ভারতে তৈরি হতে চলেছে বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘যুগে যুগে ভারত’। রাজধানী দিল্লির বুকে তৈরি হতে চলেছে এই বিশালাকার জাতীয় সংগ্রহশালা। সূত্রের খবর, ভারতের পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাসের উল্লেখ এবং নিদর্শন থাকবে ‘যুগে যুগে ভারত’-এ। আর সেই কারণেই নাকি এই নামকরণ।
পুরনো সংসদ ভবনের সাউথ এবং নর্থ ব্লক জুড়ে এই নতুন জাদুঘর নির্মিত হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। বর্তমানে সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদেশ মন্ত্রক এবং প্রতিরক্ষা রয়েছে। অন্য দিকে, নর্থ ব্লকে রয়েছে অর্থ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
দিল্লিতে বুধবার ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ্জিবিশন কাম কনভেনশন সেন্টার (আইইসিসি)’ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনি ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘর তৈরির কথা ঘোষণা করেন।
চলতি বছরের মে মাসেই দিল্লির প্রগতি ময়দানের এক অনুষ্ঠানে ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘরের মডেল ভার্চুয়ালি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা ভারতের সভ্যতা এবং সংস্কৃতি প্রদর্শনের জন্য ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘরে মোট আটটি বিভাগ থাকবে বলে সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
আট বিভাগের মধ্যে থাকবে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান, প্রাচীন থেকে মধ্যযুগ, মধ্যযুগ, মধ্যযুগ থেকে উত্তরণ পর্ব, আধুনিক ভারত, ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ের ইতিহাস।
মোট ১.১৭ লক্ষ বর্গমিটার জুড়ে তৈরি হতে চলা এই সংগ্রহশালা গড়তে কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। তিন তলা এই জাদুঘরে মোট ৯৫০টি কক্ষ থাকবে বলেও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভারতের প্রাচীন শহর পরিকল্পনা পদ্ধতি, বেদ, উপনিষদ, প্রাচীন চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন পুঁথি, তথ্য এবং নিদর্শন রাখা হবে এই জাদুঘরে।
মৌর্য থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, মোগল সাম্রাজ্য এবং আরও বেশ কিছু রাজবংশের উল্লেখ থাকবে সংগ্রহশালায়। থাকবে সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের মডেলও।
ভারতের অনেক প্রাচীন চিত্রকলা, ভাস্কর্য, পাণ্ডুলিপি, সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক নিদর্শন জাতীয় জাদুঘর, ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ ইন্ডিয়া এবং ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য আর্টস-এ রাখা আছে। বর্তমান সংসদ ভবন মেরামতের পরে সেগুলি ওই ভবনে জায়গা পেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
যদি এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ পুরনো সাংসদ ভবনের লোকসভা কক্ষে বসতে পারবেন বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাদুঘর ভার্চুয়ালি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়েছে, তাঁদের মতে এই জাদুঘর তৈরি হলে তা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগ্রহশালার তালিকায় জায়গা করে নেবে।
তৈরি হওয়ার পর ‘যুগে যুগে ভারত’-এর কক্ষ এবং সামনের বাগান কেমন দেখতে হবে, তার বর্ণনাও দিয়েছেন ভার্চুয়ালি সেই সংগ্রহশালা ঘুরে দেখা প্রত্যক্ষদর্শীরা৷
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ‘যুগে যুগে ভারত’ জাদুঘর তৈরি হয়ে যাওয়ার পর জনপথে থাকা সংগ্রহশালা জাতীয় সংগ্রহশালার তকমা হারাবে। ‘যুগে যুগে ভারত’ হবে নতুন জাতীয় সংগ্রহশালা।
বর্তমানের জাতীয় সংগ্রহশালা থেকে সব সংগ্রহও নিয়ে যাওয়া হবে ‘যুগে যুগে ভারত’-এ। পুরনো জাতীয় সংগ্রহশালার ভবন কর্তব্য পথের অংশ হয়ে উঠবে। ১৯৫৫ সালের ১২ মে বর্তমান জাতীয় সংগ্রহশালার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
নতুন জাদুঘর প্রসঙ্গে সংস্কৃতি এবং বিদেশ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি বলেন, ‘‘আশা করছি সময়ের আগেই এই সংগ্রহশালা তৈরির কাজ শেষ হবে।’’