হিন্দি ফিল্মজগতে কপূর পরিবার নিজের জায়গা করে নিলেও পড়াশোনার দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে তারা। পৃথ্বীরাজ কপূর থেকে রাজ কপূর, শম্মি কপূর, শশী কপূর, রণধীর কপূর, ঋষি কপূর, রণবীর কপূরের মতো কপূর পরিবারের পুত্ররা কেউ স্কুলের গণ্ডি পার করেননি। সেই নজির ভাঙলেন শম্মির পুত্র আদিত্যরাজ কপূর।
৬৭ বছর বয়সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে নজির গড়লেন আদিত্যরাজ। আদিত্যরাজ কপূর পরিবারের প্রথম পুত্রসন্তান যিনি কলেজের গণ্ডি পার করলেন। এই ঘটনার আগে রণবীর কপূর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্য দ্বাদশ শ্রেণির বেশি আর পড়াশোনা করেননি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আদিত্যরাজ জানান, স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর কন্যা তুলসি কপূর।
১৯৫৬ সালের ১ জুলাই মুম্বইয়ে জন্ম শম্মি কপূর এবং গীতা বালির পুত্র আদিত্যরাজের। পরিবারের সকলে ফিল্মজগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে ছোট থেকে আদিত্যরাজেরও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
সত্তরের দশকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কাকা রাজ কপূরের সঙ্গে হিন্দি ছবির দুনিয়ায় নেমে পড়েন আদিত্যরাজ। সহ-পরিচালনার মাধ্যমে বলিপাড়ায় হাতেখড়ি করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোম্যান্টিক ঘরানার ‘ববি’ ছবিতে রাজের সঙ্গে সহ-পরিচালনার কাজ করেন আদিত্যরাজ। তার পর রাজের সঙ্গে একাধিক হিন্দি ছবিতে সহ-পরিচালনা করেন শম্মি-পুত্র।
‘সত্যম শিবম সুন্দরম’, ‘গ্রেফতার’, ‘সাজন’, ‘দিল তেরা আশিক’, ‘পাপি গুড়িয়া’ এবং ‘আরজ়ু’র মতো হিন্দি ছবিতে সহ-পরিচালনা করতে দেখা যায় আদিত্যরাজকে।
সহ-পরিচালনার কাজে হাত পাকা করার পর বলিপাড়া থেকে সাময়িক বিরতি নেন আদিত্যরাজ। তার পর বলিউডে তিনি ফিরে আসেন পরিচালক হিসাবে।
২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডোন্ট স্টপ ড্রিমিং’ এবং ‘সম্বর সালসা’ ছবির পরিচালনা করেন আদিত্যরাজ। তার পর আবার বলিপাড়া থেকে বিরতি নিতে দেখা যায় তাঁকে। যদিও এই ছবিগুলির একটিও ব্যবসা করতে পারেনি।
তিন বছরের বিরতির পর অভিনেতা হিসাবে আবার ফিরে আসেন আদিত্যরাজ। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চেস’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
এর আগে ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে শশী কপূরের ‘বডি ডবল’ হিসাবে অভিনয় করেছিলেন আদিত্যরাজ। ‘দিল তেরা আশিক’ ছবিতেও স্বল্প দৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু আদিত্যরাজ অভিনীত প্রথম ছবি হিসাবে ধরা হয় ‘চেস’কেই।
‘মু্ম্বই ১১৮’, ‘দিওয়ানগি নে হদ কর দি’, ‘ইসি লাইফ মে’, ‘ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা ২’, ‘সে ইয়েস টু লভ’ নামের হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেন আদিত্যরাজ। কিন্তু অভিনেতা হিসাবে দর্শকের মনে তেমন জায়গা করতে পারেননি তিনি।
২০১৫ সালে সম্প্রসারিত হিন্দি ধারাবাহিকে শেষ অভিনয় করেন আদিত্যরাজ। আশুতোষ গোয়ারিকরের পরিচালনায় ‘এভারেস্ট’ ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
ফিল্মজগৎ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে ব্যবসায় মন দেন আদিত্যরাজ। তাঁর সংস্থার তরফে ট্রাক এবং গুদামঘর ভাড়া দেওয়া হয়।
মুম্বই এবং দিল্লিতে বিনোদন পার্কও রয়েছে আদিত্যরাজের সংস্থার। ৬১ বছর বয়স থেকে আবার স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। মুম্বই থেকে গোয়ায় চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে কলেজের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে আদিত্যরাজ বলেন, ‘‘আমার কাছে পড়াশোনার করার সব সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি সব হারিয়েছি। সময় যত পার হয়েছে, আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভিতরটা কতটা ফাঁপা হয়ে গিয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পারি আমি।’’
আদিত্যরাজের বক্তব্য, মানুষের জীবনে শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পারেন তিনি। করোনা যখন অতিমারির আকার ধারণ করে তখন পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে বেশি দিন পড়াশোনা থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারেননি বলে দাবি করেন আদিত্যরাজ। ৫৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এর পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের ভাবনাচিন্তা করছেন কপূর পরিবারের পুত্র।