেরাবন্দি করার নির্দেশও দেন ভাড়া করা আলোকচিত্রীদের।
রতির বাবার নির্দেশ মেনে কাজ করতে শুরু করে দেন আলোকচিত্রীরা। স়ঞ্জয়ের প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলে অভিনেত্রীর বাবার হাতে তুলে দেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত যথাযথ প্রমাণ জোগাড় করতে পারেন রতির বাবা।
সঞ্জয়ের ছবিগুলি রতিকে ডেকে দেখান তাঁর বাবা। ছবিগুলি দেখার পর যেন পাথর হয়ে পড়েছিলেন রতি। সঞ্জয় যে মাদকাসক্ত তা নিজের চোখে দেখেন অভিনেত্রী।
রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সঞ্জয়কে বিয়ে করার পর অভিনয় জগৎ থেকে সরে যাবেন। স্বামী-সংসার-সন্তান নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন বলে ঠিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু সঞ্জয়ের মাদক নেওয়ার ছবি দেখার পর স্বপ্নভঙ্গ হয় নায়িকার।
রতির বাবা যে তাঁর ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন, তা অবশেষে বুঝতে পারেন রতি। প্রমাণ পেয়ে বলি অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন নায়িকা। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মনমরা হয়েছিলেন বলে তার প্রভাব পড়ে রতির কেরিয়ারেও।
বিচ্ছেদের কারণে কাজের দিকে মন দিতে পারতেন না রতি। কিন্তু বেশি দিন একা থাকতে হয়নি নায়িকাকে। ১৯৮৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পপতি অনিল ভিরওয়ানিকে বিয়ে করেন রতি। বিয়ের এক বছর পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
কিন্তু বিবাহিত জীবনও সুখের হয়নি রতির। ৩০ বছর ধরে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হয়েছিলেন অভিনেত্রী। নিজের কেরিয়ারেও ইতি টেনে দেন তিনি। ৫৪ বছর বয়সে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন রতি।
বর্তমানে পুত্র তনুজ ভিরওয়ানির সঙ্গে থাকেন রতি। মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয় জগতে নেমেছেন তনুজ। ‘লভ ইউ সোনিয়ো’, ‘পুরানি জিন্স’ এবং ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ ছবিতে কাজ করেছেন তনুজ। এ ছাড়াও ‘ইনসাইড এজ’, ‘কোড এম’ এবং ‘মাসাবা মাসাবা’র মতো জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে রতির পুত্র তনুজকে।