অভিনয় নিয়ে কোনও পুরুষ কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে চাইলে তাঁর উচ্চতা নজরে পড়ার মতো হতে হবে। গায়ের রং ফর্সা হলেই ভাল। সঙ্গে পেটানো চেহারা হলে তো কথাই নেই। বরং তা কেকের উপর চেরি ফলের মতোই। সত্তর থেকে আশির দশকের সময় এই মাপকাঠিগুলি দিয়েই অভিনেতা হওয়ার দক্ষতা বিচার করা হত। এই সময়েই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের কেরিয়ার উত্থানের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন মিঠুন। সাধারণ পরিবার থেকে চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মিঠুন মুম্বইয়ে যান অভিনেতা হওয়ার আশায়। আশির দশকের প্রথম সারির অভিনেতাদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেও বহু কষ্ট করে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করেছিলেন তিনি।
মিঠুন বলেন, ‘‘আমি এমন পরিস্থিতি থেকে উঠে এসে অভিনেতা হয়েছিলাম যে আমায় দেখে অনেকেই ভরসা পেয়েছিলেন। তাঁরা ভাবতেন অতি সাধারণ পরিবারে মানুষ হয়েও অভিনেতা হওয়া যায়। কারণ আমার উচ্চতা চোখে পড়ার মতো নয়। আমি অন্য অভিনেতাদের মতো ফর্সাও ছিলাম না।’’
মিঠুনের দাবি, গায়ের রং পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে বহু ছবি নির্মাতাই কাজ দিতে চাইতেন না। বহু জায়গায় কাজের আশায় গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতেন মিঠুন।
শুধু প্রযোজক এবং পরিচালকেরাই নন, মিঠুনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন বলিপাড়ার অন্যান্য তারকাও। মিঠুন বলেন, ‘‘এমন ঘটনাও ঘটেছে, যখন আমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর সহ-অভিনেতারাই আমার নাম শুনে আর কাজ করতে চাননি। সে ক্ষেত্রে আমার নামই বাদ পড়ে যেত।’’
ইন্ডাস্ট্রিতে বহু জায়গা থেকে সুগঠিত শরীরী গঠন এবং দুধে-আলতা গায়ের রং না হওয়ার কারণেই কাজ না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন মিঠুন।
কিন্তু বলিপাড়ার এক অভিনেত্রীর কারণে কেরিয়ারের চাকা অন্য দিকে ঘুরতে শুরু করে মিঠুনের। অভিনেতা দাবি করেন, তার পর একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও আসতে শুরু করে তাঁর কাছে।
মিঠুন যখন বলিপাড়ায় নিজের কেরিয়ার বোনার স্বপ্ন দেখছেন সেই সময় হিন্দি ফিল্মজগতের প্রথম সারির অভিনেত্রী ছিলেন জ়িনত আমন।
মিঠুনের দাবি, বলিপাড়ার কোনও তারকা বা ছবি নির্মাতা যখন তাঁর পাশে দাঁড়াননি তখন পাশে ছিলেন জ়িনত।
যখন মিঠুন তাঁর দক্ষতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছিলেন না তখন জ়িনতের মতো নামকরা অভিনেত্রী মিঠুনের প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘মিঠুন ভাল কাজ করেন। এমনকি ওঁকে দেখতেও ভাল।’’
জ়িনতের মুখে মিঠুনের প্রশংসা শোনার পর বলিপাড়ার সকলে মিঠুনকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। ছবি নির্মাতারাও ভাবেন, জ়িনতের মতো অভিনেত্রী যখন মিঠুনের গুণগান গেয়েছেন তবে তাঁর মধ্যে নিশ্চয় কিছু রয়েছে।
জ়িনতের মন্তব্যের পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান মিঠুন। হিন্দি ফিল্মপাড়ায় আর কাজের অভাব হয়নি তাঁর। অভিনেতা সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘জ়িনতের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ওঁর মন্তব্য আমাকে যে কী ভাবে উৎসাহ দিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’’
জ়িনতের সঙ্গে ‘অশান্তি’, ‘হম সে হ্যায় জ়মানা’, ‘তকদীর’, ‘ইয়াদো কি কসম’, ‘বাত বন জায়ে’র মতো হিন্দি ছবিতে মিঠুনকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।